বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বলিয়া ঘােষণার দাবি
শত শত নাগরিকের স্বাক্ষর ও পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষি মন্ত্রীদের সমর্থন
প্রধানমন্ত্রী খওয়াজা নাজেমুদ্দীনের নিকট স্মারকপত্র দাখিল
ঢাকা, ১৭ই নভেম্বর ১৯৪৭। বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলিয়া ঘােষণা করার অনুরােধ জানাইয়া পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর নিকটে একখানি স্মারকপত্র দাখিল করা হইয়াছে। পূর্বে পাকস্তিানের শত শত নাগরিক এই স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করিয়াছেন এবং ইহাদের মধ্যে সাহিত্যিক, কবি, শিল্পী, সঙ্গীতভক্ত, আইনজীবী, অধ্যাপক, ওলামা, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতা ডাক্তার, মহিলা সকলেই আছেন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মুছলমান সাহিত্য সমিতির সভাপতি মওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ, মওলানা আবদুল্লাহিল বাকী, এম, এল, এ তমদুন মজলিশের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল কাসেম, মওলবী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, কবি জসীমউদদীন, মওলবী আবুল কালাম শামসুদ্দীন (সম্পাদক আজাদ), অধ্যাপিকা মিসেস শামসুন্নাহার মাহমুদ, এম, এ, এম, বি, ই, প্রিন্সিপ্যাল এব্রাহিম খান, চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ড, শিল্পী জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক মনসুররুদ্দীন, মি. আবুল হাসানাত (ডি, আই, জি, পুলিশ), অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন, অধ্যাপক ডা. মােয়াজ্জম হােসেন, ডি, পি, এইচ, (প্রােভােস্ট, সলিমুল্লাহ মােসলেম হল), প্রিন্সিপ্যাল শরফুদ্দীন আহমদ, প্রিন্সিপ্যাল জহুরুল এছলাম, মি. জাকের হােসেন (আই, জি, পুলিশ), ডা. ওসমান গনি, ডি, এস, সি, অধ্যাপক আবদুল লতিফ বার এট ল, মওলানা মােস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক অতুল সেন, আল্লামা ডা. মহিউদ্দীন, মওলবী আবুল মুনসুর আহমদ, মিসেস লীলা রায় এম এ (সম্পাদিকা, জয়শ্রী), মিসেস আনওয়ারা চৌধুরী বি, এ; বি, টি, সেক্রেটারি নিখিল বঙ্গ মােছলেম মহিলা সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞানের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস, আর, খাস্তগীর ডি, এস, সি, গায়ক আব্বাস উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের প্রধান অধ্যাপক মি. বিনয়েন্দ্র নাথ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার প্রধান অধ্যাপক মি. গণেশ বসু, ‘আজাদের বার্তা সম্পাদক মওলবী মােহাম্মদ মােদাব্বের, নিখিল বঙ্গ মােছলেম ছাত্র লীগের সেক্রেটারি শাহ আজীজুর রহমান, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, শওকত ওসমান, আবুরুশদ, আলী আহসান, সৈয়দ মান্নান বখশ, আহসান হাবীব, ডা. ফহিমুদ্দিন (প্রচার বিভাগের সরকারি ডিরেক্টর), ডা. আবদুল মাজেদ ডেপুটি সার্জন জেনারেল), ডা. ওয়াহিদ … মাহমুদ, জনস্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি, মি. আবুল কাশেম, জিন্দিগী সম্পাদক কাজী আফসারউদ্দিন, আবু জাফর শামসুদ্দিন, জহুর হােসেন চৌধুরী প্রভৃতি নাম বিশেষ উল্লেখযােগ্য।
স্মারকপত্রে উল্লেখিত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলাের উল্লেখ করা হইয়াছে :
‘বাংলা ভাষা ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী ভাষা এবং বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষাগুলাের মধ্যে বাংলার ভাষা একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছে। ভারতের প্রায় ৮ কোটি লোেক বাংলা ভাষা ব্যবহার করিয়া থাকে এবং হিন্দু ও মুছলমান উভয়েই ইহার বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে সাহায্য করিয়া ইহাকে বর্তমান উন্নতস্তেরে উন্নীত করিয়াছে।
‘পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নমেন্টদ্বয় উভয়েই যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন, তাহা হইলে উহার ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বলতর হইবে।
‘হিন্দুরা যেমন সংস্কৃত, হিন্দী অথবা অন্যান্য ভাষার চর্চা করিবে, পূর্ব পাকিস্তানবাসীরাও তেমনি পশ্চিম পাকিস্তান ও অন্যান্য মােছলেম রাষ্ট্রের সহিত রাজনৈতিক অথবা সাংস্কৃতিক যােগাযােগ রক্ষার জন্য আরবী, ফার্সি ও উর্দু ভাষা শিক্ষা করিবে। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তান গভর্ণমেন্টকে ঐকান্তিক আগ্রহের সহিত অনুরােধ করা যাইতেছে যে, বাংলা ভষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও শিক্ষার বাহন বলিয়া যেন অতি সত্বর ঘােষণা করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তান ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান গভর্নমেন্টের বাংলা ভাষাভাষী সদস্যগণও এই প্রস্তাবটি সমর্থন করিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে।
দৈনিক আজাদ, ১৮ই নভেম্বর, ১৯৪৭