মার্কিনী প্রচারের বজ্জাতি
মার্কিনী পত্রিকা ‘নিউজউইক’ সম্প্রতি পাক-ভারত উপমহাদেশের উত্তেজনা প্রসঙ্গে আলােচনা করতে যেয়ে নানা আজগুবি তথ্য হাজির করে বাঙলাদেশের বীর মুক্তি সেনানীদের মধ্যে ভাঙন আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কোন সমর বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকের কাছে মুক্তিযােদ্ধাদের একজন নেতা নাকি ঘােষণা করেছেন যে মুক্তি-সংগ্রামের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কোনাে কমিউনিস্ট নেই। তাই তাঁরা যখন জয়লাভ করবেন তখন যে ধরণের সরকারই স্থাপিত হােক না কেন তা কমিউনিস্ট ঘেঁষা হওয়ার ভয় নেই।
এ দেশের মানুষ জানেন তাদের জন্ম-সহােদর বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ সমস্ত সংকীর্ণ দলাদলি, সাম্প্রদায়িকতার ও অনৈক্যের ঊর্ধ্বে তাঁদের সংঘবদ্ধ সংগ্রামী মশালটিকে প্রজ্বলিত রেখেছেন। এ কথাও তাদের কাছে দিবালােকের মত স্পষ্ট যে দেশের এই অনন্য মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্যদের মত হাজার হাজার কমিউনিস্ট কমও হানাদার শত্রুর ট্যাংক ও গােলার সামনে নির্দিধায় বুক পেতে দিচ্ছেন। স্বাধীনতার। সরকার কি রকম হবে, তা পূর্ববাঙলার লড়াকু তরুণদের মতাে তাদেরও কাছে বর্তমান আলােচনার বিষয় নয়। ঘােষণা করা হােক বা না হােক, বাঙলাদেশের মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ের ভিত্তিতে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গড়ে উঠছে ও উঠবে। হাতে হাতে কাধে কাঁধ দিয়েই নরপশু ইয়াহিয়ার স্বপ্ন চূর্ণ করে দেয়াই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। বাঙলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন নীতি যখন সারা বিশ্বের মানুষের নিন্দা ও ঘৃণা কুড়িয়েছে, তখন সাজ পালটে বহুরূপী চেহারায় নিক্সনের যুদ্ধবাজ চেলা-চামুণ্ডারা আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করবে, এতাে খুব স্বাভাবিক। তবে, নিউজউইক’ই হােক বা যে কোন মার্কিনী কাগজই হােক, তাদের সাংবাদিক শৃগালদের হুক্কা হুয়া বাঙলাদেশের সংহতি ঐক্যমুখর সগ্রামের ভাঙন আনতে পারবে না।
সূত্র: কালান্তর, ১৭.১১.১৯৭১