You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে আঘাত হেনেছে
দার্জিলিং জেলা সম্মেলনে প্রকাশ্য অধিবেশনে ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের ভাষণ

দার্জিলিং, ৩ আগস্ট (নিজস্ব)-২৮, ২৯ ও ৩০ আগস্ট দার্জিলিং জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম বিধাননগরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দার্জিলিং জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সম্মেলনের শেষদিনে প্রকাশ্য অধিবেশনে প্রধান বক্তারূপে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা শ্রীইন্দ্রজিৎ গুপ্ত এম-পি।
শ্রীগুপ্ত তাঁর সুদীর্ঘ বিশ্লেষণমুখী ভাষণে বাঙলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং এই পরিস্থিতির সুযােগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীগােষ্ঠী কি ভাবে ভারত-পাক যুদ্ধ বাধাতে চান সে কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক-চক্র মার্কিন ও চীনের সাহায্যপুষ্ট হয়ে যখন ভারত আক্রমণের স্পর্ধা প্রকাশ করেছিল, সেই মুহূর্তে ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে ইয়াহিয়া-চক্র এখন ভাবিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার নিশ্চয়ই পাকিস্তান আক্রমণ করবে না, কিন্তু পাক আক্রমণ শক্ত হাতে মােকাবিলা করা ভারতের কর্তব্য।
শ্রীগুপ্ত বাঙলাদেশ মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীর কোনাে শক্তিই বাঙলাদেশের মুক্তিযোেদ্ধাদের অভীষ্ট লক্ষ্য সাধনে বাধা দিতে পারবে না। বাঙলাদেশ স্বাধীন হবেই। অতঃপর তিনি ভারতের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ ব্যাখ্যা করেন। শ্রীগুপ্ত বলেন, ইন্দিরা কংগ্রেস যে ধনতান্ত্রিক পথে চলছেন তা সংকট মুক্তির পথ নয়। তাই দেশের জনগণকে ইন্দিরা সরকারকে অধনতান্ত্রিক পথ অনুসরণে বাধ্য করতে হবে। এজন্য ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই প্রসঙ্গে শ্রীগুপ্ত সিপি এম ও নক্সালপন্থীদের বিভেদমূলক কাজে নিন্দা করেন।
ডাঃ রঞ্জিত চ্যাটার্জি সভাপতিত্ব করেন। সভায় বাঙলাদেশের কৃষকনেতা কামরুল হােসেন এবং সর্বশ্রী ভদ্র বাহাদুর হামাল, হরসুন্দর মজুমদার ও ধীরেন সরকার ভাষণ দেন।
২৮ আগস্ট শ্রীদ্ৰবাহাদুর হামাল রক্তপতাকা উত্তোলন করেন এবং শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন ডাঃ কালীচরণ সরকার। প্রায় একশাে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদের সদস্য শ্রীরমেন মিত্র তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। এরপর প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। সর্বশ্রী মন্টু মজুমদার, রঞ্জিত চ্যাটার্জি ও কামিনী রায়কে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সম্মেলন পরিচালনা করেন।
শােক প্রস্তাব গৃহীত হবার পর জেলার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপাের্ট উপস্থাপিত করেন শ্রীপীযুষকান্তি গুহ। রিপাের্টটি সংযােজিত ও সংশােধিত আকারে গৃহীত হয়।
সম্মেলনে বহুবিধ প্রস্তাব ও আগামী দিনে জেলাভিত্তিক আন্দোলনের কর্মসূচী গৃহীত হয়। ভারতসােভিয়েত মৈত্রী চুক্তির সমর্থনে, বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতির দাবিতে, সন্ত্রাস রাজনীতির অবসানকল্পে, ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম ধারায় নেপালী ভাষার স্বীকৃতি ও জেলার পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসনের দাবিতে, জেলার শিল্পোন্নয়ন ও বেকার যুবকদের কাজের দাবিতে, মাস্টার প্ল্যান চালু ও জেলার পথঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার সাধনের দাবিতে প্রস্তাব ীত হয়।
সম্মেলনে শ্রী ভদ্রবাহাদুর হামালকে সম্পাদক ও শ্রী হরিসাধন ঘােষকে সহঃ সম্পদাক করে ২১ জনের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়।

সূত্র: কালান্তর, ১.৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!