You dont have javascript enabled! Please enable it!

সৈনিক কাগজে প্রকাশিত রিপাের্ট
রক্তাক্ত ঐতিহাসিক ২১শে ফেব্রুয়ারির বিবরণ

২১শে ফেব্রুয়ারি, সকাল হইতে শহরের বিভিন্ন স্কুলের ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েৎ হতে থাকে। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণভাবে এক সভার আয়ােজন হয়। প্রাঙ্গণে সভা চলিতে থাকার সময় হইতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রাইফেলধারী পুলিশের সমাবেশ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হইতে ছাত্রগণ ১১টার সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় বাহির হইতে থাকে এই সময় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে অধিক সংখ্যক ছাত্র দৌড়াইয়া গিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং কিছু সংখ্যক একত্রে দৌড়াইয়া মেডিকেল কলেজের দিকে যাইতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত ছাত্ররা কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই সময় ভাইস চ্যান্সেলার পুলিশের নিকট বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কাঁদুনের বােমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ জানান। এরপর ভাইস চ্যান্সেলরের অনুরােধ ক্রমে ছাত্রেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হইয়া শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করিতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করিয়াছে বলিয়া ছাত্রদের বেপরােয়া গ্রেপ্তার করিতে থাকে। বৈকাল চারি ঘটিকায় পুলিশ মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর বেপরােয়া ভাবে গুলি বর্ষণ করিতে থাকে। ফলে ১২ নং শেডের বারান্দায় আবুল বরকত গুলিবিদ্ধ হইয়া সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। গুলির আঘাতে তাঁহার মাথার খুলি উড়িয়া যায়। তাহার রক্তে ১২নং শেডের প্রশস্ত অঙ্গন রঞ্জিত হইয়া যায়। গুলির আঘাতে হােস্টেলের অন্যান্য কয়েকটি শেডের বারান্দায় ও কয়েকজন ছাত্রকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখা যায়। কয়েকটি বুলেট দেওয়াল ভেদ করিয়া ১২নং শেডের কামরার মধ্যে প্রবেশ করে। সৌভাগ্যবশত তখন এ কামরায় কেহ ছিল না। কয়েকটি কামরার ভিতরে রক্তের দাগ এখনাে বিদ্যমান রহিয়াছে। পুলিশ ৬২ জনকে গ্রেফতার করিয়া করিয়া ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে আটক করে এবং শত শত ছাত্রকে মােটর বােঝাই তেজগাঁও নিয়া ছাড়িয়া দিতে থাকে। যাদের গ্রেফতার করা হইয়াছে তাদের মধ্যে মুসলিম ছাত্র লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব শামসুল হক, আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি জনাব মুসতাক আহমদ অন্যতম। | গ্রেফতারের ফলে ছাত্র মহলে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং তারা নানাবিধ স্লোগান সহকারে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!