You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.27 | হিলি সীমান্তে পাকিস্তানের আরেকটি শ্যাফে ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত- ৮০ জন সৈন্য হতাহত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

হিলি সীমান্তে পাকিস্তানের আরেকটি শ্যাফে ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত
৮০ জন সৈন্য হতাহত

নয়াদিল্লী, ২৬ নভেম্বর (ইউ এন আই)-গতরাতে পূর্ববঙ্গ সীমান্তের হিলি এলাকায় পাকিস্তানী অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় বাহিনী গত ছ’দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করে এবং পাকিস্তানের একটি শ্যাফে ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত করে। সংঘর্ষে পাকিস্তানী বাহিনীর ৮০ জন সৈন্য হতাহত হয়েছে।
ভারতীয় বাহিনীরও কয়েক জন হতাহত হয়েছেন, কিন্তু তাদের সংখ্যা জানা যায় নি।
এখানে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে ২৪ নভেম্বর যে সংবাদ আসে তাতে জানা যায়, পাকিস্তানী গােলন্দাজ বাহিনী কলকাতা থেকে ১২৮ কিলােমিটার উত্তরে অবস্থিত বালুরঘাট শহরে দুবার গােলাবর্ষণ করে। ফলে বেশ কয়েকজন অসামরিক ব্যক্তি হতাহত ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসামরিক এলাকায় এই গােলাবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী বাহিনী বালুরঘাট থেকে ১৫৬ কিলােমিটার পূবে অবস্থিত হিলি শহরের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর উপরেও আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানী বাহিনী কামান মর্টার ও মেশিনগান ব্যবহার করে।
পাক বাহিনী সারাদিন ধরে এই গােলাগুলি বর্ষণ চালিয়ে যায় এবং হিলি এলাকায় কিছু ট্যাঙ্কও নিয়ে আসে।
গতরাতে পাকিস্তানী গােলন্দাজ বাহিনী আবার বালুরঘাটে গােলা বর্ষণ করে যার ফলে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হয়। বালুর ঘাট ও হিলি এলাকায় ভারতীয় এলাকায় একাধিক পাক হানাদার বাহিনী হানা দেয় এবং ভারতীয় সীমান্ত ফাঁড়িগুলি হিলির উত্তরে অবস্থিত পাক বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই সব আক্রমণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন হতাহত হন, কিন্তু তাদের সঠিক সংখ্যা এখনাে জানা যায় নি।
এই পরিস্থিতির মােকাবিলা করার জন্য হিলির উত্তর দিকে ভারতীয় বাহিনী আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করে এবং একটি শ্যাফে ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত করে ও পাকিস্তানী বাহিনীর ৮০ জনকে হতাহত করে। ভারতীয় পক্ষে অল্প কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে প্রাপ্ত খবর জানা গেল, পশ্চিম সীমান্তে পাঞ্জাব এলাকায়ও পাকিস্তানী বাহিনী গতকাল প্ররােচনার সৃষ্টি করে। তারা পাঠান কোর্টের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি ফাড়ির উপর স্টেনগান দিয়ে গুলি বর্ষণ করে এবং অমৃতসরে দক্ষিণ পশ্চিমে একটি পর্যবেক্ষণ ফাঁড়ির উপরেও গুলি বর্ষণ করে। পর্যবেক্ষণ ফঁাড়িগুলি সাধারণত গােলাগুলি বর্ষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য যথেষ্ট আচ্ছাদন দিয়ে নির্মিত হয় না। স্পষ্টতই পাকিস্তানীরা ঐ ফাঁড়িতে অবস্থিত কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। এই গুরুতর প্ররােচনা সত্ত্বেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাল্টা গুলি চালায় নি।
জম্মু-কাশ্মীর এলাকায় গুরাইমের উত্তর-পূর্বে একটি ভারতীয় টহলদার বাহিনীর উপরে বুধবার পাকিস্তানী সৈন্যরা মাঝারি মেশিনগান ও রাইফেল প্রভৃতি থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। ভারতীয় টহলদার বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। এই ঘটনার পর দেখা যায়, পাকিস্তানীরা তাদের চারজনকে স্ট্রেচার করে নিয়ে যাচ্ছে, আর ছ’জন খোঁড়াতে খোড়াতে পালাচ্ছে। ভারতের তরফে কোনও ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায় নি।
আগরতলায় গােলাবর্ষণ
ইতিমধ্যে আজ তৃতীয় দিনেও ত্রিপুরার সীমান্তে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্ররােচনামূলক গােলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বাঙলাদেশের কুমিল্লা জেলার সীমান্তবর্তী সােনামুড়া এলাকা প্রচণ্ড পাক গােলাবর্ষণের লক্ষ্যস্থল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানীরা তাদের ব্রাহ্মণ পাড়ার ঘাটি থেকে এই এলাকায় অনেকগুলি স্থানে বুধবার গােলাবর্ষণ করে। ফলে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে দুজন শরণার্থী নিহত ও দু’জন আহত হয়।
এই অবস্থায় সােনামুড়া ও কলমছােরা থানার ভারত-পূর্ববঙ্গ সীমান্ত বরাবর দুই কিলােমিটার এলাকায় রাত ৯টা থেকে ৮ ঘণ্টার কাফু জারি করা হয়েছে তিন সপ্তাহের জন্য।
ত্রিপুরার সিধাই থানার অন্তর্গত বামুরিয়া গ্রাম, সাবরুমের সমরগঞ্জ গ্রাম এবং বেলােনিয়া মহকুমার নানুয়া সীমান্ত ফাঁড়িও গতকাল পাকিস্তানী গােলাবর্ষণের লক্ষ্যস্থল হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ ত্রিপুরার একিমপুর ও রাধানগর এবং আগরতলার শহরতলা জয়নগরেও পাকিস্তানীরা গুলি চালায়।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.১১.১৯৭১