কুষ্টিয়া শহর মুক্তিফৌজের দখলে
আওয়ামী লীগ নেতা তাজুদ্দীন কি নিহত?
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২৯ মার্চ– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা জনাব তাজুদ্দীন আহমেদ কি ইয়াহিয়া খানের ভাড়াটে সৈন্যদের হাতে নিহত হয়েছেন? ওপার বাঙলা থেকে আগত জনৈক বিদেশী সাংবাদিকের মতে গত ২৬-২৭ তারিখের রাতে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র থেকে অবশ্য ঐ সংবাদের কোনও সমর্থন পাওয়া যায় নি। স্মরণ থাকতে পারে, গত মার্চ তারিখে জঙ্গীশাহীর কবল থেকে বাঙলাদেশকে মুক্ত করার জন্য শেখ মুজিবকে প্রধান করে ১২ জনের যে পরিচালক মন্ডলী ঘােষিত হয়, জনাব তাজুদ্দীন আহমদের স্থান সেখানে ছিল দ্বিতীয় নেতা হিসাবে।
ইতিমধ্যে, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদে এই তথ্য সমর্থিত হচ্ছে যে, ইয়াহিয়ার ফৌজের প্রতিরােধে বাঙলাদেশের সাড়ে সাতকোটি মানুষ এক হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন। ইয়াহিয়ার দখলদার ফৌজ কার্যত বাঙলাদেশে ‘ঘেরাবন্দী হয়ে পড়েছে।
আজই খবর পাওয়া গেল, কুষ্টিয়া শহর মুক্তিফৌজ তথা জনসাধারণ ইয়াহিয়া সেনাবাহিনীর কবল মুক্ত করেছ।
ট্যাঙ্ক, বােমা-বিমান, কামান, মেশিনগান, রাইফেল প্রভৃতি সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৭০ হাজার ইয়াহিয়া সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতাে প্রাথমিক সামরিক শিক্ষায় বন্দুক ছোঁড়ায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা হল ১ লক্ষ ৮৮ হাজার অর্থাৎ ৭০ হাজার পুলিশ, ইপিআর ও ইএফআর ১৮ হাজার এবং আনসারবাহিনী ১ লক্ষ। এদের সকলের হাতেই যে অস্ত্র আছে এমন নয়, তাই মুক্তি ফৌজের প্রয়ােজন অস্ত্র। অবশ্য ওপার বাংলার মানুষ দা-কাটারি বর্শা খাড়া থেকে শুরু করে লঙ্কার গুড়াে, ফুটন্ত জল পর্যন্ত সব কিছুই ব্যবহার করেছেন ইয়াহিয়া সৈন্যদের বিরুদ্ধে এবং তাদের মাঝখানে ইয়াহিয়া ফৌজ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে।
এই অবরােধ যদি এক সপ্তাহও চলে, তাহলে ইয়াহিয়া ফৌজ খাদ্য, জ্বালানী এবং পানীয়ের বিশেষ অভাবের সম্মুখীন হবে। বর্বর হত্যাভিযান চালাবার জন্যে মাদক পানীয় ‘রাম’-এর সরবরাহের টান পড়ায় হানাদার ফৌজের মনােবলের উপরেও গুরুতর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে বলে এখানকার ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
সর্বাধুনিক অস্ত্র-সজ্জিত সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় নিরস্ত্র মানুষের এই লড়াই এই বাঙলারই ওপারে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছে।
সূত্র: কালান্তর, ৩০.৩.১৯৭১