পাক হামলার আশঙ্কা থাকা পর্যন্ত ভারত সীমান্তে সৈন্য থাকবে- প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘােষণা
সীমান্ত রাজ্যগুলিতে অসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে
হায়দারাবাদ, ২১ অক্টোবর (ইউ এন আই)-পাকিস্তানের তরফ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সামগ্রিক যুদ্ধের বিপদ ও হুমকি যতদিন পর্যন্ত থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমরা সীমান্ত থেকে আমাদের সৈন্য সরাবাে না।”
দেশরক্ষামন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম আজ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই কথা ঘােষণা করেন।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উৎপাদন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীবিদ্যাচরণ শুক্লাও আজ নয়াদিল্লীতে জানিয়েছেন যে, ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং যে কোনও সময়ে পাকিস্তানী আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেবার জন্য ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তুত থাকা থেকে অভিযানে নেমে পড়তে তাদের দু’ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না” বলে তিনি জানান।
এই ঘােষণার পাশাপাশি, বিভিন্ন সীমান্তবর্তী রাজ্যে অসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করারও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
আজ হায়দারাবাদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত পার্লামেন্ট সদস্যদের উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বক্তৃতাকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীজগজীবনরাম সীমান্তে পাক-বিপদ দূর না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সৈন্য মােতায়েন রাখবার দ্ব্যর্থহীন ঘােষণা করে বলেন, “সব দিক বিবেচনা করে বলা যায় ভারত-পাক সীমান্তের পরিস্থিতি গুরুতর।” তিনি বলেন, “ভারত কী করছে সে জন্য নয়, (বাঙলাদেশে) মুক্তিবাহিনী তাদের মুক্তিসংগ্রামে কী করে, সেই জন্যই” পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে সামগ্রিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।
শ্রীজগজীবন রাম বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্যানটনমেন্ট থেকে সৈন্যদের নিয়ে গিয়ে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে মােতায়েন করার আদেশ দিয়েছেন।
“এ অবস্থায় আমরা কী করতে পারি? আমাদের সৈন্যদের পশ্চিম সীমান্তে মােতায়েন হতে আদেশ দিতে হয়েছে।”
তিনি আরাে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানের তরফ থেকে যুদ্ধের বিপদ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অবলম্বিত ব্যবস্থাবলী আমরা শিথিল করতে পারি না।”
শ্রীরাম কমিটিকে এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, পাকিস্তানের যে কোনও সম্ভাব্য সামরিক হঠকারিতার দৃঢ় মােকাবিলা করার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীভি সি শুক্লা কমিটিকে জানান যে, ভারতের অস্ত্র কারখানাগুলি সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক প্রচলিত অস্ত্র-যেমন সেলফ লােডিং অটোমেটিক রাইফেল, লাইট মেশিনগান, কারবাইন, হাল্কা মর্টার, প্যাক-হাডটজার ও সংশ্লিষ্ট গােলাবারুদ উৎপাদন করেছে।
শ্ৰীশুক্লা জানান, রাডার এবং ইলেকট্রনিক সংযোেগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ভারত বড় রকমের সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এখনাে এ সবের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে শুরু করা হয়নি। কিন্তু আমাদের উৎপন্ন যন্ত্রাদি পৃথিবীর সেরা যন্ত্রের সঙ্গে তুলনীয়।
যুদ্ধের জন্য প্রয়ােজনীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ভারত এখনাে গবেষণা ও ঐসব যন্ত্রপাতি উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশজ প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশের জন্য স্বনির্ভরতার প্রয়াস অব্যাহতভাবে চলেছে।”
ভারত সম্পূর্ণ প্রস্তুত
নয়াদিল্লীতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মূল্যায়ন প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীশুক্লা সম্ভাব্য পাকিস্তানী আক্রমণের মােকাবিলা করার পূর্ণ প্রস্তুতির কথা ঘােষণা করে জানান যে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের পর থেকে ভারত প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উৎপাদনে বিশেষত প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র, ইলেকট্রনিক ও সংযােগ ব্যবস্থার জন্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রাদি উৎপাদনে “সামগ্রিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এগিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সশস্ত্রবাহিনী বিজয়ন্ত ট্যাঙ্ক, যুদ্ধ জাহাজ, মিগ২১ ও মিগ-২১ এম বিমান প্রভৃতি চালানায় সুশিক্ষিত। বিজয়ন্ত ট্যাঙ্ক পৃথিবীর যে কোনও সেরা ট্যাঙ্কের সঙ্গে তুলনীয় এবং মিগ-২১ বিমান যে কোনও আধুনিক যুদ্ধ বিমানের সমতুল্য। “আমাদের আঘাত হানবার শক্তি শত্রুর শক্তির তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। আমাদের নৌবাহিনীও বেশ ভাল এবং তারা আমাদের উপকূল রক্ষায় সক্ষম।” তিনি বলেন, পাকিস্তানী শাসকরা তাদের জনসাধারণের দৃষ্টি আভ্যন্তরীণ অসুবিধাসমূহ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেবার জন্য সীমান্তে সেনাবাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং বাঙলাদেশের পরিস্থিতি তাদের এই “উন্মত্ত হঠকারিতার” পথ নিতে বাধ্য করেছে।”
সূত্র: কালান্তর, ২২.১০.১৯৭১