You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.15 | বাঙলাদেশ প্রশ্ন মীমাংসা না করে যুদ্ধবিরতির কথা উঠতে পারে না | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশ প্রশ্ন মীমাংসা না করে যুদ্ধবিরতির কথা উঠতে পারে না
ভারত-পাক যুদ্ধ সম্পর্কে নদগণির দৃপ্ত ঘােষণা

মস্কো, ১৪ ডিসেম্বর (ইউ-এন)-সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি নিকোলাই পদগর্ণি পুনরায় এই মর্মে তাঁর সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ঘােষণা করেন যে, বাঙলাদেশের রাজনীতিক মীমাংসার প্রশ্নকে আলাদা করে ভারতপাক সংঘর্ষের যুদ্ধ বিরতির প্রশ্নটি দেখা উচিত নয়। গত রাত্রিতে আফগানিস্থানের রাজা জহির শাহ্ এর সম্মানার্থে ক্রেমলিনে আয়ােজিত এক নৈশ ভােজসভায় ভাষণদান প্রসঙ্গে সােভিয়েত রাষ্ট্রপতি ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সােভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানের পুনর্ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপতি পদগর্ণির বক্তব্য উদ্ধৃত করে তাস বলেছে, “এশিয়ার ঐ উপ-মহাদেশের পরিস্থিতি সম্প্রতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করায় জনগণ খুবই শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মৌল অধিকারসমূহ এবং পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত তাদের ইচ্ছাকে বর্বরােচিত ও নিষ্ঠুর উপায়ে দমন করায় দেশের ঐ অংশে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন, বাইরের কোন শক্তির কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকেই জনগণের আইনসঙ্গত অধিকারের প্রতি প্রকৃত মর্যাদা দান করে সমস্যা-সমূহের শান্তিপূর্ণ রাজনীতিক মীমাংসা এবং রক্তক্ষয় বন্ধের পক্ষে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন উক্ত অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী এবং ন্যায্য শান্তি প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য জোর দিয়ে আসছে।
রাষ্ট্রপতি পদগর্ণি বলেছেন আমাদের এ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেছে, হিন্দুস্তান যে সমস্ত কারণে উপদ্বীপের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে তা দূর করার মূল পথ হিসাবে পূর্ব-পাকিস্তানের সমস্যার রাজনীতিক মীমাংসার প্রশ্ন থেকে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নটি বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়।
তিনি একথা প্রকাশ করেন, তার ও রাজা জহির শাহ-এর মধ্যে আলােচনায় দেখা গেছে বর্তমানে যে অঞ্চলসমূহ সংঘর্ষ ঘটছে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও আফগানিস্থানের প্রত্যক্ষভাবে সেই সমস্ত অঞ্চলের নিকটে অবস্থিত বলে সংঘর্ষের কারণসমূহ দূরীকরণে সর্বাপেক্ষা কার্যকর রাজনীতিক ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের পক্ষে আমরা গভীরভাবে আগ্রহী।
তিনি বলেন, জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহের সমাধান এবং এশীয় মহাদেশে উদ্ভুত সমস্যাসমূহের রাজনীতিক মীমাংসার প্রচেষ্টার পক্ষে আফগানিস্থানে যে বিচক্ষণ ও যুক্তিসঙ্গত মনােভাব দেখিয়েছে সেভ আমরা আনন্দিত।
যুগােশ্লাভিয়া থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে সােভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রীম সােভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর ও সরকারে অতিথি হিসাবে বে-সরকারী মৈত্রী সফরের উদ্দেশ্যে আফগান রাজা জহির শাহ গতকাল এখানে এসেছেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৫.১২.১৯৭১