You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের যুদ্ধে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি

বাজারে ১৩০ কোটি টাকার নতুন নােট
বাংলাদেশে যুদ্ধের খরচ সামলানাের জন্য পাকিস্তান সরকার ব্যাপক মুদ্রা স্ফীতির আশ্রয় নিয়েছে। পাকিস্তান স্টেট ব্যাঙ্কের একটি বুলেটিনে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এই বুলেটিনে বলা হয়েছে যে জুন মাসে ১৩০ কোটি টাকার কারেন্সি নােট বাজারে ছাড়া হয়েছে এর ফলে ৮০৯ কোটি টাকাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৩৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে করাচীর লীডার” পত্রিকা বলেছে ‘পুরানাে নােটের বদলে নতুন নােটের চাহিদা মেটানাের জন্যই সব টাকা ছাপানাে হয়নি। আসলে নােট বেশি বদলানাে হয়নি। গত চার মাসে সরকার তার নিজের খরচের জন্যই ৭৮ কোটি টাকা ছেপেছে।”
অর্থনীতি বিশারদরা মনে করছেন; পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্ক আপাতভাবে এই যুক্তির উপরই ব্যাপক ভাবে টাকা ছেপেছেন যে গত জুন মাসে যে সব মুদ্রা মূল্যহীন হয়ে গিয়েছিল সেগুলাের বদলেই এই টাকা ছাপা হয়েছে। কিন্তু লীডার পত্রিকার সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে যে নতুন নােটের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশের যুদ্ধের খরচ চালানাের জন্য সরকার ব্যবহার করেছে। এই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যে পরিমাণ নােট ছাপানাের কথা ঘােষণা করেছে অঘােষিতভাবে তার থেকেও অনেক বেশি ছাপানাে হয়েছে। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্ক আগেও এরকম কাজ করেছে, এবারও করছে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে ১৯৬৫-৬৬ সালে এই ব্যাঙ্ক ২০০ কোটি টাকার নােট ছেপে ছিল, কিন্তু এ কথাটি কোনাে বুলেটিনেই তারা উল্লেখ করেনি। আয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যােজনা কমিশনের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. আনােয়ার ইকবাল কুরেশি বলেছিলেন যে আইনগত বাধা নিষেধ না মেনেই পাকিস্তান সরকার ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।
মনে করা হচ্ছে যে একই ব্যাপার এখনও করা হচ্ছে। তাই এই মুদ্রিত ১৩০ কোটি টাকা পাকিস্তান সরকার প্রকৃতপক্ষে যত পরিমাণ টাকা বাজারে ছেড়েছেন তারই একটি ক্ষুদ্র অংশ।
পশ্চিমের বিভিন্ন রাজধানী থেকে পাকিস্তানি অর্থনীতির উপর আরও বেশি চাপের খবর এসেছে। এই খবর অনুসারে গত দুই মাসে পাকিস্তানি মুদ্রার মূল্য ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
লীডার পত্রিকার একটি খবর অনুসারে ২৭শে মে তারিখে মুদ্রামূল্য নষ্ট হওয়ার পূর্বে যে আমেরিকান ডলারের দাম ছিল ১০.৭০ টাকা এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সেই ডলারের দাম ২০ টাকারও বেশি। করাচীতে কালাে ডলারের মূল্য আরও বেশি।
সামরিক প্রশাসন জনসাধারণের অত্যাবশ্যক প্রয়ােজনকে উপেক্ষা করে কেমনভাবে তার যুদ্ধের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলেছে, তার উদাহরণ মিলবে একটি তথ্যে, তথ্যটি হলাে: পাকিস্তান তার জাতীয় বাজেটের একভাগেরও কম শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য ব্যয় করছে। যে কোনাে সরকার কর্তৃক শিক্ষার জন্য ব্যয়িত মুদ্রার পরিমাণের তুলনায় এই ব্যয় পরিমাণই বােধ হয় সর্বনিম্ন। নিউ টাইমস্ এর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা যায় যে পাকিস্তানের শিক্ষা বিশারদদের হিসাব অনুযায়ী শতকরা মাত্র ৮ জনকে শিক্ষিত বলে ধরা যায়। এই অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এই পত্রিকাটি বলেছেন যে “মার্চ মাসে যখন পূর্ব পাকিস্তানে সংকট আরম্ভ হলাে তখন থেকেই বহু শিক্ষাবিদ গণ-শিক্ষার আশা জলাঞ্জলি দিয়েছেন।”
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে জনসংখ্যার চাপ এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলাে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বলেছে যে “সরকার সম্প্রতি এমন কতকগুলাে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন যার দ্বারা আমদানিকৃত বহু জিনিসের দাম ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বইকে ফেলা হয়েছে বিলাস দ্রব্যের পর্যায়ে এবং বইএর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।”
পাকিস্তানি সংবাদপত্র অনুসারে এমন কি ইসলাম সম্পর্কিত আমদানিকৃত পুস্তকের দাম আগে যা দিতে হতাে এখন তার থেকে তিনগুণ বেশি দিতে হয়। অন্যান্য পুস্তকের সাথে এখন ইসলাম বিষয়ক পুস্তকও নতুন আমদানি নীতি অনুযায়ী বেশি দাম দিয়েই কিনতে হবে।
করাচীর দৈনিক পত্রিকা ডন বলেছে যে বিনিময়ের অসুবিধার ছুতাে দেখিয়ে সরকার সম্প্রতি বই এর জন্য নির্দিষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সূত্র: কম্পাস, ২৮শে আগস্ট ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!