You dont have javascript enabled! Please enable it! 1952 | জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে সাক্ষাৎ - সংগ্রামের নোটবুক

জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে সাক্ষাৎ

২৪ মার্চ সন্ধে ৬.৩০ মিনিটে জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ দান করেন চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদের বাসভবনে।
সাক্ষাতের সময় সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শামসুল হক, কমরুদ্দীন আহমদ, আবুল কাসেম, তাজউদ্দিন আহমদ, লিলি খান, মােহাম্মদ তােয়াহা, আজিজ আহমদ, আলী আহাদ, নঈমুদ্দীন আহমদ, শামসুল আলম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

আলােচনার প্রথমেই জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদেরকে বলেন যে নাজিমুদ্দিনের সাথে তাদের যে চুক্তি হয়েছে সেটাকে তিনি স্বীকার করেন না কারণ নাজিমুদ্দিনের থেকে জোরপূর্বক সেই চুক্তিতে সই আদায় করা হয়েছে। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন যে আট দফা চুক্তির মধ্যে প্রত্যেকটি দফাতেই নাজিমুদ্দিনকে কি করতে হবে তাই বলা হয়েছে কিন্তু অন্য পক্ষের কর্তব্য সম্পর্কে কোনােই উল্লেখ নেই। চুক্তি কখনাে একতরফা হয় না, সর্বতােভাবে তা একটা দ্বিপাক্ষিক ব্যাপার। কিন্তু আটদফা চুক্তি স্পষ্ট প্রমাণ করে যে তা এক পক্ষের সুবিধার জন্যে করা হয়েছে এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর জোরপূর্বকই আদায় করা হয়েছে। এবং সেই অনুসারে চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অগ্রাহ্য।
সংগ্রাম পরিষদের সদস্যেরা সহৃদয়তাপূর্ণ মনােভাব নিয়েই জিন্নাহর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গােড়াতেই তাঁর এই আক্রমণাত্মক কথায় তাঁদের মনে সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ফলে ঘরের আবহাওয়া সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেল। এবং ভাষার প্রশ্ন নিয়ে সাধারণভাবে জিন্নাহর সাথে তাদের তর্কাতর্কি শুরু হয়ে পরিশেষে ঘােরতর ঝগড়ায় পরিণত হলাে। প্রথমেই মহম্মদ তােয়াহা তাঁকে সারাসরি বলেন যে তারা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চান। এর উত্তরে জিন্নাহ বলেন যে তিনি তাঁদের কাছে রাজনীতি শিক্ষা করতে আসেননি।
জিন্নাহর প্রধান বক্তব্য ছিল এই যে, পাকিস্তানে একাধিক রাষ্ট্রভাষা হলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। তাছাড়া একাধিক রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটিকে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেও বর্ণনা করেন। সেই পর্যায়ে মােহাম্মদ তােয়াহা তাঁকে বলেন যে কানাডা, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে দুই বা ততােধিক রাষ্ট্রভাষা আছে কাজেই প্রশ্নটি মােটেই নজিরবিহীন নয়। জিন্নাহ কিন্তু ঐ সমস্ত দেশে একাধিক রাষ্ট্রভাষার কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন। এতে তােয়াহা তাকে বলেন যে, একাধিক রাষ্ট্রভাষার কথা একটি ঐতিহাসিক সত্য কাজেই সেই সত্যকে তিনি কিভাবে অস্বীকার করতে পারেন। এর উত্তরে জিন্নাহ উম্মার সাথে বলেন যে তিনি ইতিহাস পাঠ করেছেন, তিনি এসব কথা জানেন। তাঁর এই জবাব শুনে অলি আহাদ বলেন যে, তিনিও ইতিহাস পড়েছেন এবং তিনি জানেন যে কায়েদে আযম ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন মাত্র। শুধু তাই নয়। এর পর অলি আহাদ জিন্নাহকে ব্যঙ্গ করে বলেন যে, তিনি শুধু ইতিহাসই জানেন তা নয়, তিনি বস্তুতপক্ষে একথাও জানেন যে, জিন্নাহ, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল এবং ইংল্যান্ডের রাণীর কাছে তাঁর অপসারণের জন্যে তারা আবেদন জানাতে পারেন।
অলি আহাদের উপরােক্ত কথায় জিন্নাহ, রীতিমতাে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং অলি আহাদ ও সংগ্রাম পরিষদের অন্য সদস্যদের উচ্চকণ্ঠে বকাবকি করতে থাকেন। এর ফলে ঘরের মধ্যে দারুণ হৈ চৈ পড়ে যায়। এই পর্যায়ে জিন্নাহ্র মিলিটারি সেক্রেটারি গণ্ডগােল আশঙ্কা করে কাছাকাছি জায়গা থেকে তাড়াতাড়ি এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেন। কিন্তু পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক কিছু নয় বুঝে তিনি আবার ভেতরের দিকে চলে যান। এই তর্কাতর্কির মধ্যে একবার ফাতেমা জিন্নাহ চায়ের তদারক করার জন্যে ঘরের মধ্যে অল্পক্ষণের জন্যে আসেন।
ইসলাম, রাষ্ট্রভাষা শৃঙ্খলা ইত্যাদি সম্পর্কে নানা অপ্রীতিকর আলােচনার মধ্যে দিয়ে মগরেবের নামাজের সময় হয়ে এল। শামসুল হক তখন জিন্নাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এবার নামাজের সময় হয়েছে, কাজেই কিছুক্ষণের জন্যে আলােচনা স্থগিত রাখা হােক’। শামসুল হকের এই কথায় জিন্নাহ ভয়ানক বিরক্ত হয়ে ওঠেন। কারণ তিনি মনে করলেন যে তিনি নামাজ পড়েন না, এটা জেনেই ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে বিব্রত এবং অপদস্থ করার জন্যেই নামাজের প্রস্তাব করা হয়েছে। আসলে কিন্তু শামসুল হক সে সময় নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং সেই নিয়ম রক্ষার জন্যেই তিনি নামাজ পড়ার প্রস্তাব করেছিলেন। জিন্নাহ এই প্রস্তাবে বাহ্যত বিরক্তি বােধ করলেও তার বিরুদ্ধে কোনাে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। এবং নামাজের বিরতি দেওয়ার প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর এই এড়িয়ে যাওয়ার মনােভাব লক্ষ্য করে শামসুল হক দ্বিগুণ উৎসাহে নামাজের বিরতির কথা বার বার বলায় ঘরের মধ্যে এক দারুণ অপ্রীতিকর অবস্থার উদ্ভব হয়।
নানা উত্তেজনা সত্ত্বেও জিন্নাহ্ এবং রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক ৭-১৫ মিনিট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। শামসুল হকের নামাজ পড়ার প্রস্তাবের ফলে আলােচনার মধ্যে অন্য জাতীয় জটিলতার সৃষ্টি না হলে তা হয়তাে আরাে কিছুক্ষণ স্থায়ী হতাে।
এই সাক্ষাৎকারের সময় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে জিন্নাহর কাছে নিম্নলিখিত স্মারকলিপিটি পেশ করা হয় :

স্মারকলিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একমাত্র মুসলমান যুবকদের লইয়া গঠিত এই কর্মপরিষদ মনে করেন যে, বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। কারণ প্রথমত তাঁহারা মনে করেন যে, উহা পাকিস্তানের সমগ্র জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের ভাষা এবং পাকিস্তান জনগণের রাষ্ট্র হওয়ার অধিকাংশ লােকের দাবি মানিয়া লওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, আধুনিক যুগে কোনাে কোনাে রাষ্ট্রে একাধিক ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হইয়াছে। রাষ্ট্রস্বরূপ নিম্নোক্ত কয়েকটি দেশের নাম করা যায় : বেলজিয়াম (ফ্লেমিং ও ফরাসি ভাষা), কানাডা (ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা), সুইজারল্যান্ড (ফরাসি, জার্মান ও ইতালির ভাষা), দক্ষিণ আফ্রিকা (ইংরেজি ও আফ্রিকানার ভাষা), মিসর (ফরাসি ও আরবি ভাষা), শ্যাম (থাই ও ইংরেজি ভাষা)। এতদ্বতীত সােভিয়েট রাশিয়া ১৭টি ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করিয়াছে।
তৃতীয়ত, এই ডােমিনিয়নের সমস্ত প্রাদেশিক ভাষার মধ্যে একমাত্র বাংলা ভাষাই রাষ্ট্রভাষার স্থান অধিকার করার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ সম্পদের দিক বিবেচনায় এই ভাষাকে পৃথিবীর মধ্যে সপ্তম স্থান দেয়া হইয়াছে।
চতুর্থত, আলাওল, নজরুল ইসলাম, কায়কোবাদ, সৈয়দ এমদাদ আলী ওয়াজেদ আলী, জসিমউদদীন ও আরাে অনেক মুসলমান কবি ও সাহিত্যিক তাহাদের রচনা সম্ভার দ্বারা এই ভাষাকে সমৃদ্ধিশালী করিয়াছেন।
পঞ্চমত, বাংলা সুলতান হুসেন শাহ, সংস্কৃত ভাষার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার পর্যায়ে উন্নীত করিয়াছিলেন এবং এই ভাষার শব্দ সম্পদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ পারসিক ও আরবী ভাষা হইতে গৃহীত।
উপসংহারে আমরা বলিতে চাই যে, যে কোনাে পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেক নাগরিকের কয়েকটি মৌলিক অধিকার আছে। কাজেই যে পর্যন্ত না আমাদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয় সে পর্যন্ত বাংলা ভাষার জন্যে এই আন্দোলন চালাইয়া যাওয়া হইবে।
জিন্নাহর কাছে প্রদত্ত এই স্মারকলিপিটিতে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি উপস্থিত করা হলেও তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক প্রভাব সহজেই লক্ষ্যণীয়। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির সপক্ষে যুক্তিস্বরূপ তারা কেবলমাত্র কয়েকজন মুসলমান কবি সাহিত্যিকের রচনার উল্লেখ করেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন যে, মুসলমান সুলতান হুসেন শাহ বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপােষকতা করেছেন এবং বাংলা ভাষার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ শব্দই আরবি ফারসি। শতকরা ৫০ ভাগ না হলেও বাংলা ভাষাতে আরবি ফারসি শব্দ প্রচুর আছে, মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের রচনায় বাংলা ভাষা যথেষ্ট সমৃদ্ধ এবং সুলতান হুসেন শাহ বাংলা ভাষার উন্নতির প্রাথমিক পর্যায়ে তার পৃষ্ঠপােষকতা করেছিলেন, এ সবই সত্য। কিন্তু তবু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা হিসেবে অন্যান্য বিবেচনার উপর গুরুত্ব না দিয়ে এগুলাের উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একমাত্র মুসলমান যুবকদের দ্বারা গঠিত এই কথার মাধ্যমে কর্মপরিষদের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে যে সব ছাত্র এবং অছাত্র প্রতিষ্ঠানের নেতারা ছিলেন, তাঁরা মাত্র কয়েক মাস পূর্বেও মুসলিম লীগ রাজনীতির সাথে ছিলেন। ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা সর্বপ্রথম একটি সত্যকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তারা আন্দোলন মূলত একটি অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন হলেও রাতারাতি কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তিত হয়নি এবং সেটা সম্ভবও ছিল না। সমস্যাটিকে সেইভাবে দেখা খুবই স্বাভাবিক। উপরন্তু কর্মপরিষদের মধ্যে আবুল কাসেমের মতাে কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন, যাদের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল পুরােপুরি সাম্প্রদায়িক। এইসব কারণে স্মারকলিপিটি সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবমুক্ত হয়নি।
দ্বিতীয়ত, আরবি ফারসি শব্দ, মুসলমান সাহিত্যিকদের রচনা এবং হুসেন শাহের পৃষ্ঠপােষকতার উল্লেখ সরকার এবং প্রতিক্রিয়াশীল মহলের বাংলা-বিরােধী প্রচারণাকে খণ্ডন করার জন্যেও কিছুটা প্রয়ােজন হয়েছিল। বাংলা ভাষার সাথে ইসলামের যে কোনাে সম্পর্ক নেই, বস্তুত সে ভাষা যে ইসলামী সংস্কৃতিবিরােধী, এই প্রচারণায় বাংলা ভাষা বিরােধীরা অত্যন্ত মুখর হয়েছিল। এর ফলেই হয়তাে বাংলা ভাষার সাথে মুসলমানদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্মারকলিপিটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।
কর্ম-পরিষদ ‘কেবলমাত্র মুসলমান’ যুবকদের দ্বারা গঠিত, এ বক্তব্যের চরিত্র সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক হলেও অন্যান্য যুক্তিগুলাে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে অন্যান্য বহু যুক্তি ছিল, যেগুলি গণতান্ত্রিক কর্মী ও নেতারা জিন্নাহর সামনে সরাসরি উপস্থিত করতে পারতেন। প্রকৃত পক্ষে তারা সেটা করা থেকে বিরত থাকেন।…
জিন্নাহ, ঢাকা পরিত্যাগ করার পর রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আন্দোলনের পর্যালােচনাকালে ছাত্রলীগ এবং তমদুন মজলিশের সদস্যের নিজেদের সংগঠনের কর্তৃত্বের উপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করেন। তমদুন। মজলিশ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে, বিশেষত যখন তা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তখন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মার্চের প্রথম দিক থেকে আন্দোলন রাজনৈতিক চরিত্র পরিগ্রহ করার সাথে সাথে তমদুন মসলিশের গুরুত্ব এবং তাদের নেতৃত্বের প্রভাব উল্লেখযােগ্যভাবে কমে আসে। এই পরবর্তী পর্যায়ে গণতান্ত্রিক যুব লীগভুক্ত কর্মীবৃন্দ, মুসলিম ছাত্রলীগ এবং সাধারণ ছাত্র সমাজই আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আন্দোলনের সময় তমদুন মজলিশের শামসুল আলম এবং মুসলিম ছাত্রলীগের নঈমুদ্দীন আহমদ যৌথভাবে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়কের কাজ করেন। এই দুজনের মধ্যে শামসুল আলমের কাছেই পরিষদের খাতাপত্র এবং অন্যান্য রেকর্ড থাকত। কর্মপরিষদের এই বৈঠকে শামসুল আলম আহ্বায়কের পদে ইস্তফা দেন। কারণ তাঁর মতে আন্দোলন তখন এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল, যাতে করে সত্যিকার কিছু করার জন্যে প্রয়ােজন ছিল একটি নতুন কর্মপরিষদ। পুরাতন পরিষদ তাঁর মতে সেদিক থেকে ছিল সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।
সেই বৈঠকেই শামসুল আলম মােহাম্মদ তােয়াহার কাছে সমস্ত কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন এবং তারপর এম.এস.সি শেষ বর্ষের ছাত্র আবদুল মান্নান অস্থায়ীভাবে আহ্বায়কের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে মনােনীত হন।

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম