বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠনের অভিনন্দন
(সংবাদদাতা)
কলকাতা, ১০ ডিসেম্বর—বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের পথে গণ-প্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারকে ভারতের স্বীকৃতি দানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আনন্দ প্রকাশ করে ভারত সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানানাে হয়েছে।
ভারতীয় গণ-সংস্কৃতি সংঘের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক শ্রীঅন্নদাশংকর ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে বলেছেন, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদান শুধু পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক চক্রের বিরুদ্ধেই নয়-চীনের সমর্থনপুষ্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও এক চরম আঘাত। এই নব স্বীকৃত নতুন রাষ্ট্র অচিরেই বিশ্বের দরবারে স্থায়ী ও দৃঢ় আসন লাভ করবে বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি তাঁদের এক প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের জন্য ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মুক্তি সংগ্রামে অকৃত্রিম সাহায্যদানের জন্য ঐ প্রস্তাব সােভিয়েত সরকারকেও অভিনন্দন জানানাে হয়। সম্প্রতি কলকাতা ডক-লেবার বোের্ড এমপ্লয়িজ এসাসিয়েশনের।
সিদ্ধান্তে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের জন্য ভারত সরকারকে স্বাগত জানানাে হয়। ঐ সিদ্ধান্তে বর্তমান জরুরী অবস্থার প্রয়েজনে সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দানের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
কালনা কলেজ ছাত্র-সংসদ সম্প্রতি ভারত সরকার কর্তৃক বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদান উপলক্ষ্যে এক সভার আয়ােজন করে। এই সভা থেকে ভারত সরকারকে তার সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন জানানাে হয় এবং ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তির দীর্ঘজীবন কামনা করা হয়।
গত ৭ ডিসেম্বর হাসনাবাদ থানার মহিষপুকুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ক্ষেতমজুর কনভেনশনে এক প্রস্তাবে বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে স্বাগত জানানাে হয়। মুক্তি-সংগ্রামের প্রতি সােভিয়েত ইউনিয়নের বলিষ্ঠ সমর্থনকে অভিনন্দন জানিয়েও আর একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এছাড়া কনভেনশনে ক্ষেতমজুরদের দাবির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের অভিপ্রায় ঘােষণা করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতির ঘােষণার পর পানিহাটিতে প্রায় ২ শত শ্রমিক মিছিল করে অঞ্চল পরিক্রমা করেন। হিন্দওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজ মজদুর ইউনিয়ন আয়ােজিত এই মিছিল থেকে ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তির সমর্থনে স্লোগান দেওয়া হয়।
এ আই টি ইউ সি’র অন্তর্ভুক্ত পানিহাটির ২২ টি ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের এক সভা থেকেও ভারত সরকারের সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানানাে হয়। বিভিন্ন কারখানার ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা মার্কিন দালাল ইয়াহিয়া চক্রের ভারত আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানান। তারা ভারতের অসামরিক প্রতিরক্ষা দৃঢ়তর করার জন্য বিস্তারিত আলােচনা করেন এবং বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। উল্লেখযােগ্য যে, এই সভায় বিভিন্ন কারখানার প্রতিরক্ষার কাজে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের একটি প্রস্তাব। নেওয়া হয়।
গতকাল শিবপুরে এক বিরাট শ্রমিক সভা থেকে গণ-প্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানানাে হয়। সভায় বিভিন্ন বক্তারা জাতীয় বিপদের দিনে সােভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকাকে উচ্ছসিত প্রশংসা জানান। তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের দাম কমানাে, উৎপাদন বৃদ্ধি, শ্রমিককৃষকের ওপর মালিক ও জোতদারের জুলুম বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
শ্রমিক সভাটির আয়ােজন করেন শিবপুর চটকল মজদুর ইউনিয়ন।
ভারত সরকার কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর প: ব: আয়কর কর্মচারী সমিতির (৪র্থ শ্রেণী) জরুরী এক সভা থেকে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১১.১২.১৯৭১