You dont have javascript enabled! Please enable it! 1949 | ভাষা সম্বন্ধে কয়েকটি আরজি- দৌলতন নেছা খাতুন | সৈনিক - সংগ্রামের নোটবুক

ভাষা সম্বন্ধে কয়েকটি আরজি
দৌলতন নেছা খাতুন
সৈনিক- ১৯৪৯

বর্তমানে যে যুগধারায় আমরা চলিয়াছি তাহার ‘মটো’ হইতেছে অযথা এনার্জি অপব্যয় না করিয়া অল্প সময়ে বেশি ফল উৎপাদন করা। যতদূর পারা যায় দ্রুতদ্রুতগতিতে অগ্রসর হইয় যাওয়া। ধীরগতি মানেই মৃত্যু। পূর্ব পাকিস্তান এমনিতেই অনগ্রসর, শিক্ষিতের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। শিক্ষার অভাবে জনসাধারণ মেরুদণ্ডহীন পশুর মতাে জীবন বহন করে আজ স্বাধীন দেশে এই জনগােষ্ঠীকে যদি দ্রুত জাগাইয়া লইয়া না যাওয়া যায় তবে দেশ আগাইয়া যাইবে কী করিয়া, কাহাদের লইয়া এবং কিসের জোরে?
জনসাধারণ বলিতে যাহা ববাঝায় যদি তাহাদের আজ বিচারকের আসনে বসাইয়া ভাষার প্রশ্নটি সরলাকারে জিজ্ঞাসা করা যায় তবে স্বতঃই উত্তর আসিবে ‘না’। যে ভাষায় প্রথম মা-বলিয়া ডাকিয়াছি, হাসিয়াছি, কাঁদিয়াছি, ঝগড়া করিয়াছি, যে ভাষার সহিত আমার বত্রিশ নাড়ির বহু যুগ-যুগান্তরের অবিচ্ছিন্ন মিশ্রণ; বাংলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এই চিক্কণ শ্যামলিমা, ভূ প্রকৃতির স্বাতন্ত্র, ঋতু বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলাইয়া মিশাইয়া একান্ত তাহারই হইয়া বড় হইয়াছি তাহাকে ত্যাগ করিয়া বাঁচিব কি লইয়া।
কিন্তু জনসাধারণের আপত্তি বলিয়াই যে টিকিবে এমন কোনাে কথা নাই। জনগণের নাম লইয়া মুষ্ঠিমেয় লােক বহু বােঝা বহু লােকের ঘাড়ে অবলীলাক্রমে চাপাইয়া যুগের পর যুগ তাহাদের দিয়া টানাইয়াছে সুতরাং আজ যদি বাংলার জনসাধারণের আপত্তি উপেক্ষা করিয়া (তাহাদেরই ভালাে এবং মঙ্গলের জন্য) আর কিছু চাপাইয়া দেওয়া হয় তবে আশ্চর্য্য হইবার কিছু নাই। কিন্তু ভাবপ্রবণতার স্থান জগতে আজ নাই। দেশের প্রকৃত মঙ্গলকামী যাহারা তাহারা যুক্তি ও সত্য সমন্বয়ে বিচার করিয়া দেখুন ভাষা বা অক্ষর পরিবর্তনের প্রকৃতই প্রয়ােজন আছে। কিনা, সর্বোপরি হইলে লাভবান হইব কিনা। | যদি থাকে, যদি সত্যই সমগ্র যুক্তি প্রয়ােগ করিয়া বােঝা যায় বাংলাভাষা পূর্ববঙ্গের মুসলমানের অগ্রগতির পথে বাধা তবে অবলীলাক্রমে তাহাকে অন্য ভাষার স্থান দাড়িয়া দিতে হইবে কারণ সবার উপরে মানুষ সত্য, ভাষা নয়, কোনাে কিছুই নয়। মানুষের জন্যই একদিন ভাষার সৃষ্টি হইয়াছিল। ভাষার জন্য কোনাে মানুষের সৃষ্টি হয় নাই। সুতরাং সেই মানুষের জন্যই আজ যদি ভাষা পরিবর্তনের প্রয়ােজন হইয়া থাকে তবে তাহাকে রােধ করিতে পারে কে? তবে সত্য কোনটা বিচার্য বিষয় আজ তাহাই।

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম