হরফ বদল সম্পর্কে ক’টি আরজ
জীবন রক্ষণীয় পদার্থ। তাকে না রাখলে সর্বই মিথ্যা। এই জন্য বাংলা ভাষার হরফ বদলানাের নামে আপনারা অতােখানি চটছেন কেন? আমি ঠিক ধরতে পারছি না। আমার এই না বােঝাটা যদি বুড়াে বয়সে বুদ্ধির দোষে ঘটে থাকে, চোস্ত ভাষায় বুঝিয়ে দেবেন, বুঝে নেবাে। আমি তাে আর আমলা-ফয়লা ব্যুরােক্র্যাট নই। আপনাদের প্রীতিকামী ও অনুগ্রহ প্রত্যাশী একজন ভাগ্যহীন সাহিত্যিক মাত্র। এর পরের কথা বাংলা হরফ ছেড়ে বাংলা ভাষা লিখতে অন্য কোনাে হরফ নেওয়া যাবে। এটা ভাববার আগে জানা দরকার, আপনাদের আপত্তিটা ঠিক কোথায়? বাংলা হরফ কিছুতেই ছাড়া চলবে না? এই-ই কি আপনাদের বক্তব্য? না, শুধু আরবি বর্ণমালাতেই আপত্তি করেছেন? যদি বাংলা আরবি উভয় বর্ণমালাই পরিত্যাজ্য মনে করতে পারেন, অন্য একটি বর্ণমালার নাম করুন। আমি একটার নাম করতে পারি। কিন্তু এখানে তার দরকার নেই। কেন না পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষায় আরবি হরফ চালু করার চেষ্টা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক কারণে নয়, নিছক ইসলামি কোনাে কারণেও নয়। এ চেষ্টার কারণ প্রধানত রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সে আপনারা মানুন বা না মানুন, তা নিয়ে মাথা ঘামানাের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে নেই। কিন্তু আপনাদের তা জানতে হবে, বুঝতেও হবে। জানা বােঝা হয়ে গেলে তখন যা হয় করবেন, বলবেন।
অবশ্যি আমার যা অনুমান তাই-ই বলতে পারি। এমনও হতে পারে যে, আমার অনুমান ঠিক নয়। তবু যা ভাবছি, ভালােবাসার খাতিরে তা আপনাদের জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাই লিখছি।
বাংলাভাষী মুসলিমরা যখন পাকিস্তান চাচ্ছিলেন তাদের সেই চাওয়ার সমগ্র তাৎপর্যটি অনেকেই ভেবে দেখেননি। এই জন্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুসৃত কোনাে কোনাে নীতির অর্থ বা অভিপ্রায় তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রচলন এবং দেদার আরবি ফারসি উর্দু শব্দ আমদানির চেষ্টাও এইরূপ নীতি। এর যা উদ্দেশ্য, পাকিস্তানের জানা প্রদেশে উর্দুকে এই রাজ্যের রাষ্ট্র ভাষা করারও সেই উদ্দেশ্য।
সৈনিক, ৩০ শে জানুয়ারি রবিবার