You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেঘালয় সীমান্তে শরণার্থীদের চরম দুরবস্থা জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের উদ্বেগ
(বিশেষ প্রতিনিধি)

গৌহাটি, ২১ মে- জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা মেঘালয় সীমান্তে শরণার্থী শিবির গুলি পরিদর্শন করে এখানকার চরম দুরবস্থা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সিলেট ডাউকি সীমান্তে ৩০ হাজার ও বাগমারা ২৫ হাজার শরণার্থীরা শােচনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। জলের নিদারুণ অভাব। নদী ও ঝরণার জল পরিচ্ছন্নতার অভাবে ইতিমধ্যেই দূষিত হয়ে পড়েছে। বাগমারা শিবিরে যেখানে ২৫ হাজার শরণার্থী রয়েছে সেখানে ডাক্তার মাত্র ১ জন। ডাউকিতে ৩০ হাজার শরণার্থীকে দেখাশােনা করছেন ১ জন ডাক্তার। প্রসূতিদের অবস্থা মর্মদ রাস্তার উপরই শিশুকে জন্ম দিচ্ছে অসহায় মা। ওষুধ পত্র ও ইঞ্জেশনের কোন বন্দোবস্ত নাই।
প্রতিনিধিরা সমস্ত অবস্থা জানিয়ে মেঘালয়ের পূর্নবাসন মন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে আবেদন করছেন বলে প্রকাশ।

আলিপুরদুয়ারে শরণার্থীদের শােচনীয় অবস্থা
কালান্তরের নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেন ওপার বাঙলার পাকফৌজ গুণ্ডাদের অত্যাচারের সমস্ত প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ বহন করে এপার বাঙলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিন্নমূলের মত আছড়ে পড়ছে। জীবনের অভিশাপ তাদের দেহমনে। এপার বাঙলার সীমান্ত অঞ্চল জলপাইগুড়ির মহকুমা শহর আলিপুর দুয়ারেও হাজার হাজার উদ্বাস্তু অত্যন্ত শােচনীয়ভাবে কোনক্রমে মাথা গুজে আছেন। পাহাড়ের মাথায় বক্সায় প্রায় ৫ হাজার উদ্বাস্তু বর্তমানে আছেন। আরও প্রতিদিন প্রায় হাজার কয়েক করে আসছেন। এই সমস্ত উদ্বাস্তু গেরস্থ ঘরের এবং পাহাড় তাদের কাছে একটা বিস্ময়কর জিনিস। বক্সার এই ক্যাম্প পরিদর্শন করে এবং ওখানের লােকজনের সঙ্গে দেখা করে জানা গেছে যে ওখানের অবস্থা অত্যন্ত শােচনীয়। জল নেই বহু নীচে নেমে তারপর বহু কষ্ট করে জল উপরে আনতে হয়। তিব্বতী উদ্বাস্তুদের সরিয়ে এই সব উদ্বাস্তুদের উক্ত স্থানে প্রেরণ করা মনে হয় কোন দিক থেকেই যুক্তিসংগত হয় নি। সরকার নির্ধারিত ১.২৫ পয়সা করে উদ্বাস্তু ডােল দেওয়ার কথা। কিন্তু পয়সার বদলে তাদের মাত্র ৪০০ গ্রাম করে চাল, সামান্য কয়েকটা আলু ও একটু ডাল দেওয়া হয়। এইসব খাদ্য-সরবরাহ করেন একজন অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী। কোনদিনই এই লােকটি নির্ধারিত কোঠার খাদ্যেপকরণ উপরে তােলেন না। ফলে সকলে নিয়মিত খাদ্য যেমন পায় না তেমনি নানারূপ বিশৃঙ্খলও সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারী কর্মচারীগণ, সেবাকার্যে নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকগণ এই অব্যবস্থার বারবার প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার করতে পারছেন না। অথচ উদ্বাস্তুদের নগদ পয়সা দিলে তারাই সরকার কর্তৃক সরবরাহের মাল প্রয়ােজনীয়ভাবে ক্রয় করতে পারতেন।
এই ক্যাম্পে স্যানিটেশানের চরম অব্যবস্থা দেখা গেল। ওষুধপত্র বলতে প্রায় কিছুই নেই। জ্বর হলে মাথা ধরার কিংবা পেটের ব্যথার দু একটা পিল বা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। পাহাড়ী বর্ষা শুরু হওয়ায় বড় বড় জোক বেরিয়ে পড়েছে। ছােট জোক তাে মাছি মশার মত চলছে। জোকের ভয়ে রাত্রে কেউই ঘর থেকে প্রায় বের হয় না। ফলে ঘরের মধ্যেই মলমূত্র ত্যাগ করায় এবং যথাযথ পরিস্কার না হওয়ার এক দারুণ অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নানারকম রােগ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫/৬টি শিশু মারা গেছে। এখানে মহামারী লাগাও অস্বাভাবিক নয়। এখনও প্রচণ্ড শিশু মারা গেছে। এখানে মহামারী লাগাও অস্বাভাবিক নয়। এমনও প্রচণ্ড শীত। প্রবল শীতে সামান্য বস্ত্র মাত্র সম্বল— শিশুদের অবস্থা আরও অবর্ণনীয়। প্রবল বৃষ্টিতে এই সব ব্যবস্থা সবই অব্যবস্থায় পরিণত হচ্ছে। শােনা গেল সরকারী কর্মচারীরা কেউই এমন বিশ্রী স্থানে কাজে যেতে রাজী হচ্ছে না। যারাও যাচ্ছেন তারাও ২/১ দিনের বেশি থাকছেন না। স্বেচ্ছাসেবকেরাও কাজ করতে রাজী হচ্ছেন না। মহকুমা শাসক শ্রী আর, কে, প্রসন্নন এইসব বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে লক্ষ্য করে জেলা শাসককে বারবার অনুরােধ করছেন যাতে এখান থেকে অবিলম্বে শিবির স্থানান্তরিত করা যায়। জয়ন্ত, সােনাপুর, জোড়াই, জঙ্গি যেকোন সমতল স্থানে ক্যাম্প স্থানান্তরিত করা যায়। নতুবা সবদিক দিয়ে চরম অসুবিধা দেখা দেবে এবং শিবির পরিচালনা কার্যতঃ ব্যর্থ হবে। অবিলম্বে খাদ্য সরবরাহ ব্যাপারে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করতে হবে, জামা-কাপড়-কলম্ব দিতে হবে, ওষুধপত্র পর্যাপ্ত পরিমাণে যােগান দিয়ে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে হবে- আশু এই প্রয়ােজনগুলির কথা ওখানের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিগত ও উদ্বাস্তুরা জানালেন।

সূত্র: কালান্তর, ২২.৫.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!