You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.09 | উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ও বাঙলাদেশ স্বীকৃতির দাবিতে সুবিশাল কৃষক মিছিল | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ও বাঙলাদেশ স্বীকৃতির দাবিতে সুবিশাল কৃষক মিছিল
রাজ্য সরকারের কাছে দাবিপত্র পেশ
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৮ জুলাই-কৃষকদের উচ্ছেদ ও তাদের উপর দমননীতি বন্ধ করা, বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি প্রভৃতির দাবিতে কৃষক সভা, আদিবাসী মহাসভা ও ক্ষেত মজুর সমিতির নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল রাজ্য সরকারের কাছে ১২ দফা দাবি সম্বলিত একটি দাবিপত্র পেশ করেছে। সারা ভারত কৃষক সভার পশ্চিমবঙ্গ শাখায় সভাপতি শ্রীবিশ্বনাথ মুখােপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপাল শ্রীশান্তিস্বরূপ ধাওয়ান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীসিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে দাবিপত্র নিয়ে আলােচনা করেন। আলােচনাকালে সরকারী কর্তৃপক্ষ কয়েকটি দাবি কার্যকরী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
সরকার পক্ষে রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীসিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, কৃষি কমিশনার, রেভিন বাের্ডের সদস্য প্রমুখ আলােচনায় অংশ নেয়।
মানুষের ছােট বড় মিছিল শহীদ মিনারে এসে জড় হতে থাকে। বেলা পৌনে চারটায় সেখান থেকে মিছিল মহাকরণ অভিমুখে রওনা হয়।
এসপ্লানেড ইস্টে পুলিস মিছিলের গতি রােধ করলে শ্রীবিশ্বনাথ মুখার্জীর নেতৃত্বে সর্বশ্রী অনন্ত মাজী। ভূজেন ব্যানার্জী, রবীন মুর্মু, সীতিকণ্ঠ ভট্টাচার্য, অশ্বিনী রায়, বৈদ্যনাথ বিশ্বাস, আবদুল জব্বার, দেবু সিং, রামাপদ চৌধুরী, বিশ্বনাথ রায় ও সরল মণ্ডল প্রমুখ মহাকরণে গিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলােচনা করেন। আলােচনা প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে। ততক্ষণ রাস্তার উপরে মিছিলকারীদের পথসভায় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন ও শিল্পীরা গান শােনান।

দাবি-পত্র
সংশােধিত ভূমি সংস্কার আইন কার্যকরী করা, কৃষকের সহযােগিতায় বেনামী জমি উদ্ধার ও বণ্টন, কোর্টের ইনজাংশন যুক্ত জমি উদ্ধারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা, খাজনা প্রথা তুলে দিয়ে কৃষি আয়কর চালু করা, গরীব কৃষকের ঋণ মুক্তির আইন।
কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, পাটের সবনিম্ন দর ৬০ টাকা নির্দিষ্ট করা, ন্যায্য দামে নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিস, পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ও জাতি-উপজাতীয়দের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা, শ্রমিকদের জন্য গ্রাচ্যুইটি আইন ও ক্লোজার বন্ধ করার আইন কার্যকরী করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিস হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ও স্বাধীন বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি ও তাকে সাহায্য করার দাবি স্মারকলিপিতে করা হয়েছে।

যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল
জমির মালিকরা বেআইনী ভাবে ভাগচাষীদের যে সব উচ্ছেদ করছে, সেইসব ক্ষেত্রে মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অবলম্বন করা, সেখানে জমির মালিকরা ভাগচাষীদের ভাগচাষী হিসাবে স্বীকার না করে উচ্ছেদ করছে, সেখানে জে এল আর ও কর্তৃক তদন্ত করে ভাগচাষীদের নাম নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে বলে সরকার পক্ষ থেকে কৃষক প্রতিনিধি দলকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বীরভূমে কিষানীদের উচ্ছেদ ছাড়াও বহুক্ষেত্রে মালিকরা কিষানদের হালবলদ দিচ্ছে না। ফলে ফসলের অর্ধেকের উপরে কৃষানীদের যে প্রথাসিদ্ধ অধিকার ছিল তা-ও অস্বীকৃত হচ্ছে ও কার্যত এইভাবে যেখানে ভাগচাষীকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রতিনিধিদল এই ঘটনার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি করেন যে, কিসানীদের হাল বলদ দিতে অস্বীকার করাও বে-আইনী ভাবে ভাগচাষী উচ্ছেদ করার আওতায় পড়ে, এই হুঁশিয়ার সরকারের তরফ থেকে জমির মালিকদের দিতে হবে। সেই সঙ্গে কিষানীদের কৃষি ঋণ দিতে হবে যাতে তারা ইতিমধ্যে হাল বলদ সংগ্রহ করে ভাগের জমিতে চাষ করতে পারে। সরকারের তরফ থেকে। নীতিগত ভাবে এই দাবি স্বীকৃত হয়েছে।
প্রতিনিধিদল গ্রুপ লােনের বরাদ্দ এবং টেস্টা রিলিফ ও খয়রাতি সাহায্যের পরিমাণ বাড়াবার দাবি করেন এবং বাংলাদেশ থেকে যে সব জেলায় শরণার্থী এসেছে সেই সব জেলায় ক্ষেতমজুরদের মজুরী হ্রাস ও বেকারী বৃদ্ধি রােধ করার ব্যবস্থা সাপেক্ষে টেস্ট রিলিফ দেবার দাবি জানান। এছাড়া একাধিক জায়গায় অতিবৃষ্টির ফলে ধানের চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেইসব জায়গায় কষকদের অবিলম্বে বীজ ধানের জ দেবার দাবি করা হয়। সরকার এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরকারী ন্যস্ত জমি জনপ্রিয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা এবং যেসব বাড়তি জমি এখনাে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের হাতে ন্যস্ত হয় নি, অথচ গরীব কৃষকরা দখল করে চাষ করেছেন, সেই সব জমি ভূমিরাজস্ব দপ্তরের অফিসারদের দ্বারা তদন্ত করে সরকারী খাস করা সাপেক্ষে কৃষকদের উচ্ছেদ না করার ঘােষণা করার বিষয়টিও সরকার বিবেচনা করার আভাষ দিয়েছেন।
প্রতিনিধিদল মানিক চক, সােনামুখী ইসলামপুর প্রভৃতি জায়গার ঘটনার উদাহরণ দিয়ে দেখান যে, পুলিস ও স্থানীয় প্রশাসন পূর্ববর্তী সরকারের ঘােষিত নীতি লঙ্ঘন করেই জমির মালিকদের পক্ষে ও কৃষকদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে এবং অসংখ্য মিথ্যা মামলায় কৃষকদের জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক কোয়ালিশন সরকার এই সব মামলা সম্পর্কে দ্রুত তদন্ত করে ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার ও অন্যান্য মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার যে ঘােষণা করেছিলেন, প্রতিনিধিদল তা আশু কার্যকরী করার দাবি জানান।
সরকার পক্ষ থেকে উপরােক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে নির্দিষ্ট ঘটনা লিখিতভাবে চওড়া হয়েছে ও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, নির্দিষ্ট ঘটনা পেলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে।

সূত্র: কালান্তর, ৯.৭.১৯৭১