You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারত-পাকিস্তানের সমস্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই—কোসিগিন
বিপরীত পরিস্থিতি উভয় দেশের জনস্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর

কলকাতা, ১১ জুন (এ পি এন)—গত বুধবার মস্কোর ফ্রঞ্জেনস্কি এলাকার নির্বাচন মণ্ডলীর সভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন সােভিয়েতের শান্তি ও মানব কল্যাণের নীতি প্রচার করে পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারত-পাক সম্পর্কের উপর দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। পূর্বের মতই সােভিয়েত ইউনিয়ন চায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত সমস্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। এর বিপরীত পরিস্থিতি উভয় দেশের জনস্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর।
কোসিগিন বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তার মহান প্রতিবেশী ভারতের সু-সম্পর্ক বেড়েই চলেছে।
পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনাবলীতে ভারত-পাক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সােভিয়েত ইউনিয়ন উদ্বিগ্ন। এই সমস্যা প্রসঙ্গে কোসিগিন বলেন যে, মানবতাবাদের নীতিগুলিকে মান্য করেন এমন সকলেরই উচিত হবে পূর্ব-বাঙলার শরণার্থীরা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে তেমন নিরাপত্তা ও পূর্ব পাকিস্তানে তাদের শান্তিপূর্ণ জীবন ও কাজকর্মের সম্ভাবনা সৃষ্টির উপযােগী অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা যাতে হয় তা দেখা। তিনি বলেন যে, আমাদের মতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে এরূপ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সােভিয়েত ইউনিয়ন এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের জাতীয় স্বার্থে ও ভারত উপমহাদেশের শান্তির স্বার্থের সঙ্গে এই পথই হবে সঙ্গতিপূর্ণ। যদি বিপরীত কিছু হয় তা হবে সেইসব আভ্যন্তরিন ও বহিশক্তিগুলির হাতে খেলা, যারা তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষেই ক্ষতিকর কাজকর্ম করছে।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
বর্তমান আন্তর্জাতিক সমস্যাবলীর উল্লেখ করে কোসিগিন বলেন যে, সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি ও সসাভিয়েত রাষ্ট্র শান্তি নিরীক্ষণ ও শক্তিশালী করাকে অন্যতম প্রধান কর্তব্য বলে অনিবার্যভাবে মনে করে। তিনি বলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতি এমনিতেই ঘটে যাবে এরকম নিষ্ক্রিয় নীতি আমাদের নয়।
ইওরােপীয় পরিস্থিতিতে সােভিয়েত বৈদেশিক নীতির ইতিবাচক ফলাফল প্রসঙ্গে আলেকসেই কোসিগিন ফেডেরাল জার্মানির প্রেসিডেন্ট ব্রান্ডটের সাম্প্রতিক মনােভাব আমরা সমর্থন করি এই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন যে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও পােল্যাণ্ডের চুক্তি সমদায়িত্বে শক্তির পরিবেশ সৃষ্টির এক নিদর্শন। সােভিয়েত-মার্কিন সম্পর্কে তিনি বলেন তা সন্তোষজনক বলা যায় না। ২৪ তম পার্টি কংগ্রেসে এসম্পর্কে যে বক্তব্য রাখা হয় তার উল্লেখ্য করে তিনি বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব ও বাঞ্ছনীয় বলে সােভিয়েত ইউনিয়ন মনে করে। তা শক্তির ও উভয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সেই সঙ্গে সােভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী মহলের আগ্রাসী নীতির মধ্যে পার্থক্যরেখা টানতে পারে না। একটা সঙ্গত প্রশ্ন ওঠেই যে, মার্কিন সরকারের অভিপ্রায় কি? তা কি সমস্ত ফলাফলের ঝুঁকি নিয়েও আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে চলা অথবা জরুরী সমস্যাগুলির পারস্পরিক গ্রহণযােগ্য সমাধা খুঁজে বার করা। সন্দেহ নেই যে, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এক বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিলে বিনাশর্তে দ্বিতীয় পথটিই বেছে নেওয়া উচিত। আমরা মনে করি যে, মার্কিন জনগণও তা সমর্থন করবে।
উপসংহারে কোসিগিন বলেন যে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে আশাবাদী হবার যথেষ্ট কারণ। আছে। রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও সমগ্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিবার আজ আগের থেকেও শক্তিশালী। সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সােভিয়েত সরকার সমাজতন্ত্র, শান্তি ও জাতিসমূহের নিরাপত্তার স্বার্থে এক সক্রিয় বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই চলবে।

সূত্র: কালান্তর, ১২.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!