কিসিঙ্গারের সঙ্গে আলােচনার পর ইয়াহিয়ার নতুন ফন্দী
জাতিসঙ্ঘ ভারত-বিরােধী অভিযােগ উত্থাপনের মতলব
মুজিবনগর, ১৪ জুলাই (আই পি এ)-পাকিস্তান জাতিসঙ্ েভারতের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশে সশস্ত্র অনুপ্রবেশের অভিযোেগ তুলবার আয়ােজন করছে।
পাকিস্তান সরকার ঐ অভিযােগ তুলে “আর যাতে অনুপ্রবেশ না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসঙ্ঘের কাছে আবেদন জানাবে ভারত ও বাঙলাদেশের মধ্যবর্তী সীমান্তে জাতিসঙ্রে পর্যবেক্ষকদল নিয়ােগ করার জন্য। বাঙলাদেশ সরকারের কাছে এই মর্মে সংবাদ এসেছে।
আমাদের সীমান্ত সফররত স্টাফ রিপাের্টার জানাচ্ছেন, বাঙলাদেশের ব্যাপারে জঙ্গী ইয়াহিয়া চক্রের সমব্যাথী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ উপদেষ্টা হেনরি কিসিঙ্গারের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙলাদেশে জঙ্গী বর্বরতার দরুন তার কোনঠাসা অবস্থা থেকে বার হয়ে আসবার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জিগীর তুলবার একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন। শােনা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে তিনি পুরানাে মঞ্চ জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করবেন।
বাঙলাদেশে ইয়াহিয়া চক্রের বর্বরতা যখন সারা পৃথিবীতে ধিকৃত তখন সেই পাকিস্তানী শাসক চক্রকেই মার্কিন সরকার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এই মরণ যজ্ঞে উৎসাহ দিতে। এবং তার জন্য নিক্সন প্রশাসনও ধিকৃত হচ্ছে। তাই ইয়াহিয়া কিসিঙ্গার শলা পরামর্শ যে দুনিয়ার কাছে তাদের অপরাধী বিবেক ঢাকবার জন্য ভারত-বিরােধী প্রচারের ফন্দী আটবার ব্যাপারে কেন্দ্রীভূত হবে। এতে বাংলাদেশ সরকারী মহল বিস্মিত হন নি।
আই পি এ আরাে জানাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে যে সংবাদ পৌছেছে তা থেকে জানা গেল, জাতিসঙ্ েএই ভারত-বিরােধী অভিযানে পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কয়েকটি আরব ও অন্যান্য দেশের সমর্থন প্রত্যাশা করছে।
বাঙলাদেশের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গত পক্ষকালের মধ্যে মুক্তি ফৌজের গেরিলা সৈনিকদের আক্রমণে পাক-ফৌজ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলেই জাতিসংঘের দ্বারস্থ হবার কথা চিন্তা করতে শুরু করেছে।
গত পনেরাে দিনে বাঙলাদেশের মুক্তিফৌজ প্রায় সব রণাঙ্গনেই একসঙ্গে কম্যান্ডাে আক্রমণ তীব্রতর করেছে; এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৫৭৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫টি মিলিটারি ট্রাকও ৬টি সামরিক জীপসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্র দখল করে নিয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৫.৭.১৯৭১