You dont have javascript enabled! Please enable it!

‘কোনাে শক্তিই বাঙালির ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না’
ভাসানী

সম্প্রতি ২২শে মার্চ চট্টগ্রামে এক জনসভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তি অবধারিত। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হবাে। পৃথিবীতে এমন কোনাে শক্তি নাই যা সাত কোটি বাঙালির ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
মওলানা ভাসানী চট্টগ্রামের পােলাে গ্রাউন্ডে এক বিরাট জনসমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিবর রহমানকে অবিশ্বাস করার কোনাে কারণ নাই। আওয়ামী লীগ তাদের কাউন্সিল অধিবেশনে নীতি হিসাবে সমাজতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বাঙালিদের মধ্যে এ ঐক্য আর কোনদিন আসেনি। সমস্ত দল তাদের মত-পার্থক্য ভুলে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দাবীর পিছনে একতাবদ্ধ হয়েছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বাংলাদেশের মাটি থেকে অতি সত্বর সৈন্যবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় তারা ফিরে যেতে পারবে না বলে তিনি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।
তিনি আরও হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের জনসাধারণ বুলেটকে ভয় করে না এবং বুলেট দ্বারা শাসনও করা যায় না। তিনি শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশের সম্পদ ও দায় ভাগ-বাঁটোয়ারার দাবী করেন। ইয়াহিয়া খানের জন্য এই একমাত্র উপায় বলে অভিহিত করেন।
মওলানা ভাসানী জনসাধারণকে আওয়ামী লীগের সংগ্রাম পরিষদের পতাকাতলে দলবদ্ধ হতে বলেন। তিনি সমস্ত সৌখিন দ্রব্যের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানান। কেননা, তিনি বলেন, বাঙালিরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গরিব। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের অব্যাহত শশাষণের ফলে পঙ্গু হয়ে গেছে। বাঙালিরা তাদের সমস্ত অর্থনৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
মওলানা ভাসানী জনসাধারণকে সমস্ত ক্ষেত্রে উৎপাদনের স্বাভাবিক গতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান, তিনি ভবিষ্যতের প্রয়ােজনে বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায়কে সামরিক শিক্ষা গ্রহণের উপদেশ দেন।
তিনি তাঁর স্বভাব সুলভ ভাষায় বলেন, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি মৃত্যুর পূর্বে আমি যেন একটি স্বাধীন মাতৃভূমি দেখে যেতে পারি।

সূত্র: পূর্বদেশ” ২২শে মার্চ ৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!