You dont have javascript enabled! Please enable it!

তদন্ত চাই

গতকল্য ঢাকার বুকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের নিকটে যে শােচনীয় দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা যেমন মর্মভেদী তেমনি অবাঞ্ছিত। আইন অমান্য, নিয়মভংগ উচ্ছলতা সমর্থনযােগ্য নয়, কিন্তু এই সঙ্গে একথাও সত্য যে, আইন অমান্য হওয়ার মত ক্ষেত্র সৃষ্টি করাও কোনাে গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত নয়।।
বিগত দুই দিনের ঘটনা পর্যালােচনা করিলে দেখা যায় যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা, করিবার দাবির সমর্থনে ছাত্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে প্রায় একপক্ষ পূর্বে ধর্মঘট পালন করিবার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করা হইয়াছিল। গত পরশু তারিখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ ১৪৪ ধারা জারী করিয়া শােভাযাত্রা ও সভাসমিতি বন্ধ করিয়া দেন। গতকাল এই ব্যাপারকে কেন্দ্র করিয়া ছাত্র বিক্ষোভ হইয়াছে, টিয়ার গ্যাস ও গুলি চলিয়াছে, কতকগুলাে হতাহতও হইয়াছে।
১৪৪ ধারা জারী করিবার কোনাে কারণ ঘটিয়াছে কিনা, এই প্রশ্নই সকলের আগে মনে হয়। কয়েকদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন যখন এখানে আসিয়াছিলেন, তখন ঢাকার স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ধর্মঘট পালন এবং বিরাট শােভাযাত্রা করিয়াছিল, তখন শহরে শান্তিভঙ্গ হয় নাই। গতকল্য ছাত্র ধর্মঘট ও শােভাযাত্রা হইলে শান্তিভংগের আশংকা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কতটা নির্ভরযােগ্য সংবাদ পাইয়াছিলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভা দেশবাসীকে তাহা জানাইতে বাধ্য বলিয়া আমরা মনে করি।
গতকল্যকার ঘটনার মধ্যে গুলি চালাইয়া কতকগুলাে ছাত্রকে হতাহত করার ব্যাপার সব চাইতে বড় হইয়া উঠিয়াছে। পাকিস্তানের এরূপ ঘটনা ঘটিতে পারে বলিয়া আমরা কখনও ভাবিতে পারি নাই দেশের জনসাধারণও আশা করে নাই। গুটিকতক বালক ও যুবক যদি নিমবিরােধী কার্য্য করিয়াই থাকে, এমন কি যদি তাহারা কর্তৃপক্ষকে উত্তেজনার কারণও দিয়া থাকে, তাহা হইলেও গুলি চালাইবার মতাে সংকটাপন্ন অবস্থা হইয়াছিল কিনা, তাহা বিশেষভাবে বিবেচ্য, হতাহতদের অনেকের আহত স্থান সম্পর্কে যে সংবাদ পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে নির্বিচারেও গুলি চালনা হইয়াছে বলিয়া আমরা মনে করিতেছি। কেবল টিয়ার গ্যাস ছাড়িয়া জনতা ছত্রভংগ করা কি সম্ভব ছিল না? দেহের উর্ধ্বাঙ্গে গুলি চালান সুবিবেচনা সঙ্গত কিনা, অথবা উহা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কিনা, তাহাই আজ আমরা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করিতেছি। উর্ধ্বাঙ্গে গুলি চালানাের কথা দূরে থাক, মােটেই গুলি চালাইবার প্রয়ােজন হইয়াছিল বলিয়া আমরা মনে করিতে পারিতেছি না।
সমস্ত অবস্থা বিবেচনা করিয়া আমরা মনে করি, একটা নিরপেক্ষ শক্তিশালী ও জনসাধারণের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের লইয়া গঠিত কমিটির দ্বারা এই ঘটনার বিশাদ ও প্রকাশ্য তদন্ত হওয়া আবশ্যক। হাই কোর্টের জজ এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের লইয়া এই কমিটি গঠিত হওয়া প্রয়ােজন। স্বাধীন দেশের নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণের জন্য দেশবাসীর পক্ষ হইতে এই তদন্ত দাবি। করিতেছি। তদন্তকালে প্রধানত নিম্নোক্ত বিষয়গুলির বিচার করা আবশ্যক (১) ১৪৪ ধারা জারী করিবার প্রয়ােজন কি ছিল? (২) বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ এলাকার মধ্যে পুলিশের আক্রমণ চলিয়াছিল কি? (৩) গুলি চালাইবার মতাে অবস্থা ঘটিয়াছিল কি? উপরে আমরা যে তদন্ত দাবি করিয়াছি, উক্ত প্রস্তাব কার্যকরী করিলে সমস্ত ঘটনা এবং জনকয়েক তরুণের মৃত্যুর জন্য কাহারা দায়ী, তাহাও প্রকাশ হইবে বলিয়া আমরা ঘটনা সম্পর্কে বিশদ আলােচনা করিলাম না।
গতকল্যকার দুর্ঘটনায় যে সমস্ত পরিবার শােক-সন্তপ্ত, তাহাদের শােককে আমরা নিজেদের শােক বলিয়া গণ্য করি, আমরা সেই সব পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাইতেছি।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!