ভারতের প্রতি মার্কিন সরকারের উপদেশ
পাকিস্তানকে বার বার সামরিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করা, আর ভারতকে সংযম দেখাবার জন্য অযাচিতভাবে অনুরােধ করা-মার্কিন সরকারের এই ধুর্ত বুদ্ধির তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। আবার তারাই ধৈর্য ধরার জন্য ভারতকে উপদেশ দিচ্ছে। মার্কিন সরকার যে নিরপেক্ষ, পাক-ভারত সংঘর্ষে কোন পক্ষই অবলম্বন করছেন না এবং ভারত উপমহাদেশে তারা যুদ্ধ চান না-এটাই প্রমাণ করতে চান। কিন্তু এটা যে সর্বৈব মিথ্যা তা গােপন করার মত আর কোন নতুন কৌশল মার্কিন সরকারের পক্ষে আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। সাম্রাজ্যবাদের অপকৌশল এবং যুদ্ধবাজ চরিত্র বিশ্ববাসীর কাছে উন্মােচিত হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সংযমের কথা বলেছেন। ৯০ লক্ষ শরণার্থীর ভারতে আগমন সত্ত্বেও ভারত সরকার পাকিস্তানে বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন নি এমন কি পাক বােমা ভারত সীমানা অতিক্রম করে ভারতীয়দের হত্যা করেছে—তা সত্ত্বেও ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন নি। এ ধরণের শরণাথী-সমস্যা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র কর্তৃক হামেশা হামলা সৃষ্টির নজির ইওরােপ এবং আমেরিকার কোন দেশে আছে বা অতীতে হয়েছে কিনা মিঃ নিক্সন বলতে পারেন কি? ভারতের সংযমের দৃষ্টান্ত ভারতের পররাষ্ট্রনীতি থেকেই উদ্ভূত। পররাজ্য আক্রমণ করা বা পররাজ্যের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা ভারত সরকারের নীতি নয়।
কিন্তু যারা ভারত সরকারকে সংযম ধারণের জন্য উপদেশ দিচ্ছেন তাদের নীতিই হচ্ছে কোন প্রকার সংযম অবলম্বন না করে পররাজ্য আক্রমণ করা, নিজেদের তাঁবেদার রাষ্ট্রকে দিয়ে অন্য রাজ্যের উপর হামলা চালান। সাম্রাজ্যবাদ ও সংযম—এই দুটি পরস্পর-বিরােধী। সংযমের কথা বলে মার্কিন সরকার বিশ্ববাসীকে প্রতারণা করছেন। অস্ত্রসাহায্য দান এবং সংযম—এই দুটোও পরস্পর বিরােধী। ভারতের জন্য মার্কিন সামাজ্যবাদের উপদেশ-সংযম। আর পাকিস্তানের জন্য তাদের উপদেশ ভারত আক্রমণ। সাম্রাজ্যবাদরা যখন সংযমের কথা বলে তখন তারা তাদের আগ্রাসী চরিত্রকেই গােপন করতে চায়। তা প্রমাণ হয়েছে ভিয়েতনাম এবং উত্তর ভিয়েতনামকে আক্রমণের মাধ্যমেই।
সূত্র: কালান্তর, ২২.১০.১৯৭১