ইসলাম, ভাষা সমস্যা ও আমরা
ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের প্রচার দপ্তর ৬নং নয়া পল্টন, ঢাকা হইতে প্রকাশিত। ‘আমাদের প্রেস’
১৯নং আজিমপুর রােড হইতে মুদ্রিত।
২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গণজাগরণের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। পূর্ব বাংলার সাড়ে চার কোটি অধিবাসী এইদিন দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করেছে : বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতেই হবে।
কিন্তু কেন এই দাবি? সাড়ে চার কোটি অধিবাসীর প্রাণের পরতে পরতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল কোন যুক্তির ভিত্তিতে?
যে যুক্তি একটি নয়, দুটি নয় অগণিত। ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ বিশ্বাস করে, জনসাধারণের সেই সব যুক্তি ইসলামের আলােকে সুপ্রতিষ্ঠিত।
প্রতিটি নাগরিকের দেহ এবং মনের সর্বাংগীন বিকাশ ইসলামী রাষ্ট্রে সর্বপ্রথম লক্ষ্য। ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে মাতৃভাষার সাহায্য ছাড়া এ বিকাশ সাধন করা একে বারেই অসম্ভব। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে জাতীয় উন্নয়নের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে মাত্রভাষার উন্নতিসাধনের মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মােহাম্মদের (দ) আবির্ভাবের সময় হিব্রু ভাষা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী ভাষা হিসেবে পরিগণিত হতাে, কিন্তু সাধারণ মানুষের বােধগম্য হওয়ার জন্যই অপেক্ষাকৃত সহজ ভাষা আরবিতে পবিত্র কোরান শরীফ নাজেল হয়। আরবির পরিবর্তে সেদিন যদি অন্য কোনাে ভাষায় কোরান শরীফ নাজেল হতে তবে আরববাসীদের পক্ষে ইসলামের বাণী অতি অল্প সময়ে গ্রহণ করা সম্ভব হতাে না। পূর্ব পাকিস্তানে সত্যিকার ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঠিক তেমনি করে মাতৃভাষার মাধ্যমে আজ ইসলামী সমাজবাদের বাণী পূর্বপাকিস্তানের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনাে ভাষার মাধ্যমে এ চেষ্টা করার অর্থ হবে আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত করা।
ইংরেজ আমলে বাংলাদেশে মুসলমানদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন হিন্দুদের তুলনায় ঘাের পশ্চাৎপদ ছিল। এর একমাত্র কারণ, ইংরেজ বাংলায় শাসন-বিস্তারের সাথে সাথেই মুসলমানদের মধ্যে ভাষা-সংকট সৃষ্টি করে। রাজভাষা ফারসিকে বিতাড়িত করে ইংরেজরা সেখানে নিয়ে এল ইংরেজি। সদ্য আজাদীহারা মুসলমানদের ইংরেজি ভাষার প্রতি অবহেলা এবং সর্বব্যাপী অসহযােগিতা ও অজ্ঞানতার সুযােগ নিয়ে প্রতিবেশী হিন্দুসমাজ স্বাভাবিকভাবেই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষা-সংস্কৃতিতে মুসলমান সম্প্রদায়কে অতিক্রম করে গেলেন।
এদিকে মুসলমানদের অবস্থা কি? তারা হয়ে রইলেন ‘না ঘরকা না ঘাটকা। বাংলা ভাষাও ভালাে করে চর্চা, করলেন না, ইংরেজিকেও বয়কট করলেন। ভারতে শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক বিরাট মুসলিম জাতি অশিক্ষিত মৎস্যজীবীর পর্যায়ে নেমে আসতে বাধ্য হলেন।
অন্যদিকে একদল ‘শেরিক সম্পূর্ণভাবে বাংলাভাষাকে বর্জন করবার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলে। একদিকে ইংরেজি বর্জন, অন্যদিকে ‘শেরিকদের বাংলা বর্জন করে উর্দু প্রচলিত করার প্রচেষ্টার যে বিপর্যয় দেখা দেয় তাতে সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অগ্রগতি মারাত্মকবাবে ব্যাহত হয়।
কিন্তু আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন সূচিত হলাে। বিশেষ করে গত ত্রিশ বছর ধরে এই অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষিত মুসলিম সমাজ ধীরে ধীরে মাতৃভাষার কদর বুঝতে শিখেছেন এং ক্রমে ক্রমে বাংলা সাহিত্যের সাধনায় মুসলমানদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ নিশ্চিত পথে অগ্রসর হচ্ছিল। বাংলা-ভাষাভিত্তিক একটি মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজও বাংলা দেশে গড়ে উঠলে। সরকারি চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কৃষি, ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই বাঙালি মুসলমানের ক্রমােন্নতি লক্ষ্য করা গেল এবং বলাইবাহুল্য, এই নবগঠিত মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-সভ্যতার বাহন হলাে বাংলা উর্দু বা ইংরাজি নয়।
এরপর এল দেশ বিভাগ। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এদেশের সাড়ে চার কোটি জনসাধারণ আশা করে যে, স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সাথে সাথে বাংলা ভাষার মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানের উন্নয়ন আরও ব্যাপক ও সর্বাত্মক হয়ে উঠবে। যে ভাষার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই একটি মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে উঠেছে, সেই ভাষাকে কেন্দ্র করেই পূর্ব পাকিস্তানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন চলবে, এটা অত্যন্ত ন্যায়সংগত ও স্বাভাবিক কথা; কিন্তু এখানেও একটা সংকটের সৃষ্টি করা হয়েছে। ইংরেজ সরকার বাংলা দেশের শাসন হাতে নেবার সাথে সাথেই যেভাবে ভাষাসংকটের সৃষ্টি করে, এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ইংরেজ ফারসি তাড়িয়ে আমদানি করেছিল ইংরেজি, এবার বাংলাকে হাটিয়ে দিয়ে আমদানি করার কথা চলছে উর্দু।
পৃথিবীর কোনাে দেশের ইতিহাস বহিরাগত রাষ্ট্রভাষার স্থায়িত্বের নজীর নেই। ইরান ও তুরস্কের ইতিহাসে এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এই ভারত ও পাকিস্তানেও ইংরেজি শিখে বহু ভারতীয় যশের শিখরে আরােহণ করেছেন সত্যি কথা, কিন্তু ইংরেজ চলে যাবার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষাকেও এদেশ থেকে। পাততাড়ি গুটাতে হচ্ছে। তার স্থান দখল করতে যাচ্ছে ভারতে হিন্দি এবং পাকিস্তানে বাংলা ও উর্দু।
বাংলাভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার বিরুদ্ধে একশ্রেণির লােকের কাছে একটা সস্তা যুক্তি প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে এই যে, বাংলা সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন ও হিন্দু সাহিত্যিকদের দ্বারা পরিপুষ্ট বলে এই ভাষা ইসলামী ভাবধারা প্রচারের উপযােগী নয়। যারা এই যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, তাদের জানা আছে এবং জানলে জানা উচিত যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় প্রত্যেকটি প্রধান ভাষা অল্পবিস্তর সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন। উর্দু ভাষায় অজস্র সংস্কৃত শব্দের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কারুর কোনাে সন্দেহ আছে কি? যদি না থাকে তাহলে কি উর্দু ভাষার জাত খােয়া গেছে বলতে হবে? আমাদের প্রশ্ন, পবিত্র কোরান শরীফ যে সময় অবতীর্ণ হয়, সেময় আরবী ভাষা কাদের ভাষা ছিল? পুতুল-পূজারী পৌত্তলিক নাসারাদের নয় কি? যদি তাই হয়, তাহলে আরবি ভাষাকে পবিত্র ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। কেন? আসলে, ভাষা ভাবপ্রকাশের বাহন মাত্র। ভাব যদি সমৃদ্ধ হয় এবং ভাষা যদি শক্তিশালী হয় তাহলে যে কোন সমৃদ্ধ ভাবধারা যে কোন শক্তিশালী ভাষার প্রকাশ করা চলবে। বাংলা ভাষা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ ভাষা—এই ভাষায় যদি ইসলামী ভাবধারার প্রচার ও প্রসার ঘটা অসম্ভব হয়, তাহলে বুঝতে হবে, হয় বাংলা ভাষা দুর্বল, নয় ইসলামী ভাবধারারই দুর্বলতা রয়েছে; কিন্তু এ দুয়ের যে কোনাে একটি স্বীকার করে নেবার প্রগতা কারুর আছে কি?
উর্দু ভাষাকে ইসলামী ভাবধারার অন্যতম বাহন বলা হয়ে থাকে; কিন্তু প্রশ্ন করতে পারি কি, এই উর্দু ভাষাতেই নিরীশ্বরবাদী কম্যুনিস্ট কাব্য সাহিত্যের প্রচার সম্ভব হচ্ছে কি করে? উর্দু ভাষা যদি এতই সাফ-সুতরা ও পাক-পবিত্র হবে, তাহলে সে-ভাষায় কমুনিস্ট সাহিত্য রচনা করা হচ্ছে কেন? বস্তুত : বাংলা ইসলামী ভাবধারা প্রচারের অনুকূল ভাষা নয় বলে যারা মতামত দেন, তাঁদের দৃষ্টিশক্তি নিতান্তই একপেশে। ইসলামী ভাবধারা তার নিজস্ব আদর্শের দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল। পৃথিবীর যে কোনাে ভাষার যে কোনাে যুগে এর সার্থক রূপায়ণ চলতে
পারে।
বাংলাভাষার ইতিহাস আলােচনা করলে এ সত্য পরিস্ফুট হয়ে উঠবে। বাংলা ভাষার প্রাথমিক বিস্তারের মূলে ছিলেন মুসলমান, হিন্দুরা নয়। তৎকালীন বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দের অস্তিত্ব ছিল। নবাব হােসেন শাহের আমলে প্রধানত মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংস্কৃত-ঘেঁষা রূপ অতি অল্পদিনের ঘটনা। বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা ভাষা আরবি ফারসি শব্দের প্রায় বিলােপ সাধন করেন এবং সংস্কৃত ব্যাকরণের উপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপ দেন। বলা বাহুল্য, বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত-ঘেঁষা বাংলা আজ হিন্দু সমাজও ব্যবহার করেন না। ভাব ও সংস্কৃতির বিবর্তনের সাথে সাথে বাংলা ভাষায়ও বিবর্তন এসেছে এই বিবর্তনের মুখে কাজী নজরুল ইসলামের আরবি-ফারসি মধুর আমেজ দেওয়া কাব্য ও ছন্দের রাজা সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আরবি ফারসি শব্দের সুষ্ঠু প্রয়ােগবিশিষ্ট কবিতা বাংলা সাহিত্যের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা পূর্ববাংলার মুসলমানদের মনােজগতে এক বিরাট ভাববিপ্লবের সৃষ্টি করেছে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি যদি না করা হয়, এবং উপর থেকে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার কোন চেষ্টা যদি না হয়, তাহলে বাংলা ভাষা উর্দু ভাষা থেকেও তার আহরণী-প্রতিভার পরিচয় দেবে, নিঃসন্দেহে এ আশা আমরা করতে পারি।
আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি করতে গিয়ে আমরা হীন প্রাদেশিকতার মনােভাবকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আমরা বিশ্বাস করি, গােষ্ঠীগত ও দেশগত রূপ ছাড়াও প্রত্যেক মুসলমানের একটি বিশ্বজনীন রূপ আছে— প্রাদেশিকতার পঙ্কিলতায় নিমগ্ন হয়ে আমরা ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভংগীর পরিপােষকতা করার বিরােধী। সাথে সাথে একথাও বলে রাখা দরকার যে উর্দুকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর দাবিও আমরা সমর্থন করি।
ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানে একের বেশি দুইটি রাষ্ট্রভাষায় অস্তিত্ব থাকলে জাতির ঐক্যের ফাটল ধরবে, কেউ কেউ এই অভিমতও পােষণ করে থাকেন। বলা বাহুল্য, এ যুক্তিও ইসলামের আলােকে মেনে নেওয়া চলে না। ঐক্য (unity) ও সমতা (uniformity) এক জিনিস নয়। ঐক্য বজায় রাখতে গেলে সবাইকে একই খাদ্য খেতে হবে, একই লেবাস পরতে হবে, একই ভাষায় কাজ-কারবার করতে হবে, একই ধারায় চিন্তা করতে হবে— এ যুক্তি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অচল। বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলন ইংরেজিতে যাকে বলা হয় unity in diversity- সেই লক্ষ্যে পৌছানােই ইসলামের আদর্শ। একমাত্র সাধারণ আদর্শ ও জীবন-নীতির মাধ্যমেই একটি জাতিকে একতাসূত্রে আবদ্ধ করা যেতে পারে। পাকিস্তানের সংগ্রামে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বহু ভাষাভাষী মুসলমানেরা এগিয়ে এসেছিলেন।
পাকিস্তানের প্রচার চলছিল বাংলা ভাষাতেই, মাদ্রাজে মাদ্রাজীতে, উড়িষ্যার উড়িয়াতে। এতে পাকিস্তানের দাবি দুর্বল না হয়ে বরং জোরালােই হয়েছিল। পাকিস্তান সংগ্রামের অভাবিতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল এই যে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মুসলমানেরা আকৃতিগত প্রকৃতিগত এবং ভাষাগত বিভেদ সত্ত্বেও একই আদর্শের পত্যাকাতলে সমবেত হতে পেরেছিলেন। আজ পাকিস্তান অর্জিত হওয়ার পর বাংলা-পাঞ্জাব-সিন্ধু-বেলুচিস্তান-সীমান্ত প্রদেশের মুসলমানেরা যদি সমান প্রেরণা নিয়ে হুকুমাতে রব্বানিয়াৎ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসেন, তাহলে ভাষার বিভিন্নতা, প্রাকৃতিক দূরত্ব এবং অন্যান্য অসুবিধা কোনাে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারবে না। তাছাড়া আমরা বিশ্বাস করি আজকের যুগে ভাষা মাধ্যমে নয় বরং একমাত্র আদর্শের মাধ্যমেই পকিস্তান ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকতে পারবে। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইরা যদি বাংলা শেখেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ উর্দু শেখেন তাহলে উভয় অংশের জনগণ একে অপরের ভাবধারা, সুখ-দুঃখ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এবং উভয় অংশের জনসাধারণের মধ্য ঐক্য সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত হবে।
তাই উপসংহারের এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষার আমরা করতে চাই যে, বাংলাভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের ঐক্যে ফাটল ধরায়নি বরং এক ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পথে এ আন্দোলন আমাদের এগিয়ে দিয়েছে।
ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
বাংলাদেশ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে উপরে যেসব যুক্তি দেওয়া গেল, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের কর্মীবৃন্দ মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করে বলেই সাংগঠনিক সমস্ত অসুবিধা উপেক্ষা করেও কর্মীরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।
এই আন্দোলনে কারাবরণ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে তারা মােটেই দ্বিধাবােধ করেনি।
আমরা বিশ্বাস করি, প্রাদেশিকতার সংকীর্ণ মনােবৃত্তি বা উর্দু ভাষাভাষীদের প্রতি কোনরকম বিদ্বেষের মনােভাব ভাষা আন্দোলনের জন্মদান করেনি। গভীর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের সাড়ে চার কোটি জনসাধারণ বাংলাকে আজ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সংগ্রাম আরম্ভ করেছেন।
মহান উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে যে আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে তাকে পার্টিগত বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ রুখে দাঁড়াবে।।
ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ বিশ্বাস করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে যারা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত প্রহরীরূপে কাজ করে যাবেন পূর্ববাঙ্গলার প্রতিটি সন্তান।
তাই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার কাজে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানের প্রতিটি কল্যাণকামী সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবীকে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই।
সূত্র: ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ মে- ১৯৫২