ভারতবর্ষ ও বাঙলাদেশের সংগ্রাম
বিবেকানন্দ মুখােপাধ্যায়
কলিকাতায় ও পশ্চিমবঙ্গে যখন ব্যক্তিগত টেরােরিজম ও খুনখারাবি এক বীভৎস নজিরের সৃষ্টি করিয়াছে। এবং বাঙালির মুখে চুনকালি লেপিয়া দিতেছে, তখন পূর্ববঙ্গের যুবক ও জনগণ আশ্চর্য সাহসিকতার সঙ্গে সশস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে হাতেকলমে যুদ্ধের দ্বারা ইতিহাসের এক নতুন দিগন্ত খুলিয়া দিয়াছে। পূর্বদেশের নতুন স্বাধীন রূপ ‘বাঙলাদেশের নিকট অন্তত একটি কারণে আমরা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গবাসীরা ঋণী। কারণ, মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে সেখানকার বাঙালিরা এপারের বাঙালির কিংবা সমগ্র বাঙালি জাতির মুখ রক্ষা করিয়াছেন। বাঙালি যে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের দ্বারা মহৎ ব্রত উদ্যাপনের জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে পারে এবং রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পথ দিয়া জীবনের নতুন অভিযানে অগ্রাসর হইতে পারে, বাঙলাদেশের জনতা এই অপূর্ব দৃষ্টান্ত আমাদের সামনের তুলিয়ে ধরিয়াছেন। সারা পৃথিবীর কাছে আমরা বুক ফুলাইয়া বলিতে পারি—“হাঁ, আমরা বাঙালি, আমরা দুশমনের কাছে মাথা নত করি না, আমরা লড়াই করি।” যদিও এই প্রশ্নটিকে একমাত্র বাঙালি-অবাঙালির দৃষ্টিতে বিচার করা উচিত নয় তবু এই বাস্তব সত্য অস্বীকার করার উপায় নাই যে, সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সমগ্র পূর্ব বাঙলার কেবল হাজার মাইলের ব্যবধান নয় ; ইতিহাস, ভূগােল, নৃতত্ত্ব এবং ভাষা, সাহিত্য, সমাজ, এমনকি খাদ্য ও পােশাকে পর্যন্ত কোনাে মিল নাই। অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের নিকট পশ্চিম পাকিস্তানিরা সম্পূর্ণরূপেই বিদেশি এবং এই “অবাঙালিরা গত ২৩ বছর ধরিয়া “বাঙালিদের উপর ক্রমাগত একচ্ছত্র প্রভুত্ব ও শােষণ চালাইয়া আসিতেছে। ফলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়ােজনেই বাঙলাদেশের এই স্বাধীনতার প্রয়ােজন ছিল। আমরা এতকাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পশ্চিমি শক্তিগুলাের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনিয়া আসিয়াছি, ভিয়েতনামের আশ্চর্য গণমুক্তির সংগ্রামের কথাও শুনিতেছি বছরের পর বছর, এবং পশ্চিম এশিয়ার ইস্রায়েলি শক্তির বিরুদ্ধে আরবদের আত্মরক্ষার যুদ্ধের কথাও শুনিতেছি গত কয়েক বছর ; কিন্তু আজ আমাদের চোখের সামনেই সীমান্তের ওপারেই আমাদের ভাই ও বন্ধুদের লড়াই চলিতেছে পাকিস্তানি ফ্যাসিস্ত আক্রমণের বিরুদ্ধে। এই লড়াই থেকে আমাদের জীবন এবং আমাদের স্বাধীনতাও বিচ্ছিন্ন নয়। বরং বলা যাইতে পারে বাঙলাদেশের এই স্বাধীনতা-সংগ্রাম ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষারও সংগ্রাম। ব্রিটিশ ভারতে পরাধীনতার আমলে মুসলিম লীগের পাণ্ডারা এবং তাদের অধিনায়ক পরলােকগত এম এ জিন্না দুই-জাতি তত্ত্বের বিষ প্রচুর পরিমাণে ছড়াইয়া দিলেন। কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারী এবং সিন্ধু থেকে আসাম পর্যন্ত সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ হিন্দু-মুসলিম দুই জাতি তত্ত্বের বিষক্রিয়ার আচ্ছন্ন হইয়া গেল এবং বিচ্ছেদ ও হিংসা গােটা সমাজ জীবনকে জর্জর করিয়া ফেলিল। ফলে, দেখা দিল দাঙ্গাহাঙ্গামা ও ভয়াবহ অত্যাচার এবং ধ্বংসলীলা। লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলমানের সংসার জ্বালিয়া পুড়িয়া ছারেখারে গর এবং সেই রক্ত ও অশ্রুর মধ্য দিয়া ভারতবর্ষ অত্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে কাটিয়া—সেই ছিন্নাঙ্গ থেকে পাকিস্তান নামক এক আজব রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেওয়া হইল। আজব রাষ্ট্র এই অর্থে যে, পাকিস্তানের দুইটি অংশ গােড়া থেকেই পৃথক ; কারণ, এই দুইয়ের মধ্যে কোন প্রকার ভূমিগত সম্পর্ক ও সংলগ্নতা নাই। যে কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের ভৌগােলিক সংস্থানের দিক থেকে এই অবস্থাটা অদ্ভুত এবং অবাস্তব। দ্বিতীয়ত, হাজার মাইল দূরবর্তী এই পূর্বাংশেও অন্তত এক কোটি হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানও মােট কয়েক লক্ষ) রহিয়া গেল। সুতরাং দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং ধর্মের ভিত্তিতে দেশ গঠন সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তান পুরাপুরি মুসলমান ছিল না। (পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অবশ্য হিন্দুদিগকে ঝাড়েবংশে উচ্ছেদ করা হইয়াছে দেশভাগের সময়েই।) এই অবাস্তব অবস্থা যে টিকিতে পারে না, এই কঠিন সত্য অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি গােড়া থেকেই বলিয়া আসিতেছিলেন। আজ পূর্ব পাকিস্তানের সম্পূর্ণ “অবলুক্তি” এবং বাঙলাদেশের আবির্ভাব সেই ঐতিহাসিক সত্যকেই চোখে আঙুল দিয়া প্রমাণ করিয়া দিতেছে এবং নূতন করিয়া ঘােষণা করিতেছে যে, হিন্দু মুসলমান দুইটি পৃথক জাতি নয়, তারা এক ভারতমাতারই সন্তান। আর বাংলাদেশ এবং সমগ্র বাঙালি জাতি যে এক ও অভিন্ন সেই সাদা কথাটাও আজ পরিষ্কার হইয়া যাইতেছে। সুতরাং ভারতবর্ষ বিভাজনের মূল তত্ত্বটাই আজ ভাঙিয়া পড়িতেছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ত মিলিটারি চক্র যদি হিটলারের বীভৎস জাতিবিদ্বেষের ঘৃণ্য মনােভাবের দ্বারা বাঙলাদেশকে ক্রমাগত দমন পীড়ন ও তার শােণিত ক্ষরণ করিতে থাকে কিংবা ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশােহর, রাজশাহী প্রভৃতি শহরগুলােতে যেভাবে বাঙালি ছাত্র, যুবক ও বুদ্ধিজীবীদের পাইকারিভাবে হত্যা করা হইতেছে, যদি নাৎসী বর্বরতার এই নরঘাতন-পর্ব চলিতেই থাকে, তবে, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষ এবং আন্তর্জাতিক জগত তার ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া ঘটিতে বাধ্য। যেভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্রমণ্ডলীকে সাবাড় করা হইতেছে, এবং বিভিন্ন জেলায় ঘর থেকে টানিয়া আনিয়া স্ত্রী পুত্রের সামনে রাস্তায় দাঁড় করাইয়া “অবাঞ্ছিত লােকেদের হত্যা করা হইতেছে, তাতে বিদেশিরা পর্যন্ত অনুমান করিতেছেন যে, যারা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার আন্দোলন। করিতেছেন, তাঁদের সবংশে নিধন করা হইবে, যেন ইহজন্মে আর কোন বাঙালি স্বাধীনতার নাম উচ্চারণ করিতে না পারে। হিটলার যেমন ইহুদি জাতিকে সমূলে উৎপাটন করিতে চাহিয়াছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের ভুট্টো-ইয়াহিয়া চক্র তেমনি বাঙলাদেশের একটি প্রজন্ম বা জেনারেশনকে একেবারে শেষ করিয়া দিতে চাহিতেছে। এই হিংস্র জানােয়ারি জিঘাংসা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙলাদেশের সমগ্র বুদ্ধিজীবী সমাজকে উচ্ছেদ করিতে চাহিতেছে। সুতরাং এখানেও বাঙলা-অবাঙালি প্রশ্নটিকে উপেক্ষা করা যায় না। অথচ পশ্চিম ও পূর্বাংশের মধ্যে ঐশ্লামিক ধর্মের দাবি কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব বাঙলার স্বাধীনতার যুদ্ধকে ব্যাহত করিতে পারিলে না কিংবা দুই জাতি তত্ত্বও পথ রােধ করিতে পারিল না।
কিন্তু এর পরিণাম কী? বাঙালিরা এবং ভারতবাসীর কি তাদের সীমানাসংলগ্ন দেশ এবং যে দেশ ২৩ বছর আগেও তাদের স্বদেশ ও মাতৃভূমি ছিল, সেই পবিত্র ভূখণ্ডকে গণহত্যার জল্লাদবৃত্তির মধ্যে এভাবে ধ্বংস হইতে দিবে? সুতরাং প্রশ্ন উঠিতেছে—এর শেষ কোথায়? এর পরিণাম কী? অর্থাৎ বাঙলাদেশের রক্তক্ষরিত এই রণাঙ্গন কি নূতন ভিয়েতনামে পরিণত হইবে? চীন, আমেরিকা, রাশিয়া ও ভারতবর্ষ কি সেই জটিল আবর্তে জড়াইয়া পড়িবে এবং ভারতবর্ষের পার্শ্বদেশ কি পশ্চিমে ও পূর্বে যুগপৎ বিপন্ন বা আক্রান্ত হইয়া পড়িবে? অতএব বুঝা যাইতেছে বাঙলাদেশের এই আগুন তার সীমানা ছাড়াইয়া তার উত্তাপ ও স্ফুলিঙ্গ বহু দূরে ছড়াইয়া দিতে পারে। অতএব মূলগতভাবে বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাও জড়াইয়া পড়িতেছে বইকি এবং এই সূত্র টানিয়াই বলা যায় যে, যেদিন নতুন বাঙলার সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র সুপ্রতিষ্ঠিত হইবে, সেদিন দুই-জাতি তত্ত্বের যেমন কবর খোঁড়া হইবে, তেমনি সার্বভৌম ভারতরাষ্ট্রের স্বাধীনতাও নির্বিঘ্নে, নিঃশঙ্ক পূর্ণতর হইবে।
ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সঙ্গে বাঙলাদেশের ভাগ্য জড়িত বালিয়াই পদ্মা-মেঘনা-ধল্মেবরীইছামতীর এই উত্তাল তরঙ্গ ভারতের মাটিকেও গভীরভাবে এবং নিবিড়ভাবে স্পর্শ করিতেছে, আর লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর চিত্ত উদ্বেলিত হইয়া উঠিতেছে। লক্ষ্য করিবার এই যে, ভারতবর্ষে ও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রশ্নটি ‘বাঙালি-অবাঙালি’র উর্ধ্বে সমগ্র ভারতবাসীর হৃদয় নাড়া দিয়াছে যদিও সংবাদপত্র কোনাে কোনাে ভারতীয় মুসলমান এই সংশয় প্রকাশ করিতেছেন যে, বাঙলাদেশের স্বাধীনতার দাবির প্রতি ভারতবর্ষ একাত্ম হওয়ার ফলে পাকিস্তানিদের এই অভিযােগই প্রমাণিত হইবে যে, ভারতবর্ষ কখনও পাকিস্তানকে অন্তরের সঙ্গে স্বীকার করিয়া নেয় নাই। এই সমস্ত পত্র-লেখকের (যদিও সংখ্যায় নগণ্য) ধারণা যে, পূর্ব বাঙলার এই আন্দোলন পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আন্দোলন এবং এর দ্বারা পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার আইন-কানুনের মূলে আঘাত করিতেছে। কিন্তু এই সমস্ত মুসলিম ভদ্রলােক ভুলিয়া যাইতেছে যে, পূর্ববঙ্গের মােট জনসংখ্যা পাকিস্তানের সমগ্র জনসংখ্যার মধ্যে মেজরিটি কিংবা শতকরা ৫৬ ভাগ। সুতরাং মেজরিটির পক্ষে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্ন উঠিতে পারে না। বরং মেজরিটির ইচ্ছাকেই সম্পূর্ণ বৈধ ও গণতন্ত্রসম্মত বলিয়া মানিয়া লইতে হইবে এবং মেজরিটির সুস্পষ্ট ইচ্ছা ও রায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হইয়া গিয়াছে। দ্বিতীয়ত, বাঙলাদেশ একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জাতিগােষ্ঠী। যদি দুইজাতি তত্ত্বের দাবিতে মুসলিম লীগের অনুরক্ত মুসলমানেরা ভারতবর্ষ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পাকিস্তানের দাবি করিয়া থাকিতে পারেন এবং ১৯৪৭ সালে পার্টিশানের মারফত তাঁদের সেই দাবিতে চরিতার্থতা করিয়া থাকিতে পারেন, তবে, বাঙলাদেশের অধিবাসীরাই বা কেন সেই একই যুক্তিতে আলাদা হইয়া যাইতে পারিবেন না? কারণ, ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিতত্ব এবং ভূগােলে ও ইতিহাস যে কোন প্রশ্নের বিচারেই পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র—যে কথা একাধিকবার উল্লেখ করা হইয়াছে।
কিন্তু যে কথা যাক। ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি জানাইয়াছেন এবং সর্বপ্রকার সাহায্য দানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। ভারতীয় পার্লামেন্টে দলমতনির্বিশেষে সমস্ত সদস্যের পূর্ণ সমর্থনে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা এবং সেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সহযােদ্ধা ও জনগণের প্রতি ঐক্য, সংহতি ও একাত্মতা জ্ঞাপন করা হইয়াছে। আর সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনী বাঙলাদেশে যে জঘন্য ও বর্বর গণহত্যা চালাইতেছে তার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশ করা হইতেছে। বলা বাহুল্য যে, ভারত সরকার ও ভারতীয় পার্লামেন্টের এই মনােভাব বাঙলাদেশ ও ভারতবর্ষের সম্পর্কের প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করিয়া আনিতেছে। কেবল সহানুভুতিপূর্ণ মনােভাব ব্যক্ত করিয়াই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও গবর্নমেন্ট ক্ষান্ত থাকেন নাই, তারা বাঙলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে সােভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন প্রভৃতি বৃহৎ শক্তিগুলাে এবং খােদ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মনােযােগও আকর্ষণ করিয়াছেন। ইতিমধ্যেই এর সুফল ফলিতে শুরু করিয়াছে। প্রকাশ যে সােভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. পদগর্নি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দৃষ্টি বাঙলাদেশের নারকীয় ঘটনাবলীর প্রতি আকষণ করিয়াছেন এবং অবিলম্বে এগুলাে বন্ধ করিবার জন্য অনুরােধ জানাইয়াছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সেনেটর কেনেডি অনরূপ আবেদন উত্থাপন করিয়াছেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সংবাদপত্রসমূহ পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার তীব্র নিন্দা করিয়াছেন।
অবশ্য এই সমস্ত সহানুভূতি … সমর্থন সত্ত্বেও বাঙলাদেশকে … শত্রুর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী প্রচণ্ড সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইবে। … অশ্রুর মধ্য দিয়াই স্বাধীনতা … করিয়া নিতে হইবে এবং বাঙলাদেশের এই অপূর্ব স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ মানুষ যে অংশীদার হওয়ার জন্য উন্মুখ, এ কথা বলা বাহুল্যমাত্র। কারণ, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে আজ মূলগতভাবে সম্পর্কিত।
সূত্র: সপ্তাহ, ৯ এপ্রিল ১৯৭১