You dont have javascript enabled! Please enable it!

ক্ষমতা হস্তান্তর- পুনর্বিচার (১)
অনিল চট্টোপাধ্যায়

১৯৪৭ সালের ২০ জুন। সময়, সন্ধ্যা।
বেলা তিনটেয় ইউরােপীয় সদস্যগণ ছাড়া বঙ্গীয় আইন সভার সদস্যরা এক যৌথ বৈঠকে মিলিত হলেন। ঐ বৈঠকের অব্যবহিত পরেই সদস্যরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠকে বসলেন। এক দল প্রতিনিধিত্ব করলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলােকে। আর একদল প্রতিনিধিত্ব করলেন অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলােকে।
অপরাহ্ন ৪টা ১৫ মিনিট। স্থির হলাে, বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করতে হবে। এটাও সিদ্ধান্ত করা হলাে যে অমুসলিম সংঘ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলাে ভারতীয় গণপরিষদে যােগ দেবে। আর ভারতের যেসব অঞ্চলের প্রতিনিধিরা ভারতীয় গণপরিষদে যােগ না দিয়ে নতুন ও পৃথক গণপরিষদে যােগ দিতে চাইল, বাংলার মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলাের প্রতিনিধিরাও সেই গণপরিষদে যােগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করল।
ঐ রকম এক বিষন্ন পরিবেশে আইনসভা ভবনের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে অবস্থিত বটগাছের দীঘল বিস্তৃত ছায়া ধরে ক্লান্তপদে বেরিয়ে এলেন আইন সভা ভবন থেকে সদস্যরা, উর্ধ্বতন সরকারি কর্মচারীরা, আর, উপস্থিত প্রত্যেকেই। ত্রিপুরা সাধারণ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, এম, এল, এ, কে দেখলুম ঐ বটগাছের তলায় দাঁড়াতে। তার সারা মুখে তীব্র বেদনা ও কষ্টের ছাপ। বাংলার রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান যেভাবে করা হলাে তাতে মনকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারায় তিনি যে কী মানসিক যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন সে বিষয়ে আমরা ভালােভাবেই অবহিত ছিলুম। জীবনের ধন-আদর্শই হারিয়ে ফেলে সত্যিই তিনি কেঁদে কেঁদেই রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দিতেন। বঙ্গ বিভাগের বিরুদ্ধে ওকালতি করার জন্য পণ্ডিত নেহেরু তাকে যে কত তিরস্কার করেছিলেন, তা সকলেই জানত।

সূত্র: ২২শে মে ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!