You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.18 | আমাদের সংগ্রাম বৃথা যাবে না -জনাব হােসেন আলী | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

আমাদের সংগ্রাম বৃথা যাবে না
-জনাব হােসেন আলী

(সম্প্রতি বাঙলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’ রবীন্দ্র সদন’-এ দুটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেছিলেন। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যত ‘বাঙলাদশে’-এর সঙ্গীতশিল্পীরা অংশ গ্রহণ করেন, ‘রূপান্তরের গান পরিবেশিত হয়। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও আবৃত্তিকারগণ অংশগ্রহণ করে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘গণ-প্রজাতন্ত্রী | বাঙলাদেশ মিশন’-এর প্রধান জনাব হােসেন আলি। তার লিখিত ভাষণটি প্রকাশ করা হল।)

বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়ােজিত আজকের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে খুসী হয়েছি। বাংলার মুক্তি-সগ্রামী জনগণের জন্যে আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সক্রিয় সহযােগিতা ও সাহায্য ধন্যবাদের অনেক উর্ডে। এ সবের জন্যে আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
পাকিস্তানে জঙ্গীশাহীর চক্রান্তে বাংলাদেশে যে নৃশংস গণহত্যা চলেছে তা আপনাদের অজানা নয়। পাক সেনারা বাঙলার মাটিতে যে বীভৎস নারকীয় দৃশ্যের অবতারণা করছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। | জাতির গণমুক্তি আন্দোলনে শিল্পী-সাহিত্যিকদের দান অপরিসীম, একথা অনস্বীকার্য। মুক্তি-আন্দোলনে মসী-অসির চাইতে বড়। অসি আমাদের বেশি নেই ; তাই মসীর দরকার আরও বেশি।
আমরা আমাদের স্বাধীতা অর্জনে রক্ত অনেক দিয়েছি এবং আরও দেব। কিন্তু এ রক্তক্ষয় যত সম্ভব কম হয় তার জন্যে মসীর প্রয়ােজন আরও অধিক। ভিয়েতনামের মাই-লাই-এর নারকীয় ঘটনায় সারা বিশ্বে চমক ভেঙ্গেছিল এবং তা সম্ভব হয়েছিল শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের প্রচেষ্টায়। অথচ দুঃখের বিষয় বাঙলাদেশে মাই-লাই-এর মত শত শত ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও বিশ্বের বিবেক বিচলিত হচ্ছে না। তাই আপনাদের তৎপরতার আরও প্রয়ােজন আছে। আমার আবেদন। আপনারা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলুন ও বাঙলাদেশের ঘটনাকে দেশে দেশে পৌছে দেবার আরও প্রচেষ্টা চালান। বিশ্ব-বিবেক জাগিয়ে তুলুন ও চাপ সৃষ্টি করুন।
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, গণ-জাগরণে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকেন। এ ব্যাপারে আপনারা অনেক করেছেন এবং করবেন আশা করি। আমার একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষের জন্য আপনাদের প্রচেষ্টা বিফলে যাবে না। বরং এ প্রচেষ্টা মুক্তি-সংগ্রামের পথকে আরও প্রশস্ত করবে।
পাকিস্তান সরকার বিদেশ থেকে যত আধুনিক সমরাস্ত্র আমদানী করুক না কেন স্বাধীনতাকামী বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের দুর্বার অগ্রগতিকে প্রতিরােধ করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনাে শক্তিরই নেই।
বাঙলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার যে অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে, তাতে অচিরেই জয় আমাদের সুনিশ্চিত। ইনসা আল্লা। তার কারণ, আমাদের সংগ্রাম ন্যায় ও সত্যের সংগ্রাম। যেহেতু কোনাে স্বাধীনতা সগ্রাম ব্যর্থ হয় নি-আমাদের সংগ্রামও বৃথা যাবে না।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.৭.১৯৭১