You dont have javascript enabled! Please enable it! 1949 | পাকিস্তানে ৭টি রাষ্ট্রভাষা হওয়া কি সম্ভবপর | সওগাত - সংগ্রামের নোটবুক

পাকিস্তানে ৭টি রাষ্ট্রভাষা হওয়া কি সম্ভবপর

গত ১১ মার্চ, ঢাকা বার লাইব্রেরী হলে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মহতি সভায় ভাষা-আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা হয়। বাংলা ও উর্দুর সঙ্গে অন্যান্য ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবি তুলিয়া যাহারা ভাষা আন্দোলনকে দ্বিধা-বিভক্ত করিয়া দিবার প্রয়াস পাইতেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ তাহাদের অপচেষ্টা সম্বন্ধে সকলকে হুশিয়ার করিয়া দেন এবং ঘােষণা করেন : ইহা বাংলা ভাষার আন্দোলনকে পিছন হইতে ছুরিকাঘাত করার শামিল।

বহু ভাষার প্রশ্ন সম্পর্কে আলােচনা
আলােচনা-সভা জীবন্ত রূপ পরিগ্রহ করে যখন পাকিস্তানে দুইটির অধিক রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে আলােচনা শুরু হয়। এই আলােচনা শুরু হয় পাকিস্তান তমদ্দুন। মজলিশের সাধারণ সম্পাদক জনাব আবদুল গফুরের ‘পাকিস্তানে বহু ভাষার প্রশ্ন শীর্ষক একটি প্রবন্ধকে কেন্দ্র করিয়া! জনাব গফুর এই প্রবন্ধে প্রমাণ করিয়া দেন যে, ৭টি ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তােলা শুধু মারাত্মক নয় ভাষা আন্দোলনের প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। পূর্ব-পাক যুবলীগের অস্থায়ী সভাপতি জনাব আবদুস সামাদ ও দৈনিক সংবাদ’ এই (পূর্বর্তন) সহ-সম্পাদক জনাব গােলাম মুস্তফা ব্যতীত অন্য সকল বক্তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে শুধু বাংলা ও উর্দুর দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন। জনাব সামাদ বলেন, পাকিস্তানে যতগুলাে ভাষা আছে সেসকল ভাষারই সমান মর্যাদা দিতে হইবে। নওবাহার, চৈত্র, ১৩৫৯

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গণ্য করার দাবিতে পূর্বপাকিস্তানে যে আন্দোলন সৃষ্টি হইয়াছিল, তার জন্য আমাদের বহু তরুণ বন্ধু অনেক ত্যাগ ও দুঃখ বরণ করিয়াছেন। তাঁদেরে আমরা আন্তরিক সহানুভূতি জানাই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, পূর্ব-পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ তরুণদের সহিত এ ব্যাপারে সদ্ব্যবহার করেন নাই, এজন্য তাঁদের কাৰ্য্যের তীব্র নিন্দা করিতে আমরা ন্যায়ত বাধ্য। যারা পাকিস্তানের অকুতােভয় বীর সৈনিক এবং আজ পাকিস্তানকে গড়িয়া তুলিতে যারা হৃদয়শােণিত দান করিতেও সমুৎসুক, তাঁদেরই একটী গণতান্ত্রিক নিরীহ দাবিকে চাপা দিবার জন্য পুলিশের ব্যাটন, বন্দুক, সংগীন বা কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার কিম্বা শাসন কর্তৃপক্ষের ১৪৪টি ধারা প্রয়ােগ কেউই সমর্থন করিতে পারেন না। তবে আমাদের মনে হয়, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের নেতাদের অতঃপর অত্যন্ত সতর্কতা ও ধীর বুদ্ধির সহিত কার্যে অগ্রসর হইতে হইবে, নতুবা রাষ্ট্রের বিপদ ঘটিতে পারে। এখানে স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, পাকিস্তানের দাবি উত্থাপিত হইবার কিছুকাল পূর্ব হইতে মুসলিম সমাজ কায়েদে আযম মােহাম্মদ আলী জিন্নার হাতেই নেতৃত্বের সমস্ত ভার অর্পণ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তগুলিকেই নির্ভুল ভাবিয়া শিরােধার্য করিয়া আসিয়াছে। আজ সেই কায়েদে আযমই পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল। তাঁর বুদ্ধি, বিবেচনা, কূটনীতিজ্ঞান ও সতর্ক দৃষ্টির উপরেই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা প্রায় সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিতেছেন। পাকিস্তানি মুসলিম তরুণরা আজকার পরিস্থিতিতে কোনােক্রমেই তাঁকে তাঁদের অকুণ্ঠ আনুগত্য হইতে বঞ্চিত করিতে পারেন না। আর তা যদি তারা না করিতে চান – (আমাদের বিশ্বাস তারা তা চান না), তা হইলে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কেও কায়েদে আযমের সিদ্ধান্ত তাদের মানিয়া নিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের সফরে আসিয়া কায়েদে আযম স্পষ্ট ভাষায় ঘােষণা করিয়া গিয়াছেন যে, একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও আন্তঃপ্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষারূপে গৃহীত হইতে পারে; তবে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম কি হইবে সে সম্বন্ধে এই প্রদেশের জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারেন। আমাদের ধারণা এই যে, গণতন্ত্রের নামে কায়েদে আজষের এই ঘােষণার সমালােচনা করিয়া কোনাে লাভ হইবে না।…

সাময়িকী, সওগাত, বৈশাখ, ১৩৫৫