You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.16 | গণমুক্তি সংগ্রামকে সার্বিক সাহায্যদানের জন্যই বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে- অধ্যাপক হীরেন মুখখাপাধ্যায় | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

গণমুক্তি সংগ্রামকে সার্বিক সাহায্যদানের জন্যই বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে
“বাঙলাদেশ দিবস উপলক্ষ্যে কলকাতার সুবৃহৎ জনসভায় অধ্যাপক হীরেন মুখখাপাধ্যায়
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ১৫ মে-বাঙলাদেশের গণমুক্তি সংগ্ৰমকে সর্বোতাে প্রকারে সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আজ এক সুবৃহৎ জন-সমাবেশে কমিউনিস্ট নেতা অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখখাপাধ্যায় বলেছেন, “বাঙলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পূর্ণ স্বীকৃতি না দিলে ঐ ধরনের সার্বিক সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয়।”
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ আজ দেশব্যাপী যে সারা ভারত বাংলাদেশ দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারই পটভূমিতে কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা জেলা পরিষদের ডাকে সুবােধ মল্লিক স্কোয়ারে ঐ জন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা জনাব আবদুর রেজ্জাক খান।

বাঙলাদেশে সহস্র মাই লাই
সমাবেশে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি)-র বিশিষ্ট নেতা কমরেড মন্টু চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শাসকশ্রেণীর প্রতিহিংসাপরায়ণতায় কিভাবে বাঙলাদেশের গণমুক্তি সংগ্রামে রূপান্তরিত হল তার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করে জানান, পাকিস্তানকে দ্বি-খণ্ডিত করার জন্য বাংলার জনগণ লড়াইয়ে নামেন নি। তিনি বলেন, “ইয়াহিয়া ফৌজ বাঙলাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত করেছে তার নজির হিটলার বা মুসসালিনীর বর্বরতাতেও নেই। এমনকি ভিয়েতনামেও বােধহয় এই প্রকার পৈশাচিকতা অনুষ্ঠিত হয় নি। আমরা মাই লাই-এর কথা জানি, কিন্তু বাঙলাদেশে হাজারাে মাই লাই ঘটে গেছে। আমরা বিস্মিত, মাই লাই-এর ঘটনায় যে পরিমাণ ধিক্কার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধ্বনিত হয়েছিল, বাঙলাদেশের ঘটনাবলীতে পৃথিবীর জনমনে সেই প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তবে, সহস্র নৃশংসতার মধ্যেও আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ চালিয়ে যাবই—এ বিষয়ে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ (প্রবল করতালি)।”
বাংলাদেশকে সাহায্যদানের সর্ব প্রকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ভারত সরকারের কাছে বাঙলাদেশ ও জনাব তাজউদ্দীনের প্রধানমন্ত্রীত্বে গঠিত সরকারকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অস্ত্রশস্ত্র সহ সকল প্রকার সহায়তা দেবার দাবি জানিয়ে প্রস্তাবে ইয়াহিয়া খান চক্রকে পরিকল্পিত গণহত্যা”-র দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। বিশ্বের সকল জনগণের কাছে ঐ গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের আবেদন জানিয়ে প্রস্তাব পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র ও সরকারকে অনুরােধ জানিয়েছে, বাঙলাদেশ ও তার সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য, রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে দাবি জানিয়েছে পাক সামরিক বাহিনীর নৃশংস আক্রমণ রােধে সক্রিয় ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা ভারত সরকার এবং পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্র, জনগণের কাছে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন জানিয়েছে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে সম্ভাব্য সর্বপ্রকার সাহায্যাদানের জন্য, ছাত্র যুবকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবকরূপে আত্মনিয়ােগের জন্য।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “যারা এই মহান মুক্তিসংগ্রামকে সাম্প্রদায়িক বা প্রাদেশিকাতার দোষে দুষ্ট বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এই সভা তাঁদের তীব্র নিন্দা করছে। ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরােধিতার নামে ইন্দিরা ইয়াহিয়া এক হ্যায়’ বা ‘দুই বাঙলার চেক পােস্ট উড়িয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি আওয়াজ বাঙলাদেশের সংগ্রামের পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক এবং এ বিষয়ে সভা হুঁশিয়ারি জানিয়ে জনসাধারণকে এই ধরনের প্রচারের প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানাচ্ছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৬.৫.১৯৭১