পূর্ববঙ্গের সন্ত্রাসের রাজত্ব ও দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া
কারগিল মিশনও এজন্য ইয়াহিয়ার দমন-পীড়নকেই দায়ী করেছে
ওয়াশিংটন, ১৩ জুলাই-এক গােপন রিপাের্টে মার্কিন প্রভাবিত বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদল বলেছে, ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীর অত্যাচারে পূর্ববঙ্গের অধিবাসীরা এক সন্ত্রাসের রাজত্বে বসবাস করছে এবং তাদের সামনে নামছে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া।
ব্যাঙ্কের ডিরেক্টারগণ এবং বিকল্প সদস্যদের কাছে এই রিপাের্ট বিতরণ এবং নির্ভরযােগ্য মহলগুলির থেকে এ-পি’র হাতেও পৌছেছে।
প্রতিনিধিদলের রিপাের্টে বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের পরিবহণ প্রণালীর প্রায় বিনাশ, অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের সমস্যাবলীর মােকাবিলা করতে স্থানীয় প্রশাসনের অক্ষমতা এবং সর্বোপরি প্রধান প্রতিবন্ধকরূপে সর্বাত্মক আতঙ্কের অবস্থার উল্লেখ রয়েছে।
বৃটেনের পিটার কারগিলের নেতৃত্বে সেই প্রতিনিধি দলটি পূর্ববঙ্গে সফর করেছিল জুন মাসের প্রথমার্ধে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত ১১ টি দেশকে নিয়ে গঠিত তথাকথিত পাকিস্তান সহায়ক ক্লাবের সদস্যরা রিপাের্টটি এখন পরীক্ষা করছে। নতুন জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা রচনা সাপেক্ষে উক্ত ক্লাব পাকিস্তানকে নতুন সাহায্য দেবার সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে।
প্রতিনিধিদল অবশ্য একটি অতিরিক্ত ফাঁক জুড়ে বলেছে, সফরকালে পরিস্থিতির সমস্ত প্রধান প্রধান উপাদানগুলি যেমন প্রতিভাত হচ্ছিল তাতে শীঘ্র স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এমন আশা করা যেমন অসম্ভব ছিল, তেমনি এমন পূর্বাভাসও অনুমেয় যে, যদি তার যে কোন একটা প্রধান ক্ষেত্রে উন্নতি আসে তাহলে তার প্রভাব অন্যত্রও পড়বে। যেমন এটা হতে পারে যে, রেলপথ আরও ভাল চলবে, আর সেই সঙ্গে যদি উপকূল অঞ্চলের জাহাজাদি আরও বাড়ে এবং দেশী নৌকাগুলি আবার দেখা দেয় তাহলে পুনরুজ্জীবনের পথে যেসব বাস্তব বাধা আছে সেগুলি যথেষ্ট কমানাে যেতে পারে।
যদি আতঙ্ক, অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তার উপাদানগুলিকে দূর করা যায় এবং প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে বাস্তব প্রতিবন্ধকগুলি এখানকার চেয়ে কমতে পারে। কিন্তু সফরকালে এমন কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি যাতে মনে করা চলে যে এ জাতীয় উন্নতি হতে পারবে।
রিপাের্টে সংঘর্ষের প্রধান প্রধান ফলশ্রুতিকে এভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রথমটাই হচ্ছে নগর, শহর ও গ্রামে সম্পত্তি ধ্বংসের কাণ্ড। কতকগুলি অঞ্চল যখন তাদের এক্তিয়ারে ছিল তখন বিদ্রোহীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুনির্বাচিত ধরনে এ জাতীয় ধ্বংসকার্য করলেও প্রধান প্রধান নগর, শহর এবং বড় রাস্তাগুলির চারপাশে সামরিক বাহিনীর তৎপরতাতেই এই ধ্বংসকার্য প্রধানত ঘটেছে। দ্বিতীয় বিদ্রোহীরা গােড়ার দিকেই পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থাকে দারুণভাবে বিধ্বস্ত করেছে। তৃতীয়ত, জাহাজ, নৌকা, গাড়ি ইত্যাদির ধ্বংস। চতুর্থত, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার সাধারণ পরিবেশ, কারণ প্রদেশে এখনও শান্তি ফিরে আসেনি।
সূত্র: কালান্তর, ১৪.৭.১৯৭১