কাশ্মীর এলাকায় দুটি পাক বিমানের অনুপ্রবেশ
ত্রিপুরায় পাল্টা গােলাবর্ষণ
(বিশেষ প্রতিনিধি)
নয়াদিল্লী, ১ নভেম্বর-ভারত সীমান্তে পাক সৈন্যবাহিনী ক্রমাগত উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলেছে। আজ কাশ্মীর অঞ্চলে দুটি পাক বিমান অনুপ্রবেশ করে। বিমান দুটি অত্যন্ত উঁচু আকাশে থাকায় বাধাদানের আগেই পালিয়ে যায়।
এদিকে ত্রিপুরা সীমান্তে পাকবাহিনীর গােলার জবাবে ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা গােলাবর্ষণ ওধারের কামানগুলিকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার সঙ্গে যুক্ত রাজনীতি বিষয়ক কমিটির জরুরী দুটি সভা হয়।
ত্রিপুরার সীমান্ত শহর কমলাপুরে গত শতদিন যাবৎ পাক বাহিনীর যে কামানগুলি গােলা বর্ষণ করছিল আজ ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জনৈক মুখপাত্র এই সংবাদ দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে পাক বাহিনী আর কমলাপুরে গােলা ছুঁড়তে সাহস করবে না।
মুখপাত্রটি বলেন, ওই শহরে সাতজন বেসামরিক ব্যক্তি মারা গিয়েছিল এবং সম্পত্তি বিপুল ক্ষতিসাধন হয়। তাই গােলা বন্ধ করবার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার হয়ে পড়েছিল।
ভারতীয় বাহিনী কমলাপুর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করেছিল কিনা তা জানাতে অস্বীকার করলেও উক্ত মুখপাত্র অবশ্য বলেন যে এই ব্যাপারে বিমান বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয় নি। শ্রীনগরে পাক বিমান অনুপ্রবেশের সংবাদটি সঠিক বলে তিনি জানান। মুখপাত্রটি আরাে জানান যে এ পর্যন্ত পাকিস্তান ১৫৯ বার অস্ত্র বিরতি চুক্তিভঙ্গ করেছে। পশ্চিম সীমান্তে পরিখা খনন, বিবর ঘাঁটি স্থাপন, পর্যবেক্ষক মঞ্চ স্থাপন করে পাকিস্তান ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ২১ বার অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরাে জানান পাক ষড়যন্ত্রকারীরা শিলঙের নিকটে একটি শরণার্থী শিবিরে অগ্নি সংযােগ করে এর ফলে ১২ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়।
সেনাবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত অঞ্চলের ভার গ্রহণ
সীমান্ত অঞ্চলে পাক বাহিনী ক্রমাগত প্ররােচনা সৃষ্টি করায় তার মােকাবিলার জন্য সীমান্ত অঞ্চলের সকল প্রকার রক্ষী বাহিনীর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে বলে নয়া দিল্লীর এক সংবাদে জানা গিয়েছে। সেনাবাহিনী পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তেরই ভার গ্রহণ করবে।
জম্মু থেকে সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইউ এন আই জানাচ্ছে যে, সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখবার জন্য স্থল বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ আজ সকালে এখানে এসে উপস্থিত হন।
তার সঙ্গে ছিলেন, বৈদেশিক মন্ত্রকের নীতি নির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী ভি পি ধর।
তাঁরা রণবিরাসঙপরা অঞ্চলের অগ্রবর্তী এলাকা, হিরানগর ও ছাম্ব—জোরিয়ান সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
গতকাল রাত্রে পাকবাহিনী ভারতীয় গ্রাম সিকারপুর, বেতাই ও গেদের উপর গােলা বর্ষণ করে।
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী পাল্টাগুলি চালালে পাকবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয় বলে জানা গেছে। ভারতীয় এলাকা থেকে পরিদৃশ্যমান কিছু পাক বিবর ঘাঁটি গােলার আঘাতে ভীষণভাবে ক্ষত্রিস্থ হয়েছে।
প্রবনাপুর-বেহেরামপুর সীমান্ত বরাবর পাক বাহিনী পরিখা খনন করেছে এবং দাংনা ও বামনাদ ঘাটিতে দুরপাল্লার কামান সজ্জিত করেছে।
জানা গেল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এলাকার ১৬ কিলােমিটার ভিতর অবস্থানকারী বেসামরিক ব্যক্তিদের উৎখাত করছে। কুষ্টিয়া জেলায় অন্তত ১৫টি গ্রামে অগ্নি সংযােগ করে ও প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
সূত্র: কালান্তর, ২.১১.১৯৭১