বাংলা বিরােধীদের একটি যুক্তি
যারা এখনাে পাকিস্তানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করিতে আপত্তি করেন তাহাদের অন্যতম যুক্তি হইল: বাংলার স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আরাে বহু ভাষার প্রশ্ন দেখা দিবে। সিন্ধী, গুজরাটি, বেলুচ, পশতু প্রভৃতি বহু ভাষার দাবি উখিত হইয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যাকে ঘােরালাে করিয়া তুলিবে। সুতরাং ভাষা সমস্যাকে এই ভাবে ঘােরালাে না করিয়া শুধু একটি মাত্র ভাষাকেই (অর্থাৎ উর্দুকে) মানিয়া লওয়া উচিত। পূর্ব পাকিস্তানের জনৈক কবি একটি দৈনিক পত্রিকা এবং ইহাদের মুষ্টিমেয় সমর্থক এই মতের পােষক বলিয়া প্রকাশিত হইয়াছে। বলা বাহুল্য মুসলিম লীগের বাের্ড এই যুক্তির অবতারণাও করিয়া থাকেন। আমাদের মনে রাখিতে হইবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বাভাবিক ভাবেই উঠিয়েছে। পাকিস্তানের জন্মের পর হইতে ১৯৪৭ সনেই ভাষা আন্দোলন জন্ম নিয়াছে এবং ইহার পেছনে ঐতিহাসিক, ভৌগােলিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি নানাবিধ কারণ বিদ্যমান রহিয়াছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এক বাংলা ছাড়া উর্দুর সঙ্গে অন্যকোন প্রাদেশিক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের জন্য কোন রকম আন্দোলনত হয়ই নাই- অধিকন্তু প্রাদেশিক সরকারি ভাষা করার কোন দাবিও উঠিয়াছে বলিয়া আমরা শুনি নাই। সব চাইতে বড় কথা:অন্যভাষার দাবি উঠিবে বলিয়া আমাদের যুক্তিসংগত দাবিকে ত্যাগ করিতে হইবে এমন কোন কথা নাই। সােজা কথায় পূর্ববঙ্গের শতকরা ৯৯ জনের দাবি হইল— বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হউক, অন্য ভাষা হউক বা না হউক সেটা লইয়া আমাদের মাথা ঘামাইবার সময় এখন নাই।
২০ শে মার্চ, ১৯৫৩, সৈনিক