বাঙলাদেশ সরকারকে এখনই স্বীকৃতি দিন
পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেছে। বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য এবং বিশ্বের জনমতকে বিভ্রান্ত কার জন্য এই যুদ্ধ হচ্ছে বৃহত্তম ষড়যন্ত্র। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী বনাম বাঙলাদেশের মুক্তি সগ্রাম—এই প্রশ্নটি ঘুরিয়ে ভারত বনাম পাকিস্তান প্রশ্নে রূপান্তরিত করাই এই যুদ্ধের আসল লক্ষ্য। বার বার মার্কিন ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে পাক-ভারত সমস্যা বলে অভিহিত করেছে। ই, অপর বন্ধু চীনের নেতারা অনুরূপ যুক্তির অবতারণা করে বলেছেন যে “বাঙলাদেশ আন্দোলন ভারতের প্রেরণাতেই সৃষ্টি হয়েছে।” অতএব বাঙলাদেশে মুক্তি সংগ্রামের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী আক্রমণ চলেছে। একদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং অপর দিক থেকে চীন যুগপৎ ইয়াহিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে সেই ষড়যন্ত্রকে বৃহত্তর চক্রান্তে রূপান্তরিত করেছে। দশদিনের মধ্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করা হবে-ইয়াহিয়ার এই ঘােষণা সেই চক্রান্তেরই ফলশ্রুতি।
ভারত আক্রান্ত হবার ফলে বাঙলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাে। ভারতের সেনাবাহিনীর মুক্তিযোেদ্ধাদের সমস্ত প্রকার ভৌগলিক ব্যবধান তিরােহিত হল। যারা যুদ্ধবাজ তারাই মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, ভারতেরও দুষমণ। অতএব ভারতের শত্রু ও মুক্তি সংগ্রামীদের শত্রু এক ও অভিন্ন। এর পেছনে দাঁড়িয়ে মদৎ দিচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। আর বাঙলাদেশের বুকে সেই শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত মুক্তিবাহিনী ও বাঙলাদেশের স্বাধীন সরকার। ভারত সরকার, বাঙলাদেশের স্বাধীন সরকার যৌথভাবে আক্রমণকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে যৌথভাবে অগ্রসর হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
শক্তি সমাবেশের এই মৌলিক পরিবর্তন বাঙলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতির দাবি করছে। এই মুহূর্তে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে উভয় সরকারের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হওয়া প্রয়ােজন।
এই স্বীকৃতিই হবে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে জবাব, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের প্রত্যুত্তর। অতএব ভারত সরকার এখনই বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দান করুক—এটাই জনগণের ইচ্ছা, পরিস্থিতিরও দাবি।
সূত্র: কালান্তর, ৫.১২.১৯৭১