You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.13 | বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নীরব- লােকসভায় জগজীবন রামের ভাষণ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নীরব
লােকসভায় জগজীবন রামের ভাষণ

নয়াদিল্লী, ১২ জুলাই (ইউ এন আই)-আজ লােকসভায় দীর্ঘ সাত ঘণ্টার প্রতিরক্ষা বাজেট বিতর্কের জবাবে একই দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে কোন প্রশ্রুিতি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে শ্রীরাম বাঙলাদেশে মুক্তিফৌজের ক্রমবর্ধমান তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মুক্তিযােদ্ধারা অবশেষে জয়লাভ করবেই এবং পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক জুন্টার সব চাল ব্যর্থ করবে।
বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদান বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি প্রশ্নে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরকারকে বিপথে চালিত করছেন বলে যে কথা উঠেছে তা তিনি সরাসরি অগ্রাহ্য করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সদস্যদের এই মর্মে আশ্বাস দেন, পাকিস্তানের যে-কোন ধরনের কুমতলব মােকাবিলা করার জন্য ভারত সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে সামরিক বাহিনীর সতর্ক প্রহরা জোরদার করা হয়েছে।
শ্রীজগজীবনরাম জানান, পাকিস্তান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পুর্ণোদ্যমে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে চলেছে। তিনি শুধুমাত্র এই আশা প্রকাশ করেন, ঐ দেশগুলি নিশ্চয়ই জানে পাকিস্তান কি উদ্দেশ্যে ঐ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে।
কয়েকজন দক্ষিণপন্থী সদস্য পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ সম্পর্কে যে দাবি তুলেছিলেন তার জবাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরকারের বর্তমান নীতি পুনরুচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, সরকারের নীতি হচ্ছে পারমাণবিক শক্তিকে শান্তির কাজে ব্যবহার করা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনে করেন, সনাতন অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতার বিকল্প পরমাণু অস্ত্র নয়।…
তবে এ প্রসঙ্গে শ্রীরায়ের একটি মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, সদস্যরা পারমাণবিক ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতির কথা এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পরিকল্পনা ও কর্মসূচী ভালই জানেন। তিনি আশা করেন, সদস্যরা তাকে এ ব্যাপারে খুলে বলার জন্য চাপ দেবেন না।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যের আরাে একটা উল্লেখযােগ্য দিক, তিনি বারংবার পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের উস্কানিমূলক আচরণের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন ভারত পাকিস্তানের যে কোন কুমতলব ভেস্তে দিতে পারে। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী বা যুদ্ধবিরতি সীমানা ভঙ্গকারীদের শক্তহাতে মােকাবিলা করার নির্দেশ সৈন্যবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।
কোন কোন সদস্য পাকিস্তানের আধুনিক সাবমেরিণ সম্পর্কে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, পাকিস্তানের যেমন সাবমেরিণ আছে, আমাদের তেমনি সাবমেরিণ ধ্বংসের ব্যবস্থা আছে।
আঞ্চলিক সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি সম্পর্কে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আঞ্চলিক বাহিনীতে ৫০ হাজার সৈন্য থাকলেও আসল শক্তি ৪৩ হাজার। আঞ্চলিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি সম্পর্কে একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল এবং এই কমিশনের সুপারিশ সরকারের বিবেচনাধীন।
রাজ্যের হাত থেকে এন সি সির ক্ষমতা গ্রহণের পরামর্শ শ্রী রাম গ্রহণ করেন নি।
সিংহলে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সিংহল সরকারের অনুরােধেই তাদের সেদেশে। পাঠান হয়েছিল। তবে বিদ্রোহী দমনের কাজে তাদের লাগানাে হয় নি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করে নেন যে, পদাতিক বাহিনীতে কিছু কিছু জাতির লােকের সংখ্যাই বেশি। তবে এর পিছনে সম্ভবত: কোন ঐতিহাসিক কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন। তবে সৈন্যবাহিনীতে লােক নিয়ােগ পদ্ধতি এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে যাতে সব জাতির লােক সমান সুযােগ পান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষণদানকালে সেনাবাহিনীর তিন বিভাগীয় প্রধান জেনারেল মানেকস, এস এম নন্দা এবং পি সি লাল স্পীকার গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৩.৭.১৯৭১