১৯৫২ সালের আন্দোলনের প্রাককালে : (১০ ফেব্রুয়ারি)
সৈনিকের সম্পাদকীয় : পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে অনেক তর্ক-বির্তক হয়ে গেছে। এই সমস্ত তর্ক-বিতর্ক হতে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে একমাত্র উর্দু রাষ্ট্রভাষা হতে পারে না এবং পাকিস্তানের বৃহত্তর জনসমষ্টি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে চায়। বিগত ভাষা-আন্দোলনের (১৯৪৮) মাধ্যমে যে। দুর্জয় জনমত আত্ম প্রকাশ করে আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে থর থর করে কাপিয়ে তুলেছিলে। তাতে উপরিউক্ত অভিমত অত্যন্ত স্পষ্ট করে ধরা দিয়েছিল। সে দুর্জয় গণআন্দোলনের জোয়ারে পাক উজিরে আজম জনাব নাজিমুদ্দিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করতে জাগ্রত জনতাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন। তদানিন্তন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বর্তমানে পাক উজিরে আজম। ১৯৪৮ সালের সে ওয়াদাকে তিনি আজ হয়তাে ইচ্ছে করেই ভুলে গেছেন। তাই যে ঢাকার বুকে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ওয়াদা দিয়েছিলেন সেই ঢাকাতেই তিনি ঘােষণা করেন: একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে। ওয়াদা ভঙ্গ করা লীগ নেতাদের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা দাঁড়িয়েছে। আজ জনাব নাজিমুদ্দিনও নতুন করে ওয়াদা ভঙ্গ করে পূর্ববঙ্গের জনতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার নতুন নজির স্থাপন করলেন। কিন্তু জাগ্রত জনতা এই বিশ্বাসঘাতকতার সমুচিত জবাব দেবার জন্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে নতুন করে দিকে দিকে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। আমরা এ গণআন্দোলনকে মােবারকবাদ জানাই। বিগত ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি তার আলােকে এবারকার আন্দোলনের সময় আমাদের সাবধান হওয়ায় প্রয়ােজন রয়েছে। বিগত ভাষা-আন্দোলনে আমরা দেখেছি ভাষা আন্দোলনকে সাবােটাজ করে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত হয়েছিল। এবারকার আন্দোলনেকেও ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য অনেকে ওঁৎ পেত রয়েছে। যারা বিগত ভাষা আন্দোলনের তীব্র বিরােধিতা করেছে তারাও এবারকার আন্দোলনের সুযােগ নেবার অপেক্ষায় আছে। সুতরাং জনগণকে এসব অশুভ ব্যক্তিদের থেকে সাবধান হয়ে আন্দোলনে এগিয়ে যেতে হবে যাতে পূর্বেকার ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়।
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম