You dont have javascript enabled! Please enable it!

অচলাবস্থার অবসান না হলে পশ্চিম এশিয়ায় পূর্বাপেক্ষা হিংস্র ও ভয়াবহ যুদ্ধের সম্ভাবনা
উ-থান্টের হুঁসিয়ারি

জাতিসংঘ, ১৯ সেপ্টেম্বর (এ পি)—জাতিসংঘের সাধারণ সম্পদাক উ-থান্ট আজ এই মর্মে হুঁসিয়ার করে দিয়েছেন যে, পশ্চিম এশিয়ার অচলাবস্থা চলতে থাকলে, সেখানে নতুন করে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর হিংস্র ও ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যাবার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, তাছাড়া বর্তমানে যারা যুদ্ধে লিপ্ত আছে তাদের মধ্যে এবং পশ্চিম এশিয়ার সীমার মধ্যেই যুদ্ধকে সীমিত না রাখতে পারার সর্বদাই বিপদ রয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সেক্রেটারি জেনারেল উ-থান্ট যে বাৎসরিক রিপাের্ট পেশ করবেন তার মুখবন্ধে উপরােক্ত ঘােষণা করেছেন। রিপাের্টটি পূর্বেই প্রকাশ করা হয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ার শান্তি প্রচেষ্টার অগ্রগতি না হওয়ায় এবং নতুন করে যে সামরিক শক্তির সমাবেশ হচ্ছে। তাকে ভিত্তি করেই উ-থান্ট উপরােক্ত মর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
উ-থান্ট বলেছেন, উক্ত ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে রেহাই পেতে হলে শান্তির প্রচেষ্টাকে আরও গভীর করে একটা মীমাংসায় পৌছানাে একান্ত আবশ্যক।
তিনি বলেন, এরূপ মীমাংসার এখনও সুযােগ রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
উ-থান্ট ১৯৯ পৃষ্ঠাব্যাপী তার বাৎসরিক রিপাের্টে চীনের প্রতিনিধিত্ব, ভিয়েতনাম সমস্যা, জাতিসংঘের আর্থিক সমস্যা, জাতিসংঘ সংগঠন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করেছেন।
তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ চীনের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে জাতিসংঘ তার দরজা বন্ধ না করে রাখলে বা বৃথা তর্ক-বিতর্ক করে কালহরণ না করলে জাতিসংঘের সংগঠন আরও দক্ষ হয়ে উঠত—এতে তাঁর কোনাে সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ও পশ্চিম জার্মানী, উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম, উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া জাতিসংঘে এদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি উক্ত দেশ সমূহের আভ্যন্তরীণ বিভেদ বা বিরােধের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, পক্ষান্তরে ঐ সমস্ত দেশের সমস্যার সমাধানের পথ সহজতর হবে এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই জাতিসংঘে তাদের সদস্য পদের বিষয়টি বিবেচিত হওয়া উচিত।
উ-থান্ট প্যারিস শান্তি আলােচনায় আরও নমনীয়তা এবং আরও ধৈর্য অবলম্বনের জন্য আবেদন জানান।
তিনি, বিশ্ব সংগঠনের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আর্থিক সমস্যাটি বেছে নিয়ে বলেন যে, জাতিসংঘের আর্থিক অবস্থা এমন চরমে পৌছেছে যে ১৯৭১ সালের শেষের মাসগুলিতে কর্মচারীদের বেতন দেওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠবে।
সংক্ষেপে, পরিস্থিতি এই যে দশ বৎসর পরে ঘাটতি ব্যয়ের দরুণ জাতিসংঘ একটি দেউলিয়া সংগঠনে পরিণত হবে।
পরিশেষে উ-থান্ট তার পদত্যাগের ঘােষিত অভিপ্রায় উল্লেখ করে বলেন, সদস্য সরকার সমূহের একান্ত ইচ্ছা সত্ত্বেও তিনি তৃতীয়বারের জন্য সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণে অক্ষম।

সূত্র: কালান্তর, ২০.৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!