বাঙলাদেশ স্বীকৃতির প্রশ্নে ভারতের মনােভাবের পরিবর্তন করতে হবে ইয়াহিয়ার ভাষণ প্রসঙ্গে লােকসভায় শরণ সিং-এর ঘােষণা
বেসরকারী প্রস্তাবের উপর বিতর্ক অসমাপ্ত
নয়াদিল্লী, ২ জুলাই (ইউ এন আই)-আজ লােকসভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ঘােষণা করেন যে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁ পূর্ববঙ্গে সামরিক শাসন চালিয়ে যাবার যে ভয় দেখিয়েছেন, সে বিষয়ে বিবেচনা করে বাঙলাদেশের ব্যাপারে ভারত সরকার তার মনােভাবের পরিবর্তন করতে পারে।
আজ বাঙলাদেশ স্বীকৃতির দাবিতে এক বেসরকারী প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলাকালে শ্রী সিং উক্ত ঘােষণা করেন।
শ্রীশরণ সিং ইয়াহিয়া খাঁর বেতার ভাষণ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন যে, ঐ ভাষণে গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করা হয়েছে এবং বাঙলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙক্ষাকে ধূলায় মিলিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন যে, সরকার বাঙলাদেশ স্বীকৃতির বিরােধী নয় তবে এখনাে সময় হয়নি। তিনি লােকসভায় সদস্যদের এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করার জন্য আবেদন করেন।
এই বেসরকারী প্রস্তাবের উপর আলােচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
শ্রীশরণ সিং আরও বলেন যে, ইয়াহিয়া খা ভাষণে বাঙলাদেশে একটি তাঁবেদার সরকার গঠনের কথা বলেছে। এর অর্থ হল বাঙলাদেশের মানুষের সামনে “দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র সংগ্রামের দিন এসেছে। পাকিস্তানী শাসকদের সামরিক শাসনের হাত থেকে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতেই হবে।
বাঙলাদেশের অস্তিত্বের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শর্তাদি পূরণ করা হল কি-না তা নিয়ে বিতর্ক করা উচিত হবে না।
তিনি আরও বলেন যে, বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি না দেবার অর্থ হল সেখানে সামরিক কর্তৃপক্ষকে মেনে নেওয়া।
শ্রী ভি, কে, কৃষ্ণমেনন বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বলেন যে, সমস্ত বিষয়টা যেমন ছিল তেমনি রাখা হলে বিষয়টি ভুল করা হবে।
বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের মত একটি ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে একটুও সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এটা না করা হলে বাঙলাদেশকে আরেকটি ভিয়েতনামে পরিণত করা হবে।
শ্রীমেনন আরও বলেন যে, ভারতে বাঙলাদেশের দশ ভাগের এক ভাগকে ঠেলে দিয়ে পরােক্ষভাবে পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণই করেছে।
আজকের বেসরকারী প্রস্তাবটিকে সমর্থন করে ইন্দিরা কংগ্রেসের শ্রীপ্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, শ্রীশশীভূষণ ও শ্রীআর এম শর্মা, জনসংঘের শ্রীফুলচাঁদ, ডি এম কে-র শ্রীমুরলি মরন, নির্দলীয় শ্রীলিঝনলাল সাকসেনা এবং তেলেঙ্গানা প্রজা সমিতির শ্রীসত্যনারায়ণ রাও ভাষণ দেন।
ডাঃ কৈলাশ তাঁর ভাষণে এই মর্মে এক প্রস্তাব দেন যে, বাঙলাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ের জন্য আমাদের প্রতিনিধি বিদেশে না পাঠিয়ে, অন্য দেশের লােকজনদের বাঙলাদেশের দুর্দশা দেখার জন্য ডেকে পাঠান উচিত।
সূত্র: কালান্তর, ৩.৭.১৯৭১