You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি যুদ্ধ লাগলে, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানি পাকফৌজের কী হাল হতে পারে, তার নমুনা বয়ড়া বর্ডারের খণ্ড সংগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তান এই থেকে কোনাে শিক্ষা নেবে কিনা, এই প্রশ্ন আছে পাকিস্তানের কাছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতের উপরে চূড়ান্ত আক্রমণ সংঘটিত করে, পাকিস্তান পূর্ব বাংলাকে হারিয়ে ফেলার কোনােই ক্ষতিপূরণ করতে পারে না। পূর্ববঙ্গে যা হারাবে, তা চিরকালের জন্যই হারাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই জুলফিকার আলি ভূট্টোর উক্তিটার কোনাে অর্থ হয়-“পাকিস্তান যা ছিল, তা আর ফিরে আসবে না, নতুন করে পাকিস্তানকে ভাবতে হবে অথবা নতুন পাকিস্তান সৃষ্টি ও রক্ষা করতে হবে।” নতুন পাকিস্তান কী দিয়ে, কাকে দিয়ে পূর্ববঙ্গকে বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অবশিষ্ট চারটি প্রদেশ নিয়েই আপাতত পাকিস্তানকে খুশি থাকতে হবে। কিন্তু সেখানেও অন্তদ্বন্দ্ব ধুমায়িত, যার জন্য সেখানকার ন্যাপ দলটিকেও অবৈধ ঘােষণা করতে হয়েছে। অতএব, পূর্ব পাকিস্তান যখন নতুন (?) পাকিস্তানের হিসেবের বাইরে চলে যাবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের ভারসাম্যে হঠাৎ এমন একটা ধাক্কা পড়বে যে তথাকার রাজনীতিতে টালমাটাল ও তুলকালাম কাণ্ড ঘটতে বাধ্য। ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট রেখে সে টাল সামলাননা যাবে না, ভূট্টো হয়তাে মনে করেন যে সে দায়িত্ব তাঁরই উপর আসবে। এটাকেই তিনি নতুন পাকিস্তান সৃষ্টির ইঙ্গিত বলে হয়তাে ঘােষণা করেছেন। ভূট্টো এমন একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি যে তিনি একটা কিছু না হয়ে শান্ত হবেন না, অতএব ভূট্টোর ভূমিকা ক্রমশ বর্ধমান, এবং ইয়াহিয়ার বিদায়মান। কিন্তু ভূট্টোরই হােক, আর ইয়াহিয়ারই হােক এখন সত্যিকার মাথাব্যথা পশ্চিম পাকিস্তান নিয়েই, পূর্ববঙ্গকে নিয়ে নয়—যদিও পূর্বেও এবং বরাবরই ওদের মাথাব্যথা পশ্চিমকে নিয়েই ছিল, পূর্বদেশের উপনিবেশ পশ্চিমের স্বার্থেই পরিচালিত হতাে।
ভারত সরকার সরাসরি যুদ্ধ করে বাংলাদেশের জন্মবেদনাকে সত্ত্বর সমাপ্ত করার কোনাে কর্মসূচি নেয়নি। নিলে পূর্ববঙ্গকে সাত দিনের মধ্যে পাকরাহুমুক্ত করা মােটেই শক্ত কাজ নয়। ইয়াহিয়া খান বিনাশর্তে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে মুক্তি দিয়ে তাঁরই সঙ্গে যা সমঝােতা করার করুন, এই হলাে ভারত সরকারের নীতি ও যা-কিছু চাপ। পৃথিবীর বড় বড় শক্তিগুলাে এই চাপই ইয়াহিয়া খানের উপরে দিক, এই কথাই ভারত সরকার তথা ইন্দিরা গান্ধী বলে আসছেন। রাজনৈতিক সমাধানের এই একটিই মাত্র ফরমূলা। এই চাপটি যাতে যথাযথ ভাবে পড়ে, তারই জন্য সীমান্ত বরাবর মুক্তি বাহিনীকে কিছুটা ছত্রছায়া ভারতীয় সৈন্য ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে দিতে হচ্ছে এবং বিশেষ করে আমাদের সীমান্তকে নিরাপদ রাখার প্রয়ােজনেও। মােট কথা ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগকে আজও পর্যন্ত অত্যন্ত সন্তর্পণে ও সাবধানতার সহিত নিজের শক্তির লিমিটেড অ্যাপ্লিকেশন বা সীমাবদ্ধ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ বড় কঠিন কাজ, শক্তির সীমাবদ্ধ ব্যবহার, অর্থাৎ যতটা শক্তি আছে তার আংশিক ব্যবহার। হয়ে-যাক-এক-হাত, এ জাতীয় চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত পলিসি থেকে ভারতীয় বাহিনীকে সর্বদা সংযত রেখে চলা বেশ কঠিন কাজ সন্দেহ নেই। তাছাড়া এ যুদ্ধও নয়, অথচ যুদ্ধও এ জাতীয় একটি জটিল যুদ্ধাবস্থার তুলনাও অন্যত্র মিলবে না। সীমাবদ্ধ এই গণ্ডীর মধ্যে, সীমাবদ্ধ লক্ষ্য নিয়ে (ইয়াহিয়া খানকে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলানাের জন্য শেখ সাহেবকে মুক্তি দিয়ে) এবং বৃহত্তর কোনাে যুদ্ধকে এড়িয়ে, যুদ্ধ পরিচালনা করার চেষ্টা ভারত সরকারের তরফ থেকে খুবই স্পষ্ট, এর জন্যই বয়ড়ার সংগ্রাম সর্বত্র একটা সমর-নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে না।
বলা বাহুল্য এই বিলম্বিত তালের যুদ্ধেও পাকিস্তানকে পূর্ববঙ্গ হারাতেই হবে, কোনাে উপায়েই পূর্ববঙ্গকে তার আর ধরে রাখার উপায় নেই। একমাত্র প্রচণ্ড এক সার্বিক যুদ্ধে ভারতকে সম্পূর্ণ পরাভূত ও খণ্ড বিখণ্ড করে দিতে পারতাে যদি পাকিস্তান তবে এই দুরাশা পাকিস্তানের থাকতে পারতাে। যেহেতু অপর কোনাে রাষ্ট্র থেকে (চীনও নয়) যখন এ জাতীয় সহযােগিতার কোনাে ভরসা নেই, তখন পাকিস্তানকে শঙ্কিত হতেই হবে। নিজ অস্তিত্বেরই জন্য। ইয়াহিয়া খান এখন একে ওকে তাকে মায় লঙ্কাকে পর্যন্ত- ধরছেন, একটা কিছু মিটমাটের রাস্তা করে দিতে। এমন কি ইন্দিরা গান্ধীকে (যাকে ইনি একটা স্ত্রীলােক”-বা “দিস ওয়ােয়ামেন” ছাড়া কিছু বলেন না) পর্যন্ত ঈদের বাণীর মারফৎ এই ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন। মােট কথা পাকিস্তান এবারে এক ভয়ানক শক্ত বেড়াজালের মধ্যে পড়ে গেছে।
এদিকে পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি ক্রমশই গুটি কয়েক ক্যান্টেনমেন্টের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ায় বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চল ও ছােট ছােট শহর ও রাস্তাঘাটগুলাে আজ তাদের করায়ত্ত নেই। যশােহর ক্যান্টনমেন্টের পতন শীঘ্র ঘটবে কি না এ খবর আমরা দিতে পারি না, সহসা এই ঘাঁটির পতন যদি না-ই ঘটে তাতেও কিছু আসে যায় না, যদি তাকে ঘেরাও করে রাখা এবং তার রসদ চলাচলে সামূহিক বিঘ্ন ঘটাতে পারে মুক্তিবাহিনী। এবং একটু সময় নিয়েই যদি এই ঘেরাও বা এনসারকেলমেন্ট কাণ্ডটিকে সংগঠিত করে মুক্তিফৌজ, তবে মুক্তিফৌজও নিজের সব বিক্ষিপ্ত শক্তিকে সুসংগঠিত করার অবসর পাবে। কেননা মুক্তি বাহিনীর বিভিন্ন ছােট বড় শক্তিগুলাে যথা গেরিলা, কমান্ডাে, রেগুলার বাহিনী ইত্যাদির মধ্যে শক্তি-সমন্বয়ের কাজটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। মুক্তি বাহিনীর যুবকদের আজ হয়তাে খুবই হতাহত হতে হচ্ছে, অকারণ অত্যুৎসাহে এ সগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ে আনার জন্য আগ্রহ আংশিকভাবে সংগঠিত মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি কারক হচ্ছে। আমাদের মতে অত তাড়াতাড়ির প্রয়ােজন নেই। সময় এখন মুক্তি বাহিনীর পক্ষেই, বাংলাদেশের পক্ষেই। এখনও মুক্তি বাহিনীর পক্ষে defensive offensive নীতি, অর্থাৎ আত্মরক্ষার প্রয়ােজনে যতটা আক্রমণ নীতি সিদ্ধ ততটাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। অবশ্য বৈপ্লবিক যুদ্ধ ক্রমাগত জয়ের পর জয় অর্জন করে যাবার মধ্যে প্রচণ্ড শক্তি ও সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সে জাতীয় অগ্রগতির উত্তুঙ্গ শীর্ষাবস্থায় পৌছানাে পর্যন্ত সর্বাত্মক আক্রমণের পক্ষে অবস্থা যদি অনুমতি না দেয়, তবে অধৈৰ্য্য হয়ে লাভ নেই। একথা অবশ্য সকলেই বােঝে যে যদি যশােহর ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটানাে যায়, তবে একদা দিয়েন-বিয়েন ফুর পতনের ফলে ভিয়েতনাম থেকে যেমন ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের পলায়ন সূচিত করেছিল, তেমনি পূর্ববঙ্গ থেকে পাকিস্তানের পলায়ন সূচিত করবে। কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি ও নেতৃত্ব সম্পূর্ণ হওয়া দরকার।
পাকিস্তান এখন ভারতের উপর সরাসরি যুদ্ধ ঘােষণা করতেও ভয় পাচ্ছে। এ জাতীয় ঘােষণা বা কার্যক্রম নিলে পূর্ববঙ্গকে তার কয়েক দিন, এমন কি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হারাতে হতে পারে। পাকিস্তানের দুর্বলতম অঙ্গটি হলাে তার যােগাযােগ ব্যবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার মাইল দূরত্ব তার যােগাযোেগ ব্যবস্থার প্রধান দুর্বলতা। কোনাে কারণে যদি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যায়, তবে আকাশ পথে ও সমুদ্র পথে এ যােগাযােগ প্রথম দিনেই ছিন্ন হয়ে যাবে। পশ্চিম থেকে পূর্বে কোনাে রসদ বা সৈন্য বা অস্ত্রপাতি পাঠানাে তাে সম্ভব হবেই না, এমনকি কোনাে কারণে যদি পূর্ববঙ্গ পাক সেনাদের পক্ষে নিরাপদ না-থাকে, তবে তাদের সৈন্যসামন্তদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার রাস্তাও বন্ধ হবে। তারপর, পূর্ববঙ্গের মধ্যেই রেল, রাস্তা ও নদীপথ ক্রমশই পাকবাহিনীর হস্তচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। মুক্তি বাহিনীর পক্ষে তাই প্রধান আক্রমণের লক্ষ্য হলাে এই যােগাযােগ ব্যবস্থা পাকিস্তানিদের পক্ষে সম্পূর্ণ অচল করে দেওয়া; তার বন্দর, তার মােহনা, রেল পথ, সড়ক, নদীপথ ইত্যাদির উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নিজেদের মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থায় এর দ্বারা বিশেষ কোনাে ক্ষতি হবে না। কেননা মুক্তিবাহিনীর পথ জনতার পথ, জনসাধারণের মধ্যে অবাধ বিচরণ করার পথ, সে পথ তাদের বন্ধ হবে না যতদিন পর্যন্ত তারা জনতার লড়াই করে যাচ্ছেন। কিন্তু সদর রাস্তা ও পাকা রাস্তা ছাড়া পাকবাহিনীর জীবনযাত্রা সম্ভব নয়। অতএব যশােহর দুর্গ অথবা ময়নামতি দুর্গ অবিলম্বে দখল করার তাড়া মুক্তি বাহিনীর পক্ষে নেই বা থাকা উচিত নয়। পাক বাহিনী প্রথম তাে পূর্ববঙ্গতেই সমগ্রভাবে ঘেরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে, তাছাড়া প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে তাকে খণ্ড খণ্ড করে ঘিরে ফেলতে পারলে এবং ক্রমশ ঘেরের কঠিন চাপ বৃদ্ধি করতে পারলে, পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে কার কাছে? বাংলাদেশের ক্ষুদ্ধ জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করে তার রক্ষা নেই এই আতঙ্ক তার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। সমূহ পরাজয় কালে পাকসমর্থনকারী অবাঙালি মুসলমানেরা ও রাজাকারেরা আবার ছুটে আসবে ভারত সীমান্তেই, ভারতের শরণাপন্ন হয়ে! আর এক ধরনের শরণার্থীর জন্য ভারতকে প্রস্তত থাকা উচিত এখন থেকেই, যদিও বর্তমান শরণার্থীরা দলে দলে দেশে ফিরে যাবেন। যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও পৈশাচিক অত্যাচার ইয়াহিয়া খান তার সৈন্যদের দিয়ে করিয়েছিল, তার প্রতিফল আজ তাদের পেতে হবে। ক্রুদ্ধ জনতাকে সামলাবার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেতৃবর্গের পক্ষে সর্বত্র সম্ভব না-ও হতে পারে।
তারপর, যে রাজনৈতিক সমাধানের কথা সবাই বলেছেন তার বাস্তব অর্থটাই বা কী। বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হবে। পূর্ববঙ্গ থেকে পাক সামরিক বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কেমন করে সরিয়ে নেওয়া যাবে, এ ভাবনাও পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক গােষ্ঠীর একটা বিরাট শঙ্কার বিষয় হতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জের কোনাে কমিটি হয়তাে পাকসামরিক বাহিনীকে পূর্ববঙ্গ থেকে সরিয়ে নেবার দায়িত্ব নিতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ অথবা বৃহৎ শক্তিগুলাে বাংলাদেশের শরণার্থীদের ভারতে আসার পথে কোনাে সাহায্য করেনি, পথে পথে তারা যে ভাবে পাক-গুলিগােলাতে মরেছে তার দিকে কখনও কোনাে দৃষ্টিপাত করেনি, কিন্তু পাকবাহিনীকে নিরাপদে দেশে পৌছে দেবার ভার তারা নিতে দেরী করবে না। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ বা নিরাপত্তা পরিষদকে এ জাতীয় অনুরােধ করা ইয়াহিয়া বা ভূট্টোর পক্ষে সহজ নয়, তবে এ জাতীয় আশ্বাস ব্রিটেন বা আমেরিকা পাকিস্তানকে দেবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া এদের পক্ষে প্রধান সমস্যা নয়, শরণার্থীরা মুক্তিবাহিনীর জয়ের জোরেই নিজেরাই ফিরে যাবেন, কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে অবরুদ্ধ পাকবাহিনী ও পাক সমর্থকদের কী করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে পারবেন সেটাই বােধহয় তাদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে-অদূর ভবিষ্যতে।
নিরাপত্তা কৌন্সিলে সমস্যাটিকে তুলবার জন্য কতিপয় রাষ্ট্রের মারফৎ পাকিস্তান নানা চেষ্টা করে চলেছে। পাকিস্তান ও ভারতকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে নিরস্ত করাই এর “সাধু” উদ্দেশ্য। ভারত তার সৈন্য সামন্ত সীমান্ত থেকে হটিয়ে নিক, পাকিস্তান তার বাহিনীর সাহায্যে মুক্তি ফৌজকে পিষে মারবার স্বাধীনতা পাকবাহিনীকে দিয়ে দেওয়াই এর উদ্দেশ্য। এমন ফন্দিতে ভারত কখনাে পা দিতে পারে না, তা ভারতের পক্ষেও আত্মহত্যার সামিল হতে বাধ্য। বৃহৎ শক্তিগুলাে থেকে এবং নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যত রকম চাপই থাকুক, ভারতকে সেদিকে গ্রাহ্য করলে চলবে না। এক কোটি শরণার্থীর বােঝা যদি ভারতের উপরে চাপিয়ে থাকে পাকিস্তান, তবে ভারতের সম্পূর্ণ অধিকার আছে সীমান্তবরাবর দশ বিশ মাইল মুক্ত করে শরণার্থীদের ওখানে বসিয়ে দেবারও। একথা আমরা বহুপূর্বেও বলেছিলাম। সীমান্ত বরাবর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারের হাতেই শরণার্থীদের স্থান ও দায়িত্ব দিয়ে দেবার যুক্তিসঙ্গত অধিকার আছে ভারতের। মুক্তিবাহিনীর হাতেই আজ নির্ভর করছে বাংলাদেশের মুক্তি এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন অতএব মুক্তিবাহিনীকে বর্জন করার কোনাে নীতি ইন্দিরা গান্ধী গ্রহণ করতে পারেন না। এবং তা তিনি করবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

সূত্র: কম্পাস, ৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১