বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দ
নব্বই হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যের পরিবেষ্টনী ধ্বংস করে বাংলাদেশ কায়েম হওয়াতে বর্মার ঘরে ঘরে সকল জন আনন্দিত হয়েছেন। ব্রহ্মরাও খুশি হয়েছেন।
তবে অনেকজন বলছেন ভারত ও রাশিয়ার প্রভুশক্তিতে অসহ্য হয়ে চীন আর আমেরিকার বেঈমানীর মুকুট কৌশলের ন্যায়বিরুদ্ধ কার্য সর্বদা পাকিস্তানের সহযােগে থাকবে।
যে দেশে জাতির মিলন শক্ত থাকে, সেই দেশে বহির্দেশ শত্রুদের তােপ কামানের গুলি একেবারেই ব্যর্থ নিষ্ফল হয়। এরই প্রকৃত প্রমাণ বাংলাদেশ।
“বাংলাদেশ” বুনিয়াদ শক্ত ও সুন্দর রাখতে হবে জাতি ধর্ম ও জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে দেশপ্রেমে, স্বদেশের কল্যাণ সাধনের সঙ্কল্পে ও জাতির হিতসাধনের ব্রত গ্রহণ করে।
হিংসা বিদ্বেষ নিজ স্বার্থপরতা ভুলে, দেশ সেবার নীতিকে কাজ কর্মে উচু নিচু মান সম্মানের তারতম্যের দিকে লক্ষ না রেখে, এক ভাষার জাতি বাঙালি বলতে সকলজন বুকের বন্ধনে এক থাকতে পারলেই কোননা। বাহির শত্রুকে ভয় করবার কারণ নেই।
শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সাধনা সার্থক করতে হবে বাঙালি জাতি সমস্ত লােকের সমবেত প্রচেষ্টায়। স্বাধীনতার সম্মান বজায় রাখতে হবে সকলের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনে।
জাতির জননী ইন্দিরা
রেঙ্গুনে শতশত বাঙালি মুসলমান পথে ঘাটে বিনা দ্বিধায় স্পষ্ট ভােলাখুলি ভাবে বলছেন বাঙালি জাতির জননী মহামতি ইন্দিরা গান্ধী আজ পূর্ববঙ্গবাসীকে মৃত্যুর কবল হতে রক্ষা করেছেন।
না হলে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক দল দশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করার পর আরও লক্ষ লক্ষ হত্যা করে হিন্দুদিগকে ভারতে বহিষ্কৃত করে, বাঙালি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়ে দিয়ে, আর সকলকে কান টেনে উর্দুভাষা আশ্রয়ে নিয়ে ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভিত্তিমূল স্থান ভ্রষ্ট করে পশ্চিমীদের দাসত্বে আবদ্ধ রাখত। আল্লাহতালা রক্ষা করেছেন বাঙালি জাতিকে।
রাশিয়ার সহানুভূতি ভারতের রক্ত দিয়ে প্রাণপণ সঙ্কল্পে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এই গুণ পুর্ববঙ্গবাসীর ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
মুখে আর কাজে মিল নেই
বর্মা ভাষার প্রখ্যাত নিউজ জার্নাল সুইটু” “বাংলাদেশ” সম্বন্ধে নিবন্ধে লিখেছেন চীনা সরকার বার বার ঘােষণা করেছেন, যে কোনাে জাতির উন্নতির কাজে স্বকীয় স্বাধীনতার জন্য প্রচেষ্টায় তাদের সাথী হয়ে সাহায্য করবে।
কিন্তু আজ আশ্চর্য হয়ে আমরা দেখছি, বহুদিন পাঞ্জাবি ও পাঠানদের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে পূর্ববঙ্গবাসী স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধে চীন সরকার মুখ ফিরিয়ে জুলুমবাজী বিপক্ষকেই সাহায্য করছেন। আজ দেখা যায় চীনাদের মুখের কথা আর কাজে মিল নেই।
পালিয়ে আসা পাকিস্তানি
এ পর্যন্ত চৌদ্দ খানা বিমানসহ কিছু সামরিক অফিসার কয়েক দল পাকিস্তানি বর্মার আরাকানে পালিয়ে এসেছেন। বর্মায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের তত্ত্বাবধানে তাঁদের রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিকে রেঙ্গুনে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে মেজর জেনারেল রহীম খান, মেজর গােলাম রসুল রেঙ্গুনে চিকিত্সাধীন আছেন।
চীনা সৈন্য সমাবেশ
প্রকাশ বৰ্মা-ভারত সীমান্তে বহু চীনা সৈন্য সমাবেশ হচ্ছে। এই রকম সৈন্য সমাবেশের অভিসন্ধির মূল উদ্দেশ্য বিশেষ কিছুই বুঝা যায়নি। তবে জনরবে বহু কথা শােনা যাচ্ছে। সরকারি পত্রিকার খবরে প্রকাশ বর্মা ভারতের প্রান্তে সৈন্যরা এসে জমা হচ্ছে।
ভূট্টোর গর্জন
মেনিসিংহ বজ্রদেবতার গর্জনের মতাে, পাকিস্তানের নতুন প্রভু দারুণ অহঙ্কারী ভূট্টোর হুঙ্কার শুনে সকলেই আশ্চর্য হচ্ছেন।
পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ একমাত্র রাজা বাহাদুর হঠাৎ মাটি হতে আকাশে উঠে যেন ধরাকে সরা দেখছেন।
ভূট্টোর আত্মাভিমানের গর্জন বর্মার সংবাদপত্রে কাল অক্ষরে প্রকাশ হচ্ছে। পূর্ববঙ্গকে শােষণ করার অমানুষিক লিলায় তাদের দস্যুবৃত্তির শাসননীতিকে ভূট্টোর দল আবার বাংলাদেশে কায়েম করতে চায়। জ্ঞানী তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তিরা মনে করেন ভারতের সাথে আবার যুদ্ধ লাগলে ভূট্টোর পাকিস্তান কবরস্থান হবে।
ডা. শহীদুর রহমান (বৰ্মা)
সূত্র: কম্পাস, ৮ই জানুয়ারি ১৯৭২