পাকিস্তানের অভ্যন্তরে
“মূর্খ আর প্রতারকরাই শুধু ভাবতে পারে যে গণতন্ত্র মােড় নিতে চলেছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট যতদিন চলবে ততদিন সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি শুধু স্তব্ধ হয়েই থাকবে না, অবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে থাকবে”, মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সর্বাধিক প্রচারিত উর্দু সাপ্তাহিক আখবর-এ-জাহান।
‘পূর্ব পাকিস্তানের প্রাথমিক এবং সঠিকভাবে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সাথে অনতিবিলম্বে আলােচনা পুনরায় শুরু করার জন্য এই প্রভাবশালী সাপ্তাহিক পত্রিকা আহ্বান জানিয়েছেন, একটি বিশেষ সম্পাদকীয় নিবন্ধে এই পত্রিকা বলেছেন: “দেশের সামনে দুটি বিকল্প পথ রয়েছে। হয় ভারতের সাথে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধে নেমে দীর্ঘ দিনের জন্য সমস্যাদির নিষ্পত্তি করা, নয়তাে, এ পর্যন্ত পাকিস্তানের শত্রু বলে যাদের ভাবা হয়েছে, সঠিক ভাবে নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তানের সেই গণপ্রতিনিধিদের সাথে আলােচনা শুরু করা। আমরা যদি প্রথম পথটি বেছে নিই তা হলে অপরিমেয় মূল্য দিতে হবে এবং আমাদের অর্থনীতি সেই চাপ সব সময় সহ্য করতে পারবে কিনা তাও সন্দেহজনক।”
পত্রিকাটি বলেছেন যে “এই যুদ্ধে নামার একটাই মাত্র পথ আছে তা হলাে চীনের সাথে আমাদের একটি নিরাপত্তা চুক্তি করতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ রকমের একটা নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদন করা যাবে কিনা তাও সন্দেহজনক। অবশ্য এরকম একটা চুক্তির যৌক্তিকতা এবং অন্যান্য বিষয় সরকারই স্থির করবেন। যদি এরকম একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করা সম্ভব না হয়, তা হলে ভারতের সাথে একটি যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট মূল্য দিতে হবে। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ বিকল্পটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে আলােচনা শুরু করা।
কিন্তু চীন তৎপরতার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে অথবা ভারতের বিরুদ্ধে কোনাে মূখতাপূর্ণ দুঃসাহসিক অভিযানে সক্রিয় সহযােগিতার দৃঢ় নিশ্চয়তা দেবে বলে ইয়াহিয়া যে আশা পােষণ করছিলেন, ভূট্টোর পিকিং সফর সেই আশাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
জঙ্গী শাসকগােষ্ঠী কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাবাদপূর্ণ প্রচার চালানাে সত্ত্বেও বাংলাদেশ সমস্যার একটি গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য ক্রমশই ভারত বেশি কণ্ঠসসাচ্চার হয়ে উঠছে। সম্প্রতি লাহাের পরিদর্শন কালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির এক দাবীর সম্মুখীন হয়েছিলেন, যে দাবীতে বলা হয়েছে যে শেখ মুজিবর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত এবং গত বছর ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।
অর্থাৎ এর দ্বারা বােঝানাে হয়েছে যে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ সদস্যদের স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে সেই জাতীয় পরিষদের কাছে জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত। বাংলাদেশে ভূয়া উপনির্বাচনের দ্বারা সামরিক শাসকরা জনগণের এই স্পষ্ট রায়কে বরবাদ করতে চেয়েছিল। তাদের বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের ৪২ জন নেতা এই প্রচেষ্টার নিন্দা করেন এবং গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে অধিকার পুনঃ প্রদানের জন্য বলেন।
সময়ের বিষয়টি ছাড়াও এতে যারা সই করেছেন তাদের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈশিষ্ট্যের জন্য এই আবেদনের গুরুত্ব বেশি। এর নেতা হচ্ছেন ইস্তিকাল দলের প্রধান ও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন অধ্যক্ষ এয়ার মার্শাল আসগর খান। এয়ার মার্শাল আসগর খানই হচ্ছেন প্রথম পশ্চিম পাকিস্তান রাজনীতিক যিনি সর্বপ্রথম শেখ মুজিবর রহমানের খােলাখুলি বিচারের এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলােচনার জন্য দাবী জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা থেকে বিরক্ত হয়ে ফিরে এসেছেন এবং ঘােষণা করেছেন যে বাংলাদেশের ভূয়া উপনির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে তাঁর দল রাজী নয়।
অপর একজন সই দানকারী হচ্ছেন লেনিন পুরস্কার বিজয়ী এবং উপমহাদেশের একজন প্রধান সাহিত্যিক উর্দু কবি ফৈজ আহমদ ফৈজ। পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি মিরজা মহম্মদ ইব্রাহিমও এর সাথে যুক্ত থাকায় প্রমাণ হলাে যে এই আবেদনের প্রতি শ্রমিক সম্প্রদায়েরও সমর্থন রয়েছে। পাকিস্তান সােসালিস্ট পার্টির সভাপতি জনাব সি, আর অসলামও এই আবেদনে সই করেছেন। জনাব অসলাম এবং জনাব মিরজা ইব্রাহিম পিকিং পন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। মৌলানা ভাসানী কর্তৃক শুধু বাংলাদেশের ব্যাপারে মনােনিবেশ করার কথা স্থির হওয়ায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই দল ভেঙ্গে যায়। পাকিস্তান টাইমস পত্রিকার ভূতপূর্ব সম্পাদক জনাব মােঝর আলি খানকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পাঞ্জাব বিভক্ত হওয়ার পূর্বেকার সময়ে যারা দেখেছেন তারাই তার এই সইদানকে মনে রাখবেন। তার ছেলে তারিক আলিও ব্রিটেনে নতুন বামপন্থী আন্দোলনের নেতা হিসাবে নাম করেছেন। অন্যান্য সুপরিচিত যারা এই আবেদনে সই করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন পাঞ্জাব শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক এরিক স্যাপ্রিয়েন, পাকিস্তান সাংবাদিক সংঘের অন্যতম সহ সভাপতি জনাব আবদুল্লা মালিক এবং পাঞ্জাব ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব আহমেদ ইস্তাক।
আদর্শগতভাবে বলতে গেলে এই সইদানকারীদের একটি বৃহৎ অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের বামপন্থী প্রগতিবাদীদের মধ্যে পড়েন। কিন্তু আরও বেশি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হচ্ছে এয়ার মার্শাল আসগর খানের সই, যাকে কিছুতেই বামপন্থী বলা যায় না, বরং যে মুষ্টিমেয় সামরিক নেতা ও শিল্পনায়ক সারা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর কর্তৃত্ব করছে তাদের উপর ক্রমবর্ধমানভাবে অসন্তুষ্ট পাঞ্জাবী শিক্ষিত ব্যক্তিদের একজন বলে তাঁকে ধরা যায়।
কঠোর শাসন ব্যবস্থা থাকার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরাট সংখ্যক বুদ্ধিজীবী এবং প্রগতিশীল ব্যক্তিদের পক্ষে খােলাখুলি ও স্বাধীনভাবে তাদের মনােভাব ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবুও বাংলাদেশের পক্ষে কবিতা লেখার জন্য একজন বিশিষ্ট পাঞ্জাবী কবি আহমেদ সালিমকে সম্প্রতি ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। উর্দু কবি হাবিব আলির বাংলাদেশে সামরিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ করায় তাকে সামরিক আইন অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিন্ধু অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়ানাের জন্য সুপরিচিত সিন্ধি নেতা জনাব জি. এম. সৈয়দকে অন্তরীণ করা হয়েছে। পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থার সহ-সভাপতি বেগম নীজ ফতিমার ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যাপার ঘটেছে।
লন্ডনে বসবাসকারী বেশ কিছু সংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানি “বাংলাদেশের সাথে সংহতি” নামক একটি সংস্থা গঠন করেছেন। এই আন্দোলনের অন্যতম বিশিষ্ট নেতা হচ্ছেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অন্যতম প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ এয়ার কমডাের জানজুয়া। তিনি ছাড়াও আছেন পাকিস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক জনাব নারিদ জাফরি এবং লাহােরের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সুপরিচিত নেতা নাসিম বাজোয়া। কিছুদিন আগে এয়ার কমডাের জানজুয়া এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে পাকিস্তানের শাসকরা নৈরাশ্যবশত যুদ্ধ শুরু নাও করতে পারে কারণ শুধু বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের উপরও তাদের অত্যাচারকে চিরস্থায়ী করার জন্য এটাই একমাত্র বিকল্প।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক যে সংবিধান তৈরি হচ্ছে তাতে তিনি মুসলমান ও অমুসলমানদের জন্য আলাদা আলাদা নির্বাচনী কেন্দ্রের দুরভিসন্ধিমূলক ব্যবস্থা করছেন।
করাচীর জং পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠার এক খবরে জানিয়েছেন যে, সংবিধান বর্তমানের রীতি তুলে দিয়ে অমুসলমানদের জন্য মুষ্টিমেয় কয়েকটি কেন্দ্র সংরক্ষিত রাখবে। সরকার সমর্থক সংবাদপত্রগুলাে আরও দাবী তুলেছেন যে “পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যার নতুন বাস্তবভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত।
উপনির্বাচন না করে আলাদা আলাদা নির্বাচনী কেন্দ্রের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচনের কথা তুলে লাহােরের নওয়া-এ-ওয়াক্ত পত্রিকা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ইতিমধ্যেই যুক্ত নির্বাচনী কেন্দ্রের রীতি তুলে দিতে এবং মুসলমান ও অমুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক আসনের ব্যবস্থা করতে মনস্থ করেছেন বলে যে বিশ্বস্ত খবর বেরিয়েছে, এই সংবাদপত্র তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এই খবরে এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটাও জানা কথা যে, ভূট্টো ও তাঁর পিপলস্ পার্টি পাকিস্তানে পৃথক পৃথক নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রবর্তনে দারুণ বাধা দেবেন।
পিপলস্ পার্টির প্রধান সম্প্রতি লাহাের বিমান বন্দরে বলেছেন যে, যদিও সংবিধানে পৃথক পৃথক নির্বাচনী কেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখার কথা সরকারিভাবে তাকে কিছু জানানাে হয়নি, তবুও তিনি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জেনেছেন সংবিধানে এরকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
পাকিস্তান টাইমস্ বলেছেন যে, ভূট্টো সাহেবের অভিমত হলাে, এরকম পদ্ধতির প্রবর্তনে পাকিস্তানের নাম কেনা ছাড়া আর কিছুই হবে না এবং এর ফলে বাংলাদেশে জটিলতা ও অসন্তোষই বৃদ্ধি পাবে। ভূট্টো বলেছেন: “আমি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে জানিয়ে দিতে চাই যে যুক্ত নির্বাচনী এলাকার ব্যবস্থা করতে পিপলস্ পার্টি তাদের সাথে সহযােগিতা করবে, কারণ, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দেশের ঐ অংশে এই ব্যবস্থার পক্ষে একটা সাধারণ সমর্থন রয়েছে। দেশের সংহতিকামী যে কোনাে প্রগতিশীল দেশ যুক্ত নির্বাচনী এলাকাই চাইবে।”
বাংলাদেশের অবস্থা ও বিশেষ করে উপনির্বাচনের ভাওতার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে ভূট্টো সাহেব বলেছেন, পক্ষপাতহীন নির্বাচনের পথে সেখানে এত বাধা যে পিপলস পার্টির সহসভাপতি মেহমুদ আলি কাসুরী বিরক্ত হয়ে ঢাকা ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন কারণ এমন কি পিপলস পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে মনােনয়নপত্র দাখিল করাকেও দুরূহ করে তােলা হয়েছিল। ভূট্টো বলেছেন, “সমস্ত রকম চাপ ও প্রভাব সত্ত্বেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে আমি কাসুরীকে সেখানে থাকতে ও নির্বাচন বয়কট না করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম।”
“পূর্ব পাকিস্তানে আরও এক দফা নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও আভাস দিয়েছেন পিপলস্ পার্টির চেয়ারম্যান। বিশদ করে বলার জন্য অনুরােধ জানালে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বহিষ্কৃত ও বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কতিপয় জাতীয় আইনসভার সদস্য যে কিছু আসন দখল করে আছেন সেগুলােকে পূরণের জন্য বহু উপনির্বাচনের প্রয়ােজন হবে। বিভিন্ন কারণে এই সব সদস্যরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগ দিতে রাজী নন।” অবশ্য ভূট্টো সাহেব বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচনে উদ্দেশ্য অল্পই সিদ্ধ হবে কারণ, সেখানে একটা সাধারণ ধারণা আছে যে, “এই নির্বাচন স্বতঃস্ফূর্ত এবং পক্ষপাত শূন্য নয়।”
পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি যুবক সমাজের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের একটি খবর এসেছে লন্ডনের পাকিস্তানি ছাত্ররা পাকিস্তান স্টুডেন্টস্ হােস্টেলে কায়েদী আদম জিন্নার একটি প্রতিকৃতি টাঙিয়ে রাখতে অস্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলােতে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, জিন্নার সমাধিকে অপবিত্র করার চেষ্টা হচ্ছে। কায়েদী আজমের স্মৃতিসৌধের ক্ষতি করার চেষ্টার অভিযােগে প্রায় ডজন খানেক পশ্চিম পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পাকিস্তানি সংবদপত্রগুলাের খবর অনুসারে, দক্ষিণ ইয়েমেন, ধােফার এবং ওমান প্রভৃতি উপসাগরীয় অঞ্চলে কিছু দিন ধরে পাকিস্তানবিরােধী মনােভাব ক্রমবর্ধমান। নওয়া-এ-ওয়াক্ত এর বেইরুটস্থিত সংবাদদাতা জানাচ্ছে যে, বিপ্লবী কমান্ড, এবং ধােফারের পপুলার ফ্রন্ট কর্তৃক প্রকাশিত তিনটি ভােলা পুস্তিকায় পাকিস্তানকে “উপসাগরীয় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের মুখ্য নায়ক” বলে নিন্দা করা হয়েছে। এই পুস্তিকাগুলােতে ইয়াহিয়া খানকে সাম্রাজ্যবাদীদের অনুচর রূপে বর্ণনা করে মন্তব্য করা হয়েছে যে, জাতীয় আন্দোলন দমনের জন্য তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরব বিপ্লবীদের পুস্তিকায় বাংলাদেশের জাতীয় আন্দোলনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানানাে হয়েছে এবং বিশ্বের সমগ্র, বিশেষ করে আরবদের, প্রগতিশীল শক্তিগুলােকে আহ্বান জানানাে হয়েছে যে, পাকিস্তানকে উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হিসেবে চাপিয়ে দেবার যে চেষ্টা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলাে করছে, সেই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে তারা যেন এগিয়ে আসেন। এই সব সংবাদের উপর মন্তব্য করে নওয়া-এ-ওয়াক্ত পত্রিকা লিখেছেন: “এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের কথা যে, আরব দুনিয়ার প্রগতিশীল সমাজে পাকিস্তান বিরােধী যে ক্রমবর্ধমান মনােভাব সৃষ্টি হচ্ছে সে সম্পর্কে পাকিস্তানিরা সতর্ক নয়। এ রকমের মনােভাব সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে ধ্বংসাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে।”
কেশব চন্দ্র শূর
সূত্র: কম্পাস, ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭১