প্রথম সংগ্রাম কমিটী
অধ্যাপক নুরুল হক ভূইঞা
১৯৪৭ সনে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ হইতেই বাংলাকে উপযুক্ত মর্যাদায় আসীন করার প্রচেষ্টা হইতে থাকে। তমদুন মজলিশের প্রচেষ্টায় ঐ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহু সাহিত্য বৈঠক ও আলােচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নামকরা সাহিত্যিক সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের দস্তখত লইয়া কর্মীরা একটি বিবৃতি ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায় যে : মনিঅর্ডার ফরম স্ট্যাম্প প্রভৃতিতে শুধু উর্দু ও ইংরেজিকে স্থান দেওয়া হইতেছে, বাংলাকে নয়। উর্দুকে সর্বত্র চালু করার জন্য আরাে নানা প্রচেষ্টার কথা প্রকাশ হইতে থাকে। এর ফলে তমদুন মজলিশ তার অফিসে (ইউনিভার্সিটি নিকটস্থ রশিদ বিল্ডিং এর ভাঙ্গা ঘরটিতে) একটি বৈঠক আহ্বান করে। ঐ বৈঠকেই প্রথম সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। অধ্যাপক আবুল কাসেম, শামসুল আলম, নইমুদ্দীন আহমদ (বর্তমানে অ্যাডভােকেট), আজিজ আহমদ, নজরুল ইসলাম (বর্তমান অধ্যাপক) সানাউল্লাহ নূরী এবং আর ও ২/৩ জনকে নিয়া সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। অধ্যাপক। কাসেম সাহেবকে কমিটীর ট্রেজারার ও আমাকে কনভেনার নিযুক্ত করা হয়। অবশ্য ব্যক্তিগত কারণে আমি বেশি দিন সক্রিয়ভাবে কাজ করিতে পারি নাই। আমার অবর্তমানে মসলিশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মি: শামসুল আলম সাহেব অ্যাকটিং কনভেনার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৮ সনের আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত। শামসুল আলম সাহেবই কনভেনারের কাজ চালাইয়া যান। যতদূর মনে পড়ে নাজিমুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে সংগ্রাম কমিটির যে চুক্তি হয়, তাতে তিনি সংগ্রাম কমিটির পক্ষে স্বাক্ষর দেন। প্রথম কমিটিতে যারা ছিলেন, তারা প্রায় সকলেই ছিলেন তমদুন মজলিশের সদস্য ও সমর্থক। তখন সবেমাত্র নইমুদ্দীন সাহেব পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কনভেনার হিসেবে অনেকটা একাই কাজ চালাইয়া নিতেছিলেন। তিনি সক্রিয়ভাবে এ কমিটিতে যােগদান করেন। পরবর্তীকালে অনেকগুলাে বিবৃতি তমদ্দুন মজলিশ ও ছাত্রলীগের নামে যুক্তভাবে প্রচারিত হইয়াছিল। ফজলুল হক হলে, সলিমুল্লাহ হলে এবং মজলিশের অফিসে ১৯৪৮ সনের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অনেকগুলাে বৈঠক হয়। পরবর্তী বৈঠকগুলােতে কমিটিকে আরাে সম্প্রসারিত করা হয়। কমিটিতে জনাব কমরুদ্দিন জনাব শামসুল হক, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, মােহাম্মদ তােয়াহা, শামসুল ইসলাম, অলি আহাদ, আবুল খায়ের কয়েকজন শ্রমিক প্রতিনিধি ও আরাে কয়েকজন সদস্য হিসেবে কোঅপট করা হয়।
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম