পাকিস্তান আক্রমণ করলে ভারত সমুচিত জবাব দেবে
তবে নিজে আক্রমণ করবে না।
ইয়াহিয়া খান উ-থান্টের প্রস্তাবের সুযােগ নিয়েছে
নয়াদিল্লী, ২৫ অক্টোবর (ইউ এন আই)-জাতিসংঘের সচিব প্রধান উ-থান্ট পাক-ভারত উপমহাদেশে শান্তি রক্ষার জন্য দু’দেশের সীমানার দু’পাশেই জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মােতায়েন করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার সুযােগ ইয়াহিয়া খান গ্রহণ করেছেন।
শ্রী উ-থান্টের পত্রের জবাবে ইয়াহিয়া খান এই মর্মে আশা প্রকাশ করেছেন যে, উ-থান্ট অবিলম্বে পাক-ভারত উপ-মহাদেশ সফর করবেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট ঘােষণা
নয়াদিল্লী, ২৫ অক্টোবর (ইউ এন আই)-ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম আজ ঘােষণা করেছেন। যে, ভারত এমন কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে গণ্য হবে—তবে পূর্ণ শক্তিতে যে-কোনাে আক্রমণ প্রতিহত করবে। তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
শ্রী রাম পুনর্বার হুঁশিয়ার করে দেন, আমাদের সীমান্তে যদি কোন আক্রমণ আসে তবে আমরা তা নিছক প্রতিহত করেই সন্তুষ্ট থাকব না। আমরা শত্রুকে ঠেলে তাদের জমিতে নিয়ে যাব এবং আমাদের মাটিতে নয়—যুদ্ধ যাতে শত্রু ভূমিতেই হয় সেদিকেই আমরা নজর দেব।
তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ভারতের বিরুদ্ধে পূর্ণ যুদ্ধের হুমকী এবং সীমান্ত বরাবর সৈন্য সমবেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সীমান্তে সৈন্য নিয়ে আসা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। “যতকাল পাকিস্তানী হুমকী বজায় থাকবে ততদিন আমি আমার সৈন্যবাহিনীকে সীমান্তে মােতায়েন রাখছি।”
শ্রীজগজীবন রাম আরাে বলেন, সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য ভারতের উপর আন্তর্জাতিক চাপ এলে ভারত | সেই রাষ্ট্রগুলির কাছে ১ কোটি বাঙলাদেশ শরণার্থীর প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব গ্রহণের দাবি জানাবে। আর এর প্রমাণস্বরূপ ভারতে শরণার্থী আগমন বন্ধ হওয়া উচিত এবং ভারতবর্ষ থেকে শরণার্থীরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়া উচিত তারপরই ভারত পশ্চিম সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করে দেখবে।
তিনি আরাে জানান, সীমান্ত থেকে পাকিস্তানী ক্যান্টনমেন্টগুলি এত কাছে যে পাকিস্তান সৈন্য প্রত করে নেবার পরও স্বল্পকালীন নােটিশেই আবার তাদের সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু বিপরীত দিকে ভারতীয় ক্যান্টনমেন্টগুলি এক হাজার দেড় হাজার মাইল দূরে তাই তাদের ফিরিয়ে আনতে বেশ অনেক সময় লাগে। তাই যতকাল পাকিস্তানের যুদ্ধের হুমকী বজায় থাকবে ততকাল ভারত সীমান্ত থেকে সৈন্য সরাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবে না।
তিনি আরও বলেন, ভারত চিরকাল পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গেই শান্তি ও মৈত্রীর নীতি অনুসরণ করে এসেছে। প্রায় সমস্ত প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে এ দেশের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও ভারত সর্বদাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের আবেদনের সঙ্গে অপর পক্ষের প্রত্যুত্তর সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ভারত-চীন সম্পর্ক প্রসঙ্গে শ্রীরাম বলেন, সাম্প্রতিক কালে সম্পর্ক লঘু করার জন্য কিছু আলাপ আলােচনা হয়েছে। ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে এটি বেশ স্বাগত বিষয় হবে। বৈরী প্রতিবেশী থাকার চেয়ে বন্ধু প্রতিবেশী থাকা অনেক ভাল। চীনের সঙ্গে যদি আমাদের সুসম্পর্ক থাকে তবে তা উভয়ের পক্ষেই মঙ্গলজনক। | প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ একটি পাশবিক ব্যাপার এবং তা পরিহার করে চলা উচিত। কিন্তু সেই যুদ্ধ যখন দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে তখন তা ঠেকাবার জন্য সবরকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশের বৈজ্ঞানিক প্রতিভাধরদের সহযােগিতায় ভারত আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তােলার চেষ্টা করছে।
বরকতুল্লা খানের বক্তৃতা
গত সন্ধ্যায় বারমারে এক বিরাট জনসভায় ভাষণদানকালে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বরকতুল্লা খান ঘােষণা করেন, আমাদের ভূভাগের এক ইঞ্চি জমিতেও যদি পাকিস্তান অনুপ্রবেশের সাহস দেখায় তবে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী তার কঠোর জবাব দেবে।
পাকিস্তানের যুদ্ধ হুমকীর পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেছেন এবং সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে সমর্থন ও সহযােগিতা দানের জন্য জনগণের কাছে আবেদন করছেন।
সূত্র: কালান্তর, ২৬.১০.১৯৭১