পূর্ববাংলার চিন্তাধারা
সুভাষ চন্দ্র সরকার
স্বাধীনতা লাভ হলে স্বর্গপ্রাপ্তি হবে এমন একটা আশায় হিন্দু বাঙালিরা বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল। একথা আজ অনেকেই ভুলে থাকতে চান যে বাঙালি মুসলমানরা কিন্তু বাংলাদেশ ভাগ করতে চাননি; তাঁরা বাংলাদেশ এক থাক তাই চেয়েছিলেন। হিন্দু বাঙালিরাই বাংলাদেশ ভাগ হােক চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ ভাগ হয়ে পূর্ব পকিস্তানের বাঙালিদের লাভ বা ক্ষতি যাই হয়ে থাকুক না কেন ভারত স্থিত বাঙালিদের কোনাে লাভ হয়েছে কি? এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে ১৯৪৭ সালে যদি বাংলাদেশ ভাগ না হতাে তবে বর্তমান পশ্চিম বঙ্গে যে সকল হিন্দু বাঙালিরা আছেন তাদের অনেক সাম্প্রদায়িক নিগ্রহ ভােগ করতে হতাে। যেহেতু হিন্দুরা বাংলার প্রশাসনিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, হয়তাে বাংলাদেশ ভাগ না হলে সে কারণে মুসলমানদের পক্ষে আত্মচেতনা লাভ করতে আরও দেরী হতাে (যেটা হিন্দুদের প্রাধান্য থেকে মুক্তিলাভ করার পর পাকিস্তানের মুসলমানদের পক্ষে বোেঝা সহজেই সম্ভব হয়েছে)। কিন্তু হিন্দু মুসলমানের চুলচেরা বিচার বাদ দিয়ে মােটামুটিভাবে জাতির ভাগ্য সম্পর্কে আলােচনা করলে কি এমন কোনাে সিদ্ধান্ত করা যায় যে অখণ্ডিত বাংলাদেশে বাঙালিদের অবস্থা বর্তমান অপেক্ষা কোনাে ক্রমেই খারাপ থাকতাে? বাংলা খণ্ডিত হওয়ায় বাঙালি, কি পশ্চিম বঙ্গে কি পূর্ব বঙ্গে অধিকার চ্যুত হয়েছে। তাই দুই বাংলারই বাঙালি আজ দুর্দশাগ্রস্ত- ধর্মের ডাক কোনাে বাংলাতেই বাঙালির দুর্দশা এড়াতে সাহায্য করেনি।
বাঙালি জীবনের বাস্তব রূপ সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী ক্রমশঃ সচেতন হলেও পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতস্থিত বাঙালিদের এ বিষয়ে চৈতন্য উদয় এখনও হয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ভারতের বাঙালিদের মধ্যে আদর্শগত এমন একটা ধোকার সৃষ্টি হয়েছে যে তাদের অধিকাংশই তাদের সীমিত এবং স্বার্থবদ্ধ গােষ্ঠীর বাইরে আসতে তাে পারছেনই না; এই সংকীর্ণ গণ্ডীর বাইরে যে একটা বিরাট জগত রয়েছে তাকে দেখতেও পাচ্ছেন না। (পাটনার মতাে ক্ষুদ্র জায়গায় মুষ্টিমেয় বাঙালি অধিবাসীদের মধ্যেও যে ধরনের নিচ এবং দুর্নীতিপূর্ণ দলাদলি রয়েছে তা থেকেই বাঙালিদের আত্ম অচেতনতা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা করা যায়)। বাঙালি মৌলিক সমস্যাগুলাে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আত্মঘাতী স্বার্থান্ধ কলহে মত্ত রয়েছেন।
এই অচেতনতার একটি প্রকাশ পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের হিন্দু বাঙালিদের মনােভাবে। অনেক হিন্দু বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের জয়কে, বা কোনাে সাহসী পাকিস্তানি মুসলমান নেতার রচনাকে প্রশংসা করে নিজেদের “অসাম্প্রদায়িক মনােভাব জাহির করার চেষ্টা করেন। প্রশংসা যােগ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বা কর্মকে ভুল করে প্রশংসা করলেও সে কাজকে ভালাে বলতে হবে। সুতরাং যে সকল ভারতীয় বাঙালি হিন্দু পূর্ব পাকিস্তানের গণজাগরণের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাদের আমি অভিনন্দন জানাতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাছে আমার বিন্ত্র নিবেদন এই যে তারা যেন এই প্রসঙ্গে, হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক সম্বন্ধেও সচেতন হন। খুব কম হিন্দুই এ সম্পর্কে সচেতন যে হিন্দুরা যেরূপ হিন্দুত্ত্ব নিয়ে গৌরবান্বিত, মুসলমানরাও তেমনি তাঁদের ধর্ম নিয়ে গৌরবান্বিত। হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে সদ্ভাব সৃষ্টি করার জন্য যেমন তাদের ধর্ম এবং আচার ছাড়তে রাজী নন, মুসলমানরাও তেমনি হিন্দুদের সঙ্গে মিলনের জন্য তাঁদের আপন ধর্ম এবং সমাজ ছাড়তে রাজী নন। কতজন হিন্দু, মুসলমানকে মানুষ এবং মুসলমান বলে শ্রদ্ধা করতে শিখেছেন? এ প্রশ্ন মুসলমানদেরও করা যায়; কিন্তু যেহেতু আমি হিন্দু বাঙালি ভারতবাসী, সেহেতু আমি আমার স্বদেশবাসী, সমধর্মী এবং সহভাষীদের কাছেই এ প্রশ্নটা ওঠাতে চাই। মুসলমানদের প্রতি আমাদের (অর্থাৎ হিন্দুদের) মনােভাবটা দ্বিধাগ্রস্ত (ambivalent)। সজ্ঞানে আমরা অনেকেই মনে করি যে মুসলমান আমাদের নিকটজন; কিন্তু কার্যক্ষেত্র অজ্ঞাত মনের অবিশ্বাস ও বিদ্বেষের ভাবটাই আমাদের ব্যবহারকে অধিকতর প্রভাবিত করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায়; আমাদের চেতনাকে অধিকতর ব্যাপক এবং গভীরতর করা।
পরস্পরের মধ্যে সশ্রদ্ধ বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তােলার সমস্যা কেবলমাত্র হিন্দুদের নয় অবশ্যই। এ সমস্যা মুসলমানদেরও রয়েছে। দুঃখের বিষয় ভারতীয় মুসলমান সমাজে এখনও অজ্ঞতা ও কুসংস্কারেরই প্রাধান্য, আশার বিষয় এই যে পূর্ব বাংলার শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে এই চেতনা বিশেষ ভাবে বর্তমান এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের তুলনায় অনেক বেশি প্রগতিশীল চিন্তা ধারার ধারক ও বাহকরূপে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই দিন থেকে পূর্ব বাংলার চিন্তানায়কদের কাছ থেকে ভারতীয় বাঙালি হিন্দুদের আজ অনেক শিক্ষা নেবার দিন এসেছে। ইতিহাসের অমােঘ বিধানে পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ ভারতীয় হিন্দু এবং মুসলমান বাঙালিদের থেকে চিন্তার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়েই অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন। পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি সংস্কৃতির অবিভাজ্যতা সম্পর্কে পুরােপুরি ওয়াকিবহাল। তাই তাঁরা আবেগবশে বা বিদ্বেষ বশে কোনাে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে যুক্তি ও বিজ্ঞানের সাহায্যেই জাতীয় জীবনের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলাে নেবার পক্ষপাতী। যখন কোনাে ব্যক্তি বা জনগােষ্ঠী জীবনে যুক্তিকে প্রাধান্য দিতে পারেন তখন তাঁদের অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। যুক্তি এবং অন্ধ ভাবাবেগের মধ্যে বিরােধ যত বেশি গভীর হয়, যুক্তির প্রাধান্য তত বেশি সুফল দায়ী হয়। একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানরা যদি পূর্ব বাংলার কোনাে আঞ্চলিক ভাষাকেই শিক্ষিত পাকিস্তানি বাঙালিদের ভাবধারা বিনিময়ের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতেন তবে তা খুব অস্বাভাবিক বা অন্যায় হতাে না। কলিকাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কলিকাতার ভাষাকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাহন না করলে কি খুব বেশি দোষ দেওয়া যেত? কিন্তু তারা তা করেননি পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা রচনাবলী এবং বেতার বার্তা শুনলেই তা বুঝতে পারা যায়। এ সম্পর্কে স্বৰ্গত ড. মুহম্মদ আবদুল হাই পাকিস্তানের কোন উচ্চারণ গ্রহণ করা হবে এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করে যা লিখেছেন তা সবিশেষ প্রণিধানযােগ্য। তিনি লিখেছেন- “চলতি উচ্চারণকে যারা কলকাতা, শান্তিনিকেতন তথা পশ্চিম বাংলা ভিত্তিক বলে বর্জন করতে চান, আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। এ উচ্চারণ পশ্চিমবাংলা ভিত্তিক হলেও প্রাক-আজাদী যুগের বহু জিনিসের মতাে আমরা এর উত্তরাধিকারী। এই উচ্চারণই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ আদর্শ উচ্চারণ গড়ে তােলার ভিত্তি। এ উচ্চারণ পশ্চিমবাংলার হলেও সুদূর ভবিষ্যতেও পশ্চিমবাংলাতেও অবিকৃত থাকবে না, বলা বাহুল্য তিরিশ-চল্লিশ বছর পরে পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলার আদর্শ উচ্চারণও স্বতন্ত্র পথ ধরে একে অন্য থেকে পৃথক হয়ে দাঁড়াবে।… যতদূর সম্ভব বর্তমানের উচ্চারণের শালীনতা ও মাধুৰ্য্য রক্ষার্থে প্রথমত: আমাদের শিক্ষকদের উচ্চারণ পরিশােধনের অভিযানই চালাতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কলেজগুলাে এবং বিশ্ববিদ্যালয় দুটোকেই বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলােতে বর্তমানে যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছে তাদেরকে উচ্চারণের গুরুত্ব সম্বন্ধে নানাভাবে অবহিত করতে হবে, আর যেসব শিক্ষক এ প্রতিষ্ঠানগুলােতে কোনদিনই আসেননি, গ্রীষ্ম কি হেমন্তকালীন অবকাশে তাঁদের নিয়ে সভা-সমিতি করে কিংবা প্রয়ােজন হলে Refresher Course এর ব্যবস্থা করে তাদেরকেও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ করে তুলতে হবে। এভাবে এগুলে অদূর ভবিষ্যতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি Standard Pronounciation বা (সকলের গ্রহণযােগ্য একটি উচ্চারণ গড়ে তােলা) আদর্শ উচ্চারণ না হােক অন্তত Received honounciation বা সকলের গ্রহণযােগ্য একটি উচ্চারণ গড়ে তােলা সহজসাধ্য হয়ে উঠবে।” (দ্র: মুহম্মদ আবদুল হাই; “আমাদের বাংলা উচ্চারণ” মৈত্রেয়ী দেবী সম্পাদিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রবন্ধ সহ” গ্রন্থে পৃ: ১৩-১৪)।
পূর্ব বাংলার মুসলমান বুদ্ধিজীবীগণ বাঙালি সংস্কৃতির সংকট সম্পর্কে আলােচনা করছেন গভীর অভিনিবেশ সহকারে। পৃথিবীর অন্যান্য শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদদের দর্শিত পথ অনুসরণ করে তারা আত্মসমালােচনাকেই জ্ঞানের পথ বলে ধরে নিয়েছেন, মুসলমানদের দুর্বলতার সম্পর্কেই তাই তারা বেশি আলােচনা করেন। বাঙালি সংস্কৃতির সংকট নিয়ে আলােচনা করে বদরুদ্দীন ওমর লিখেছেনমুসলমানদের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য প্রভাব কিন্তু তাদের সাংস্কৃতিক চেতনার ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরী অথবা সুফলপ্রসূ হলাে না। এর প্রধান কারণ একদিকে তাদের ইংরেজি বিদ্বেষ এবং অন্যদিকে হিন্দুদের প্রতি বিরূপতা!… ইংরেজ বিদ্বেষের ফলে তারা পাশ্চাত্য শিক্ষাদীক্ষার প্রতি অনেক ক্ষেত্রে হয় বিরূপ মনােভাব সম্পন্ন। আবার হিন্দু বিদ্বেষের ফলে তারা ভারতীয় সংস্কৃতি এবং বাংলার সংস্কৃতি থেকেও নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। পাশ্চাত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রায় অস্বীকার করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা গঠন করতে উদ্যত হয় তাদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। এ প্রচেষ্টা যে কৃত্রিম এবং অস্বাভাবিক সেটা তার ব্যর্থতার দ্বারাই অনেকাংশে প্রমাণিত হয়।’ [দ্র. বদূরুদ্দীন ওমর “বাঙালি সংস্কৃতি সঙ্কট’- মৈত্রেয়ী দেবী সম্পাদিত উক্ত পুস্তক পৃ. ১৬)। এ বক্তব্য পড়ে যদি কোনাে হিন্দু বাঙালি মনে করেন যে ভুল কেবল মুসলমানরাই করেছেন তবে তার মতাে ভ্রান্ত আর কেউ নয়। যদি বাঙালি সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হয় তবে আমাদের অর্থাৎ হিন্দু বাঙালিকে নির্মমভাবে নিজেদের আত্মসমালােচনা করে আমাদের চিন্তাধারা এবং ব্যবহারের মধ্যে যা দুর্বল এবং পরিতাজ্য তাকে অবিলম্বে পরিত্যাগ করতে হবে। খ্রিস্টানদের খাদ্য এবং পােশাকের জন্য আমরা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। কিন্তু মুসলমানদের উৎসব উপলক্ষেও যদি গােমাংস ভক্ষণ হয় আমাদের নাসিকা স্বতঃই কুঞ্চিত হয়। এই মানসিক স্ববিরােধিতা থেকে আমাদের হিন্দু বাঙালির মুক্তিলাভ করতে হবে।
মুসলমানরা পৌত্তলিকতার বিরােধী। কিন্তু মুসলমান হয়েও ড. মুখলেসুর রহমান (যিনি বর্তমানে রাজশাহীস্থিত বরেন্দ্র রিসার্চ সােসাইটির অধ্যক্ষ) যেরূপ নিষ্ঠা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রাচীন বরেন্দ্রীর মা ও শিশুমূর্তি সম্পর্কে এবং প্রাচীন ভারতে মাতৃকা উপাসনার সাক্ষ্য-প্রমাণ সম্পর্কে আলােচনা করেছেন তা ভারতে যে কোনাে হিন্দু পণ্ডিতের পক্ষেই শ্লাঘার বস্তু। (ড, রহমানের প্রবন্ধ দুইটি মৈত্রেয়ী দেবী সম্পাদিত গ্রন্থে রয়েছে।) বস্তুত পূর্বপাকিস্তানের বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীগণের চিন্তার ক্ষেত্রে যে বিপ্লব আনবার চেষ্টা করছেন সে বিপ্লব বিশেষ প্রয়ােজনীয় আমাদের পক্ষেও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই চিন্তা বিপ্লবের সূচনার কোনােই ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বপাকিস্তানের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়া ভারতের প্রতিটি বাঙালির পবিত্র কর্তব্য। বস্তৃত পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমান বুদ্ধিজীবীগণ রবীন্দ্রনাথের মানবতা এবং যুক্তি অনুসারী পন্থা অবলম্বন করে চলেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ধর্ম ও জাতি গােষ্ঠীর মধ্যে মিলনের সেতুর অনুসন্ধান করছেন—যা করা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীর কর্তব্য। আমরা অবশ্য সব ব্যাপারেই পাকিস্তানিদের দোষ দেখতে এত অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে যুক্তির বাণী আমাদের অনেকের কানেই বেসুরাে লাগে। ভারত সরকার পূর্ব-পাকিস্তানের সংবাদপত্র এবং পুস্তকাদি ভারতীয়দের মধ্যে প্রচার করে পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতীয়দের মনে একটি বাস্তব চিত্র সৃষ্টিতে বিশেষ সাহায্য করতে পারেন, কিন্তু বাঙালিদের ঔদাসীন্য ভারত সরকার এ বিষয়ে এখনও অনাগ্রহী।
সূত্র: কম্পাস, ৩রা জানুয়ারি, ১৯৭১