You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালুরঘাটে আবার পাক গােলাবর্ষণ : ৬ জন নিহত
(নিজস্ব সংবাদদাতা)

মালদহ, ২৮ নভেম্বর-আজ আবার পাকবাহিনী বালুরঘাটে গােলা বর্ষণ করেছে। দুই দফায় দুই ঘণ্টার গােলায় তিনজন শিশুসহ ছয়জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪ জন। এদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, দোকানপাট আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু লােক অন্যত্র চলে গেছেন। পাক গােলায় বিশ্বাস পাড়ায় দুইজন এবং বাজারের মধ্যে চারজন নিহত হন। এই নিয়ে বালুরঘাটে পাক ফৌজ চারদিন গােলাবর্ষণ করলাে।
সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, বালুরঘাট থেকে অনেক প্রাইভেট ডাক্তার অন্যত্র চলে গেলেও ডাঃ বীরেশ্বর দাস, ডাঃ অমরেশ রায় কোন অবস্থাতেই স্থান ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদদাতা আরও জানাচ্ছেন, সাধারণভাবে জনগণের মনােবল অটুট রয়েছে।
ইউ এন আই জানাচ্ছে, আজ সকালে এখানকার বিমানবন্দরে প্রধানতঃ বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এক সাংবাদিক প্রতিনিধিদল নামমাত্র পাক গােলন্দাজ বাহিনীর তিনটি গােলার হাওয়া ফাটার শব্দ উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রতিধ্বনিত হয়। শহরের সাধারণ হাসপাতালে সাংবাদিকরা আরও গােলা বিস্ফোরণের মধ্যে পৌছলে হতাহতদের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেন।
সকাল সাড়ে দশটা থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচটি এ্যাম্বুলেন্স ভ্যান চারজন নিহত ও ১৪ জন আহতকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শহরে আটটি গােলা এসে পড়ে। এদের প্রত্যেকটি ২৫ পাউণ্ডের শূন্যোবদারী গােলা। এগুলাে কেবল মানুষ হতাহত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, কোন বিশেষ লক্ষ্যস্থল ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নয়।
কর্মব্যস্ত তরি-তরকারির বাজার বৃহস্পতিবারে পাক গােলাবর্ষণের পর দুদিন বন্ধ ছিল। আজ বাজার আবার খুললে একটি গােলা বাজারের মধ্যে এসে পড়ে।… সাংবাদিকরা একটা দোকানের টিনের ছাদ ভেদ করে কি ভাবে গােলাটি একটা ইটের দেয়াল উড়িয়ে দিয়েছে তা স্বচক্ষে দেখান। কাছেই প্রচুর রক্ত এবং মানুষের দেহের মাংসের টুকরাে পড়েছিল।
ইউ এন আর, আরও জানাচ্ছে গত তিন দিনের গােলাবর্ষণে আহত ৭৫ জনকে সাধারণ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। অনেকে চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
২৫ নভেম্বর মধ্যরাত্রি থেকে পর দিন সকাল পর্যন্ত বালুরঘাটে ৩০টি পাক গােলা এসে পড়ে ১৩ জনকে নিহত ও ৪০ জনকে আহত করে। গতকালের গােলাবর্ষণে ৩ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়।
জেলা শাসক কে, এল গুপ্ত জানান, বৃহস্পতিবারের গােলাবর্ষণে পাঁচজন সদস্য বিশেষ এক পরিবারের দু’বছরের একটি শিশু ছাড়া আর সবাই মারা গেছেন। তিনি জানান, পাক বাহিনী বালুরঘাট শহর থেকে ছয়সাত কিলােমিটার দূরের জেস্ত্রি রাম, রাসুলবেল ও কাশীপুর থেকে গােলা বর্ষণ করছে এবং গােলা এসে পড়ছে বালুরঘাট শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ত্রিমােহনী, তেওয়ার ও বালুপাড়া গ্রামগুলােতে। শহরের উপকণ্ঠে আত্রেয়ী নদীর ওপারে অবস্থিত এক শরণার্থী শিবিরেও গােলা পড়েছে এবং তারপর ঐ শিবির থেকে শরণার্থীদের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শুক্রবার থেকে অনেকেই শহর ত্যাগ করেছেন। কিন্তু এটা ব্যাপক আকার পায়নি। শ্রীগুপ্ত জানান, জনগণের মনােবল খুবই দৃঢ়।…
হিলি এখন প্রায় পুরােপুরি ভূতুরে সহর-সমগ্র ৩০ হাজার জনসংখ্যা পাক-গােলার রেঞ্জের বাইরে নিরাপদস্থানে চলে গেছেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.১১.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!