You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.03 | আগরতলায় পাক-বিমানের জনবহুল কেন্দ্রে গােলাবর্ষণ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বালুরঘাটে গােলাবর্ষণ চলছে
মালদহ, থেকে রাতে সংবাদদতা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে
আটটার পর আবার বালুরঘাটে পাকফৌজ গােলাবর্ষণ শুরু করেছে
হতাহতের কোন সংবাদ জানা যায় নি
আগরতলায় পাক-বিমানের জনবহুল কেন্দ্রে গােলাবর্ষণ
পাল্টা আঘাত করার জন্য সৈন্যদের প্রতি নির্দেশ
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২ ডিসেম্বর—আজ দুপুর ১২-৩৫ মিনিটে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় তিনটি পাকিস্তানী স্যাবর জেট বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বিমান বন্দর ও তার আশেপাশে গুলিবর্ষণ করে। এ ছাড়া গতরাতে সারা রাত ধরে পাকিস্তানীরা আগরতলা শহর ও শহরতলীর উপরে প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ করে। ভারত সরকারের এক বুলেটিনে জানানাে হয়েছে, পাকিস্তানী বিমান থেকে আগরতলায় বােমাবর্ষণও করা হয়।
আজ পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাটেও পাকিস্তানী বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে প্রবেশ করেছিল বলে জানা গেল।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ইস্টাণ কম্যাণ্ডার জনৈক মুখাত্রি আগরতলায় গােলাগুলি বর্ষণের ফলে অসামরিক সম্পত্তি ও প্রাণহানির উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের স্থানীয় কম্যাণ্ডোরকে আগরতলা শহর ও শহরতলীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, বিমান বিধ্বংসী কামানের গােলা একটি পাকিস্তানী বিমানকে আঘাত করে। সেই বিমানটিকে “উচ্চতা হারিয়ে নীচু হয়ে তার ঘাটির দিকে উড়ে যেতে দেখা যায়।”
ইউ এন আই জানাচ্ছে, আগরতলায় গতরাতে গােলাবর্ষণের ফলে কমপক্ষে ৫ জন নিহত ও ৪০ জনের বেশী আহত এবং বিমানের গুলির আঘাতে অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে।
গতকাল বিকালে আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলায় তিনটি গ্রামে পাকিস্তানী গােলাবর্ষণে একজন ভারতীয় নাগরিক নিহত ও দু’জন আহত এবং পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটে ৬ জন নিহত হয়েছে।
বালুরঘাট শহরে গতকাল আরাে ৬ জন আহতের মৃত্যুর ফলে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৬ জন দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৯০ জন। এ খবর কলকাতাস্থ পশ্চিমবঙ্গ পুলিস সদরদপ্তর থেকে জানা গেল।
নয়াদিল্লী থেকে ইউ এন আই জানাচ্ছে : আজ ভারতীয় প্রতিরক্ষা দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বলেন যে, পাকিস্তানী বিমানের আগরতলা হানা দেবার পর আজ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
উক্ত মুখপাত্র জানান : “গত ২৪ ঘণ্টা ধরে আগরতলা শহর এবং আগরতলা বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় পাকিস্তানীরা প্রচণ্ড গােলা বর্ষণ করেছে। ফলে বহু অসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে।
“আজ বেলা ১২-৩০ মিনিটে তিনটি পাকিস্তানী স্যাবার বিমান আগরতলা বিমানবন্দরে চার পাশের এলাকায় মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করে।
আমাদের বিমান বিধ্বংসী কামান গর্জে উঠলে বিমানগুলি পালিয়ে যায়। “স্থানীয় সেনাবাহিনীর কমাণ্ডারকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
আজকের এই সর্বাধিক গুরুতর পাক প্ররােচনার আগে আগরতলায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবিরাম গােলা বর্ষিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সীমান্ত এলাকায়ও তারা গােলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে। এই গােলাবর্ষণের ফলে ৩০ নভেম্বর বালুরঘাটে অসামরিক ভারতীয় নাগরিক নিহত হন। আমাদের তরফ থেকে পাল্টা কামান দাগা হয়। ঐদিন বালুরঘাটের উত্তর পশ্চিমে পাকিস্তানীরা ভারতীয় ঘাঁটির ওপরে হামলা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ও গােলাবর্ষণ করে। আমাদের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়। ঐদিন হিলিতেও আমাদের ঘাঁটির উপরে পাক সৈন্যরা গুলি গােলা বর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়।

পশ্চিম সীমান্ত
গতকাল চারজন রেঞ্জারের একটি পাকিস্তানী টহল ফিরােজপুরের উত্তরে ভারতীয় এলাকায় ১৫০ গজ ভিতরে অনুপ্রবেশ করলে আমাদের টহলদার সৈন্যরা রাইফেল থেকে গুলি চালায়। একজন রেঞ্জার আহত হয়। অন্যরা তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
গতকাল পাক সৈন্যরা মেন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিমে যুদ্ধ বিরতি সীমারেখার ওপর থেকে মাঝারি পাল্লায় মেশিন গানের সাহায্যে গুলি ছছাড়ে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী গুলির জবাব দেয় নি। ৩০ শে নভেম্বর পাক সৈন্যরা এ অঞ্চলে গুলি ছােড়ে। দু’দিনে ভারতীয় পক্ষের কেউ হতাহত হয় নি। আগরতলায় কারফিউ আগরতলা থেকে ইউ এন আই আরাে জানাচ্ছে : আজ অসামরিক কর্তৃপক্ষ আগরতলা পৌরাঞ্চল সহ নরসিংগড় থেকে বেতাই পর্যন্ত ১৫ কিলােমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় ৬ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারী করেন। পরে বেলা ১২ টায় ১ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করার পর রাত নটা পর্যন্ত কারফিউ মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আগরতলার রাজজিবালের কাছে একটি কলােনী, সার্কিট হাউস, বেসিক ট্রেনিং স্কুল, রাধানগর, অভয়নগর ও কুঞ্জবনে পাকিস্তানী গােল। এসে পড়ে। শহরতলী অরুদ্ধতীনগর থেকেই কামানের গােলায় ত্রিশ জন আহত হবার সংবাদ রাজ্যের সচিবালয়ে এসে পৌঁছেছে।

সূত্র: কালান্তর, ৩.১২.১৭১