You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.27 | বাঙলাদেশে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণের তীব্র বিরােধিতায় জনাব হােসেন আলী | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণের তীব্র বিরােধিতায় জনাব হােসেন আলী
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৬ জুলাই-বাঙলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব এম, হােসেন আলী আজ জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খার উদ্যোগে বাঙলাদেশে ৫০ জন জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরােধিতা করেছেন।
মিশনে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব হােসেন আলী ক্ষুব্ধস্বরে বলেন, “ঐ পর্যবেক্ষকরা আগামী বৃহস্পতিবার বাঙলাদেশে পৌছবেন। এই সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নিয়েছেন প্রিন্স আগা খা। আমাদের সরকার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বাঙলাদেশের জনগণের কোন মতামত নেওয়া হয় নি। তাছাড়া পর্যবেক্ষকরা কি পর্যবেক্ষণ করবেন? তারা কি কবর খুঁড়ে মৃতদেহ গুণবেন? তারা কি পাক সৈন্যবাহিনী যেসব তরুণীদের ধরে নিয়ে গিয়ে বলাঙ্কার করেছে, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করবেন?”
“বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করার জন্য পর্যবেক্ষক পাঠানাে হচ্ছে বাঙলাদেশে। সেটা কি করে সম্ভব? শরণার্থীরা বাঙলাদেশে ফিরবেন কেবল তখনই যখন বাঙলাদেশের জনগণ দেশের সামগ্রিক ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হবেন।”
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, “পর্যবেক্ষকরা কি অনন্তকাল ধরে বাঙলাদেশে থাকবেন গণহত্যা দেখার জন্য” তবে যদি পর্যবেক্ষক পাঠাননার উদ্দেশ্য হয় বাঙলাদেশ থেকে পাক সৈন্য প্রত্যাহার সুনিশ্চিত করা “তাহলে আমরা তাকে সমর্থন করব।” অথবা যদি পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দর বা বিমানঘাঁটিতে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে পাক সৈন্য প্রেরণ রােধ করা হয় তাহলেও আমরা তাকে সমর্থন করব।”
কিন্তু মনে হয়, পাক সৈন্যদল যেহেতু এখন বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে বিশেষভাবে সন্ত্রস্ত সে কারণে বাঙলাদেশে পর্যবেক্ষক নিয়ােগের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি রােধ করাই প্রিন্স সদরুদ্দীনের লক্ষ্য।”
তিনি প্রিন্স সদরুদ্দীন সম্পর্কে ব্যঙ্গ করে বলেন, “উনি তাে রাজপুত্র আর আমরা কানাকড়িহীন। তাই স্বভাবতঃই আমাদের জন্য ওদের কোন সহানুভূতি নেই। তাছাড়া ওর তাে প্রচুর সম্পত্তি আছে পশ্চিম পাকিস্তানে। উনি ভারতে আগত শরণার্থীদের দেখতে আসতে চাননি এখানে। ওকে আসতে বাধ্য করা হয়। সে সময় আমার সঙ্গে তিনি দেখা করাও প্রয়ােজন মনে করেননি।…ওঁর এই কুপ্রচেষ্টাকে সর্বাধিক ঘৃণার সঙ্গে ধিক্কার জানাতে হবে।”

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৭.১৯৭১