You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.17 | “পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে” প্রাভদা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

“পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে”
প্রাভদা

‘লক্ষ লক্ষ মানুষের মর্মস্তদ কাহিনী’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে ‘প্রাভদা’ বলেছে, মানবিক বিবেচনাবােধ থেকে অগ্রসর হয়ে সােভিয়েত সরকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত দুর্দশাগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে খাদ্য সাহায্য দিয়েছে এবং দেবে।’ প্রবন্ধটির লেখক বি, ওরেখােত লিখেছেন যে সােভিয়েত জাহাজ ‘রাজদোলনােয়ে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য চাল নিয়ে ভুলাদিভােস্তক থেকে সম্প্রতি কলকাতায় পৌচেছে।
প্রবন্ধ লেখক এই মর্মে পি, আই, বির খবর থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে শরণার্থীদের কষ্ট লাঘবের জন্য ভারত সরকারের অনেকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। চলতি আর্থিক বছরে শরণার্থীদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শতাধিক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কিন্তু শরণার্থীদের আসার হার যদি দিনে ৩০,০০০ থেকেই যায় তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যেই প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দরকার হবে।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এক বাস্তব নাটক প্রত্যক্ষ করছেন। এদের দুরবস্থা পৃথিবীর প্রগতিশীল মানুষের উদ্বেগ না ঘটিয়ে পারে না। বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকাগুলি যথাযথই জোর দিয়ে বলেছে যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দলে দলে চলে আসার কারণ হল সেদেশের দুঃসহ অবস্থা। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের যে-কার্যকলাপের ফলে লক্ষ লক্ষ নাগরিক তাঁদের সম্পত্তি ও জমিজমা ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, তা সকলেরই ক্ষোভ ও ঘৃণা উদ্রেক করে। এই সব কাজের কোনাে যৌক্তিক কারণ নেই।
উপসংহারে লেখক বলেছেন, “পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে জনসাধারণ আশা করেন যে শরণার্থীদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য এবং স্বদেশে তাদের শান্তিপূর্ণ জীবন ও জীবিকার নিশ্চিতি দেবার জন্য তারা অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার, সকল বন্দীকে মুক্ত করার এবং তাদের নিরাপত্তার নিশ্চিতি দেবার অনুরােধ জানান।
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী সম্পর্কে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় লেনিনগ্রাদের হােসিয়ার কারখানা “ক্রাসনােয়ে জনাময়া”-য়া বক্তারা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবি করেন এবং এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন যাতে শরণার্থীরা দেশে ফিরে আসতে পারেন। স্বদেশে তাদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ নিশ্চিতি দানের দাবিও করা হয়।
আরমেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানের রাসায়নিক শিল্প-সমাহারেও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণকরীরা পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ব্যক্তিদের উপর নির্যাতনের অবসান দাবি করেন। সভায় একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় ; তাতে বলা হয় যে পাকিস্তানে পরিস্থিতির স্বাভাবিকীকরণ সমস্ত শান্তিকামী মানুষের আকাংক্ষার সঙ্গে সংগতি পূর্ণ হবে।
সােভিয়েত ইউনিয়নস্থিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সমিতির বিবৃতি
গত ৬ অক্টোবর মস্কে, লেনিনগ্রাদ, মিনস্ক, রিগা ও সােভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য শহরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় পূর্ব পাকিস্তানের অসামরিক জনসাধারণ, রাজনৈতিক ও জননেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের ঢালাও দমননীতির প্রতিবাদ জানানাে হয়।
সােভিয়েত ইউনিয়নস্থিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সমিতি এক বিবৃতি প্রচার করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের সপক্ষে : তাদের আইনসংগত অধিকার প্রয়ােগের সমক্ষে যারা এগিয়ে এসেছিলেন সেই মুজিবর রহমান ও অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাদের ভাগ্য সম্পর্কে বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সর্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘােষণার মানবিক নীতিসমূহের দ্বারা চালিত হয়ে, সমিতি পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই ঘােষণা লংঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে মুজিবর রহমান ও পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাদের দণ্ডদান বন্ধ করা হােক, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছে, অলংঘনীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থকে যথাযযাগ্য মর্যাদা দিয়ে রাজনৈতিক মীমাংসা অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হােক, পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের যথাশীঘ্র সম্ভব নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযােগী অবস্থা সৃষ্টি করা হােক। [এ পি এন]।

সূত্র: কালান্তর, ১৭.১০.১৯৭১