বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ (২)
জয়প্রকাশ নারায়ণ
সমস্যাটা যদি শুধু বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়েই হতাে তাহলে আমরাও বাস্তবতাবর্জিত অপ্রাসঙ্গিক অনেক বুলি আওড়াতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মৌলিক জাতীয় স্বার্থ যে কতখানি বিপন্ন তা আমি আমার কথা দিয়ে হয়ত আমাদের শাসকদের বােঝাতে পারব না, তাই প্রধানমন্ত্রীর কিছু উক্তিই উদ্ধৃত করছি (উক্তিগুলাে ২৪শে মে ১৯৭১ লােকসভায় প্রদত্ত এবং সরকারিভাবে মুদ্রিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে): শরণার্থী স্রোতের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল দেশত্যাগ মানুষের লিখিত ইতিহাসে অভূতপূর্ব। গত আট সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ হতে প্রায় ৩৫ লক্ষ লােক ভারতে এসেছে…। দেশভাগের পর থেকে উদ্বাস্তু বলতে আমরা যা বুঝে এসেছি এঁরা তা নন। এঁরা যুদ্ধের কবলে পড়েছেন, সীমান্তের ওপারে সামরিক সন্ত্রাস হতে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে এখানে এসেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “শত নয় সহস্র নয় লক্ষ লক্ষ নাগরিককে বেয়নেটের মুখে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার অধিকার কি পাকিস্তানের আছে। আমাদের কাছে এ এক অসহ্য অবস্থা।”
তা ছিল মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহ, এখন হচ্ছে অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহ। তখন শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ লক্ষ, এখন ৯৫ লক্ষ। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মতে তখনই যদি অবস্থা অসহনীয় হয়ে থাকে তারপর গত পাঁচ মাসে যে ক্রমাগত শরণার্থীর স্রোত বেড়েই চলেছে তা আমরা কী করে সহ্য করতে পারলাম? সম্ভবত আমাদের প্রিয় আন্তর্জাতিক উপকারীদের বন্ধুসলভ চাপই আমাদের সহ্যের স্তর উন্নীত করতে সাহায্য করেছে। জানি না কোনােদিনই আমাদের সহ্যের সীমায় আমরা পৌছব কিনা।
একই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “ভারতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এবং ভারতেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে তার রাজনৈতিক বা অন্যান্য সমস্যার সমাধান করতে দেয়া যায় না। পাকিস্তান কিন্তু ঠিক তাই করে চলেছে, তথাপি তা থামাবার জন্য প্রধানমন্ত্রী এই মাত্রই তিনি করেছেন তাঁর দূতদের অন্যান্য রাষ্ট্রে পাঠিয়ে তাদের অনুরােধ উপরােধ করেছেন যে কাজ পাকিস্তানকে করতে দেয়া যায় না বলে তিনি গম্ভীরভাবে ঘােষণা করেছেন তা থেকে তারা যেন পাকিস্তানকে বিরত রাখেন। পাকিস্তান অন্যান্য রাষ্ট্রের ক্ষতি করে এবং তাদের মাটির ওপর দাঁড়িয়ে তাে তার সমস্যা সমাধান করতে চায়নি; তাহলে ভারত তার নিজের জাতীয় স্বার্থে করতে প্রস্তুত নয় তা তাদের কেউ করবে খুব কম করে বললেও এ আত্মবঞ্চনা নয় কি? অন্য কোনাে রাষ্ট্র যে আমাদের কল্যাণে, ভারতকে তার অসহ্য’ বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধার করার জন্য বীর পুঙ্গবের ভূমিকা নেয় নি তাতে অন্তত আমি তাে তাদের দোষ দিতে পারি না। বীর্যবত্তার যুগ যদি কখনও থেকেও থাকে, বহুকাল তা অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন: শুধু ভারতই নয় প্রত্যেক দেশকেই তার নিজের স্বার্থ দেখতে হয়।…ওরা (অর্থাৎ পাকিস্তানিরা) বিশ্ব মানবতার একটি বিরাট ভূখণ্ড এই যে ভারত তার শান্তি ও স্থায়িত্ব বিপন্ন করছে।” তারপর ঝঙ্কৃত শব্দে তাঁর বক্তৃতার উপসংহার টেনে প্রধানমন্ত্রী বললেন বিশ্ব যদি এ অবস্থায় বসে থাকে তাহলে আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন কাঠামােকে বাঁচানাে এবং পরিপুষ্ট করার জন্য বাধ্য হয়েই প্রয়ােজন মতাে সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করব। বাংলাদেশ প্রশ্নে দেশের মৌলিক স্বার্থ কিভাবে জড়িয়ে আছে এর চেয়ে স্পষ্টতর ভাষ্য এবং যে কোনাে অবস্থায় দেশরক্ষা ও দেশের স্বার্থরক্ষার তাগিদে সর্ববিধ ব্যবস্থা অবলম্বন সম্পর্কে পৃথিবীকে এর চেয়ে পরিষ্কার ও শক্ত হুঁশিয়ারী আর কিছু হতে পারে না।
আজ পাঁচ মাস পরে এই কথাগুলাে কত অসার মনে হয়। এই পাঁচ মাসে আমাদের অবস্থা তাে কেবলই ঘােরালাে হয়েছে। কাজ করার যখন কোনাে ইচ্ছাই ছিল না তখন এ ধরনের বীরত্ব ব্যঞ্জক উক্তি করার কী প্রয়ােজন ছিল? কথা এবং কাজের এই ব্যবধানই পৃথিবীতে এই দেশের মর্যাদা মারাত্মক রূপে ক্ষুন্ন করেছে, দেশের নেতাদের সম্পর্কে লােকে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে।
কথা-কথা-কথা কিন্তু কোনাে কাজ নয়, এর আর একটি মারাত্মক পরিণাম হলাে দেশের মধ্যে দিব্বি নিশ্চিন্ততার ভাব ছড়িয়ে পড়েছে, সম্ভাব্য পাকিস্তানি দুষ্কর্মের মােকাবেলা করার মতাে কোনাে মানসিক প্রস্তাব নেই। স্বাধীন ভারতের এই সাংঘাতিক সংকটে জাতীয় নেতৃত্বের এর চেয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থতা কল্পনা করা কঠিন।
তাঁর সংযম ও রাষ্ট্রিক বিচক্ষণতার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য রাশি রাশি সুপারিশপত্র পাচ্ছেন, কিন্তু তাতে এই দেশ যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বােঝার চাপে আর্তনাদ করছে তা বিন্দুমাত্র হাল্কা হয়নি এবং জাতির অস্তিত্ব যেভাবে বিপন্ন হয়েছে তাকেও ঠেকানাে যায়নি। মাসের পর মাস আন্তর্জাতিকস্তরে রাজনৈতিক সমাধানের খোঁজ চলছে, কিন্তু তার এইমাত্র ফল হয়েছে ইয়াহিয়া খান বন্ধুঅবন্ধু সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং তাঁর পথ হতে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করেছেন। তা তিনি করতেই পারেন, তার একাধিক শক্তিশালী বন্ধু আছে।
আসলে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের চাবিকাঠি কেবল ভারতের হাতেই আছে। আমি এর আগেও বলেছি স্বাধীনতা ছাড়া কোনাে রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। সুতরাং যার জীবন মরণের প্রশ্ন বাংলাদেশের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত সেই ভারতকেই রাজনৈতিক সমাধানের এই নিষ্ফল সন্ধান বন্ধ করতে হবে এবং সাহস করে বাংলাদেশ ও তার ন্যায়সঙ্গত সরকারকে স্বীকার করে শক্ত হাতে প্রশ্নটিকে চিরদিনের মতাে মােকাবিলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সেই উপযুক্ত কথাই বারবার বলে চলেছেন। ইতিহাস প্রমাণ করবে তিনি ইতিমধ্যেই এ রকম কয়েকটি উপযুক্ত মুহূর্ত হারিয়েছেন।
সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ছিল এপ্রিলের প্রথম পক্ষে, যখন বাংলাদেশের নেতৃবর্গ ও মুক্তিযােদ্ধাগণ সাহায্যের জন্য চীকার করেছিলেন, যখন তারা তাদের সরকারও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন এবং তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য এ সাহায্যের আশায় দিল্লী ছুটে যাচ্ছিলেন। তখন যদি আমরা সাড়া দিতাম তাহলে পৃথিবীতে যা কিছু শােভন, নীতিসম্মত ও মানবিক তা আমাদের দিকে আসত। তখন আমরা যেতাম বন্ধুদের এবং মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্যকারীর ভূমিকা নিয়ে, আক্রমণকারীর ভূমিকা নিয়ে নয়—আর এই সাহায্যের জন্য বারবার অনুরােধ আসছিল বাংলাদেশের সঙ্গত ও সংবিধানিক সরকারের কাছ থেকে, যে সরকারকে জনকয়েক মীরজাফর বাদে সকলেই পূর্ণ সমর্থন করেন। অথচ সেই সুযোেগ আমরা বৃথায় যেতে দিয়েছি যে সুযােগ কোনাে জাতির জীবনে একশ বছরে একবার আসে। তখনকার এই নিষ্ক্রিয়তার জন্য ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বদনাম দেওয়া হচ্ছে। আমাদের বীর জোয়ান ও তাদের সুযােগ্য অফিসারদের সম্পর্কে এর চেয়ে অধিক অশােভন আর কিছু হতে পারে না। সৈন্যবাহিনীর অপ্রস্তুতি নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী,-আপৎ কালের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তারা দিতে পারেননি।
গােপন হলেও এখন একথা প্রায় সকলেই জানে ঢাকাস্থিত আমাদের ডেপুটি হাইকমিশন বারবার সরকারকে সাবধান করছিলেন যে, মুজিব-ইয়াহিয়া আলােচনা আলেয়া ছাড়া কিছু নয়, পাকিস্তান পূর্বসীমান্তে সৈন্যসংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং আজ হউক কাল হউক সে ঝাপিয়ে পড়বে। অন্য দিকে একথাও জানা ইসলামাবাদস্থিত আমাদের হাইকমিশন বরাবর অনেক আশার কথা বলেছেন। দুজনেই সমান যােগ্য প্রতিনিধি, তাঁদের ওপর দোষারােপ করে লাভ নেই। কিন্তু যখন দুটি সম্ভাবনাই ছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তব্য ছিল, যে কোনাে একটি সম্ভাবনার জন্যই প্রস্তুত থাকা। আমাদের সুদক্ষ প্রধান সেনাপতিকে যদি অত্যন্ত খারাপ সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হতাে, তাহলে আমি নিশ্চিত জানতাম আমাদের সৈন্যবাহিনীকে দোষ দেবার কোনাে কারণই থাকত না।
কোনাে কোনাে মহলে অনেক করে বলা হয়েছে যে, তেমন কিছু করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাপারটা পাক-ভারত যুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াত। আজ হউক কাল হউক সে ঝুঁকি নিতেই হবে, কেননা আর কোনাে বিকল্প নেই। কিন্তু এপ্রিলের সেই গােড়ার দিকে অবস্থা খুবই অনুকূল ছিল এবং বিশ্বের লােক জেগে উঠবার ও চলতি ধরনে সােরগােল তুলবার আগেই প্রশ্নটির মীমাংসা হতে পারত। এই অনৈতিক দোষদর্শী ও হৃদয়হীন পৃথিবীতে কাজ করে ফেললে তবে লােকে তা হিসেবের মধ্যে আনে। আমি একথা বলছি না ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশ দখল করে নেওয়া, কিন্তু তাঁদের সাহায্যে আমাদের ছুটে যাওয়া উচিত ছিল, মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে মিলে দশ পনেরাে দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলা উচিত ছিল। তারপর আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরও করতে এবং বাংলাদেশ থেকে সরে আসতে পারতাম যদি না বাংলাদেশ সরকার চাইতেন কোনাে না কোনাে ধরনে আমাদের সামরিক সাহায্য বাংলাদেশে আরও কিছুদিন থাকুক, আমাদের আধুনিক সমরাস্ত্র এবং অফিসারগণ বাংলাদেশের নিজস্ব বাহিনী গঠনে কিছুদিন সাহায্য করুক।
মাত্র এই একটি সুযোেগই হাতছাড়া হয়নি। কিন্তু সে সব কথা বলতে গেলে তা ক্লান্তিকর হবে। কাজের কথা হল যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে গেলেও এখন পুরােপুরি সাহস করে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত এবং তাঁদের স্বাধীনতা অর্জনের সগ্রামে সর্বতােভাবে সাহায্য করা উচিত। তাতে হয়ত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, কিন্তু তেমন পরিস্থিতির জন্য যে কোনাে অবস্থাতেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শ্রীমতী গান্ধী বারবার জোর দিয়ে বলছেন বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েও স্বাধীনতা সংগ্রামে সম্ভবমতাে সমস্ত সাহায্য দেওয়া যেতে পারে। এ কথা শুধু এদেশের লােকের চোখে ধূলাে দেওয়া হচ্ছে। কোনাে সন্দেহ নেই আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচ্ছন্নভাবে কিছু সাহায্য দিচ্ছি। তা আমরা যতই অস্বীকার করি, গত কয়েকমাস ধরেই পৃথিবীর সংবাদপত্র তা নিয়ে লিখছে এবং পৃথিবীর কোনাে বৈদেশিক দূতাবাসের কাছেই তা গােপন নয়।
আমাদের বিশ্বাসযােগ্যতা আরও ক্ষুন্ন করা ছাড়া এ ধরনের নিরর্থক দোমুখাে কাজে কী ফল হচ্ছে? কোনাে কোনাে দেশ যদি অভিযােগ করে যে আমরা গােপন সাহায্যের দ্বারা বাংলাদেশে সংঘাত জিইয়ে রাখছি তাহলে সত্যিই কি আমরা তাদের দোষ দিতে পারি? অতএব এখন আর বীরত্বব্যঞ্জক উক্তি নয় বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রয়ােজন। আমি আগেই বলেছি বাংলাদেশ প্রশ্নের রাজনৈতিক সমাধান শুধু ভারতের হাতেই আছে। ভারত যদি এগিয়ে যায়, নিশ্চিতরূপে অন্যরাও তা অনুসরণ করবে। ভারত এত বন্ধুহীন নয়। অন্যদের সাহায্য যদি ভারতের প্রয়ােজন, ভারতের সাহায্যও অন্যদের কম প্রয়ােজন নয়।
শুরুতে ভারতীয় সংসদ পরিষ্কার ভাষায় ও একমত হয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে প্রস্তাব নিয়েছিলেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমগ্র জাতি এই প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর দ্বিধাগ্রস্ততা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষমতা, একই সময়ে গরম ও নরম উক্তি জাতির মানসিকতা বিভক্ত ও হীনবল করে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যের কথা, এত বড় সংকটে যখন জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত জরুরি প্রয়ােজন- তখনও তিনি তার ভাগ করার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, কয়েকটি পার্টির বিরুদ্ধে এই অশােভন অভিযােগ করছেন যে তারা শুধু দলের স্বার্থে নয় সাম্প্রদায়িক স্বার্থেও বর্তমান অবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু কোনাে পার্টি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ জাগাবার উদ্দেশ্যে বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছে একথা অসত্য।
প্রধানমন্ত্রীর একজন শুভাকাঙ্খীরূপে আমাদের ইতিহাসের এই সংকট মুহূর্তে তাঁকে আমার বিনম্র পরামর্শ: তিনি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠুন, তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশ ও রাজনৈতিক দলগুলােকে ঐক্যবদ্ধ করুন, জনগণকে পরিষ্কারভাবে পথ দেখান। এবং তাদের খােলাখুলি বলুন জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে ত্যাগ ও দুঃখবরণ করতেই হবে। তা যদি তিনি করেন এবং এই জরুরি মুহূর্তের উপযুক্ত কর্মে প্রবৃত্ত হন তাহলে তার যে ব্যক্তিগত আকর্ষণ আছে, যােগ্যতা আছে, তা দিয়ে জনগণের মহত্তম শক্তিকে তার পশ্চাতে দুর্ভেদ্য ব্যুহের মতাে সংহত করতে সমর্থ হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর প্রীতিবশতই আমি বলছি তিনি আমার এই কথাগুলাে গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। আমি যে সমালােচনা করেছি তা তাঁকে সাহায্য করার জন্য, হেয় করার জন্য নয়। যে রাজনৈতিক আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে কারুর সততাই প্রশ্নাতীত নয়। কিন্তু আমার কোনাে রাজনীতি নেই, যা কিছু আমি বলেছি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সরাসরি বলেছি, আমার সাধ্যমতাে সততা ও দেশপ্রেম অন্তরে রেখেই আমি কথাগুলাে বলেছি। [মূল ইংরেজি। অনুবাদ-মনকুমার সেন]
সূত্র: কম্পাস, ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৭১