You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.13 | উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সীমান্ত গান্ধী | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সীমান্ত গান্ধী

[এ বছর ৩১শে আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গান্ধী স্টেডিয়ামে পুশতুনিস্তান দিবস উপলক্ষে এক সভায় সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফর খান পাকিস্তানের সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে এক ভাষণ দেন। শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক নেতা শিবনাথ বন্দোপাধ্যায় ঐ সভায় উপস্থিত ছিলেন। শ্ৰীবন্দ্যোপাধ্যায়ের সীমান্ত গান্ধীর ভাষণের পূর্ণ ইংরেজি লিপি আমরা পেয়েছি এখানে তা অনুবাদ করে দেওয়া হল–সম্পাদক]
আমি গত বছরই ‘পুশতুনিস্তান দিবস পালন উপলক্ষে বলেছিলুম যে, পাকিস্তানের নির্মম শাসকগােষ্ঠী ও তাদের উপনিবেশবাদী বন্ধুরা কখনাে পাকিস্তানে ন্যায়সংগত নির্বাচন করতে দেবে না আর যদি একান্তই নির্বাচন হয়, তারা কখনও শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে দেবে না এবং জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজী হবে না। পাকিস্তানে সংবিধান সম্মত ও গণতান্ত্রিক জীবনধারা চালু হলে, তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এ কারণে স্বৈরাচারী সামরিকগােষ্ঠী দেশে সামরিক শাসন চালু রাখার জন্য অজুহাত খোজার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে। একমাত্র এ কারণেই ঐ সব নিষ্ঠুর শাসক গণতান্ত্রিক ও সংবিধান সম্মত পদ্ধতি প্রবর্তনের পক্ষে নানা রকমের বাধা সৃষ্টি করছে। তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বকে জিইয়ে রাখার জন্য তারা উপনিবেশবাদী শক্তিশালী রাষ্ট্রদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পাকিস্তানের জনগণের শক্তিশালী আন্দোলনের ফলে প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের নিষ্ঠুর এক নায়কত্বের পতন ঘটেছে। নির্মম নিপীড়ন, নয়া উপনিবেশবাদ, এক ইউনিট প্রথা, জাতীয় ও সামাজিকক্ষেত্রে বাংলা পুশতুনিস্তান, বালুচিস্তান এবং সিন্ধুতে পঞ্জাবীদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পথকে উম্মুক্ত করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জনগণের উদ্যোগে ঐ আয়ুব শাসন বিরােধী আন্দোলন হয়েছিল। তারপর পাকিস্তানে যে নতুন সরকার গঠিত হয়, সেই সরকার এক ইউনিট প্রথা বাতিল করে দিয়ে গণভােটের ভিত্তিতে নির্বাচনের ঘােষণা করতে বাধ্য হয়।
সামরিক শাসনের তত্ত্বাবধানেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের জনগণ রাজনৈতিক অধিকারের দাবী আদায়ে সফলকাম হয়। পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসার ও প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও, তারা গণতান্ত্রিক ও সংবিধানসম্মত জীবনধারা থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখার কোনাে অজুহাতই খুঁজে পেল না।

বাংলার মানুষ ও আওয়ামী লীগ
বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের ছ-দফা কর্মসূচির অনুকূলেই ভােট দিয়েছিল। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এবং বাংলার প্রাদেশিক আইন সভায়ও অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগই জয়ী হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সব প্রদেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই নির্বাচনে বিরাট সাফল্যের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিনন্দিত করেছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান্ নিজেই শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী রূপে অভিহিত করেছিলেন। অবশ্য ঐ একই সময়ে পাকিস্তানের প্রতিপত্তিশালী ২৩টি পরিবার, পাঞ্জাবী শাসকগােষ্ঠী ও তাদের সামরিক জুন্টার-র মনে এই আশঙ্কা জাগে, বুঝি বা তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। হঠাৎ তাদের প্রতিনিধি মি. জুলফিকার আলি ভূট্টো জানালেন যে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রস্তাবিত ৩রা মার্চ-এর বৈঠকে যােগ দেবেন না। এটা মি. ভূট্টোর জনগণ বিরােধী ও ধ্বংসাত্মক এক বিরাট ভূমিকা। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের বৈঠক মুলতুবী হয়ে গেল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঐ বৈঠক মুলতুবী রাখলেন। আর বাংলার জনসাধারণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার না পেয়ে অশান্ত হয়ে উঠলাে।

২৫শে মার্চ-১৯৭১
পাকিস্তানের জনগণের চাপে এবং আওয়ামী লীগের অহিংস ও অসহযােগ আন্দোলনের ফলে শেষ পর্যন্ত প্রে: ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের বৈঠকের দিন ধার্য করলেন। সত্যি বলতে কি, ঐ আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার উদ্দেশ্যে সামরিক প্রস্তুতির জন্যই প্রে: ইয়াহিয়া খান যেন সময় নিলেন। ২৫শে মার্চ যে দিন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসার দিন সে দিনই সামরিক বাহিনী বাংলার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষকে আক্রমণ করল। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হলাে। শহর ও ঘরবাড়ি ধ্বংস ও ভস্মীভূত হলাে। ভারতে ৮০ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিলাে। লক্ষ লক্ষ মানুষ পাহাড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেল। এভাবে নিষ্ঠুর শাসকগােষ্ঠী ও তাদের তাবেদাররা তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করল। সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার পরিবর্তে তারা লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল। স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তারা যে অত্যাচার ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তার ফলে শুধু যে পাকিস্তানের সংহতিই আজ বিপন্ন তা নয়, পক্ষান্তরে এই অঞ্চলে শান্তি ও সৌহার্দমূলক অবস্থাও বিপন্ন।

আমাকে সুযােগ দেওয়া হলাে না
এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আমি উদ্যোগী হয়েছিলুম। এই সংকটের সমাধানের উপায় নির্ধারণের উদ্দেশ্যে আমি পাকিস্তান সরকারকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলুম যে পশ্চিম পাকিস্তানের সব প্রদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এক দল নিয়ে আমি বাংলায় যেতে রাজী আছি। বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে আমাকে ঐ প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাওয়ার সুযােগ দেওয়া হলাে না।

বাংলায় গণ হত্যা —সকলে নীরব
পৃথিবীতে যে সব রাষ্ট্র গণতন্ত্রের কথায় সােচ্চার হয়ে ওঠে, আমি তাদের অনুধাবন করছি। ঐ সব রাষ্ট্র বাংলার গণহত্যা নীরবে দেখছে। বাঙালিদের প্রতি তাদের কোনই দয়ামায়া নেই। সহানুভূতির কথা তাে দূরের কথা, নিক্সন এমনভাবে আচরণ করছেন, যা নেতিধর্মী। রাষ্ট্রসংঘ নীরব। ঐশ্নমিক রাষ্ট্রগুলাের সদরদপ্তর এ ব্যাপারে চোখ-কান বুজে আছে। ইসলামে আমাদের কর্তব্য কী? ইসলাম ধর্ম বলে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী দুটি পক্ষের মধ্যে বিরােধ ও পা দিলে, আপােষ মীমাংসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আপােষ না হলে, নিরপরাধ মানুষদের সাহায্য করতে হবে। এটা লক্ষ করা গেছে, নিরপরাধ মানুষদের সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা না করে, নির্মম নিষ্ঠুর মানুষদেরই সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে আর তা হচ্ছে, ধর্মের নামে। এটা কী ধরনের ধর্ম? এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খােলাখুলি ও সুস্পষ্টভাবে আমি আমার বক্তব্য রাখতে চাই।

প্লাবন শুরু হয়ে গেছে
আমার স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী বালুচি, সিন্ধি এবং পুসতুন ভাই ও বােনদের একথা বলতে চাই যে প্লাবন শুরু হয়ে গেছে। বাংলার পরেই আপনাদের পালা। আপনাদের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলার ঘটনাবলীতে আবার এটা প্রমাণিত হয়েছে যে পাকিস্তানের উপনিবেশবাদী শাসকগােষ্ঠী বিশেষত অন্যায়রূপে ক্ষমতার দখলদার পাঞ্জাবীরা কোনাে অবস্থাতেই পাকিস্তান ও পাঞ্জাবের মহান জনগণের মঙ্গল চায় না। তারা জনগণের কাছে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী নয়। প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও সুসংহত শাসন ব্যবস্থার জন্য কোনাে রকম প্রস্তুতি নিতে তারা রাজী নয়। তারা নিজের হাতে পাকিস্তানকে ধ্বংস করছে।

বাংলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে
তাদের নৃশংসতা ও হিংস্রতার জন্যই আজ বাংলা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যে ভিত্তির ওপর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই ভিত্তিই ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন বালুচিস্তান, পুসতুনিস্তান ও সিন্ধুর মতাে ছােট ছােট প্রদেশেও জনগণের আন্দোলন ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে অধিকার ও স্বাধীনতার দাবিতে। এসব প্রদেশের মানুষদের ও নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য নতুন পথ খুঁজে নেওয়ার অধিকার আছে।

পাঞ্জাবী পুঁজিপতি
মূলধন ও উৎপাদিত পণ্যের জন্য পাঞ্জাবী পুঁজিপতিদের কাঁচা মাল, সস্তায় শ্রমিক ও বাজারের একান্ত প্রয়ােজন। এ সব ছােট ছােট প্রদেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনগ্রসর করে রাখতে চায়। তারা তাদের হাত ও ধারের দিকেও (আফগানিস্তান) সম্প্রসারিত করতে চাইছে। এটা আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও সংহতির পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এই বিপদের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে এবং বিশ্বে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়া বজায় রাখার জন্য আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমীদের আমি সতর্ক করে দিতে চাই এবং এ ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই বিপদকে নিবারণের জন্য নতুনভাবে চিন্তা করা প্রয়ােজন। এই অঞ্চলের শান্তি, জাতীয় স্বাধীনতা, প্রগতি ও গণতন্ত্রকে বজায় রাখার জন্য নতুন কর্মসূচি রচনা করতে হবে। উপনিবেশবাদী, ক্ষমতার দখলদার, প্রতিক্রিয়াশীল ও একনায়কদের বিরুদ্ধে যুক্ত জাতীয় ফ্রন্ট গঠন করতে হবে। বালুচি ও পুশতুনরা যাতে তাদের চিরাচরিত ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করে তােলেন, সে জন্য তাদের কাছে আমি বিশেষভাবে অনুরােধ করছি। অতীতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে যেমন তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছিলেন; বর্তমান বিপদেও তাঁদের সেই ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য উদ্যোগী হতে হবে শত্রুরা যাতে এই সুদৃঢ় ঐক্যের বন্ধনকে শিথিল করে দেওয়ার সুযােগ না পায়।

আমার আবেদন
বালুচি, পুস্তুন, সিন্ধি, পাঞ্জাবী এবং বাঙালিদের কাছে এই-ই আমার আবেদন।
আমি আপনাদের কমুকণ্ঠে এটাই জানাতে চাই যে বিশ্বের মুক্তিযােদ্ধারা এবং শান্তিকামী মানুষেরা আপনাদের সঙ্গেই আছেন। এমতাবস্থায় আপনাদের কোনাে অবস্থাতেই আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসা উচিত হবে না। মাভৈঃ। ভীতু মানুষদেরই মৃত্যুর কবলিত হতে হয়। ভিয়েত্নাম ও প্যালেস্টাইনের মুক্তিযযাদ্ধাদের লক্ষ করুন। তারা বিশ্বের বড় বড় শক্তির কাছে হার স্বীকার করেননি। জাতীয় স্বাধীনতার জন্য তারা সব রকমের আত্মােৎসর্গে ব্রতী হয়েছেন। পরিণামে তারা জয়ী হবেন-ই।
পুস্্তুন ভাইয়েরা পুরােনাে আমলের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের একই ফল আজও আমাদের পেছনে ধাওয়া করে চলেছে। আমাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমিকতা, সৌভ্রাত্র এবং সেবার মনােভাব নেই।
উপজাতি সুলভ ধর্মোন্মাদনা, স্বার্থপরতা, অর্থের প্রতি লােভ এবং বিদেশী প্রভাব আমাদের মধ্যে আজও বর্তমান। আমাদের মধ্যে সেবার মনােভাব নেই। আর যদি কারুর থাকে, আমরা তাদের কাফের, ওয়াহাবী, হিন্দু বিশ্বাসঘাতক ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে থাকি, এবং আমরা তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দি। যে জাতির মধ্যে সেবার মনােভাব নেই, সেই জাতির ভেতর সমাজ সেবী দেখা যায় না। সাহসী ও অহঙ্কারী আখ্যা দিয়ে মানুষ আমাদের প্রবঞ্চিত করেছে। আমরা সাহসী এবং আত্মীয় স্বজন ও নিজেদের জাতির প্রতি আমরা বিবেচক। কিন্তু দেশ ও জাতির সম্মান বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের যেন কোনােই আগ্রহ নেই। উপনিবেশবাদ আমাদের জাতীয় চরিত্র ও জাতীয়তাবাদের ধারণাকে কতখানি প্রভাবিত করেছে, তার প্রমাণ গত নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমেই ধরা পড়েছে। এটা জানা গেছে যে, গত নির্বাচনে শাসক মহল, প্রতিক্রিয়াশীল এবং তাদের তাবেদাররা জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল জাতীয় আওয়ামী পার্টির বিরুদ্ধে অশুভ মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একযােগে কাজ করেছিল। বাংলা এবং বালুচিস্তানের মানুষরা যেমন স্বাধীনভাবে তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পেরেছিলাে, ঠিক তেমনিভাবে স্বাধীনভাবে সত্যিকারের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযােগ তারা আপনাদের দেয়নি। শত্রুরা মরিয়া হয়ে উঠেছে যাতে আমরা প্রগতির পথে না চলি। বাঙালিদের অন্যান্যরা আঘাত করছে কিন্তু পুসতুনরা নিজেরাই নিজেদের আঘাত করছে। উপনিবেশবাদের অশুভ ফলের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী তরুণ পুসতুনদের সর্বশক্তি বিনিয়ােগের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির ব্যাপারে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এবং বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ও স্বাধীনতা প্রেমী রাষ্ট্রশক্তি সমূহের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করছি। রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাকিস্তান ও বাংলার অবিসংবাদী নেতা মুজিবর রহমানের মুক্তির এবং জীবন রক্ষার জন্য তারা যেন শুভ প্রচেষ্টায় উদ্বুদ্ধ হন। জাতীয় ও আওয়ামী পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি মাহমুদ উল হক ওসমানীর মতাে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদেরও সত্বর মুক্তির জন্য তাদের দাবী করা উচিত যাতে জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারেন। আবার রাজনৈতিক কার্যকলাপকে প্রতিষ্ঠা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক বিধান সভাকে চালু করা উচিত। জাতির জন্য যথাসম্ভব সত্বর গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ ভাবেই গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক জীবন সমসূত্রে গ্রথিত হবার সুযােগ পাবে।

সূত্র: কম্পাস, ১৩ই নভেম্বর ১৯৭১