You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেনাবাহিনীর গুলিতে পূর্ব-পাকিস্তানে শতাধিক নিহত
প্রতিবাদে শনিবার সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান

নয়াদিল্লী, ২৫ মার্চ (ইউএনআই) চট্টগ্রাম বন্দরে সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে শতাধিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে- সৈয়দপুরে ও রংপুরেও পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। এবং বহু লােক হতাহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানান হয়েছে। অপরদিকে ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের ৪ দফা দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানাের পর বন্দর শ্রমিকরা কাজ করতে অস্বীকার করে এবং জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নামিয়ে আনতে অসম্মত হয় এবং সৈন্যবাহিনী যাতে মাল খালাস করতে পারে সেজন্য শ্রমিকও জনসাধারণ এক দুর্ভেদ্য ব্যারিকেড রচনা করে এবং এক প্রচন্ড প্রতিরােধ গড়ে তুলে।
অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের নির্দেশ অনুসারে ব্যারিকেডের একদিকে নিরস্ত্র জনসাধারণ ও অন্যদিকে সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী। হঠাৎ নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর সৈন্যবাহিনী মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে ফলে প্রায় ৪০ জন নিহত হয় এবং বহু আহত হয়।
রংপুরের অন্যতম মহকুমা শহর সৈয়দপুরেও পুলিশ গুলি চালায় ফলে ২০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। সৈন্যবাহিনী স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরবাড়ি ভস্মীভূত করে দেয়। ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে এ সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সংবাদে আরও বলা হয় যে, রংপুরের ডেপুটি কমিশনারের সম্মতি ছাড়াই সেনা বাহিনী গুলি বর্ষণ করে। এই দুর্ঘটনার কারণ কিছু জানা যায় নি। পরবর্তী সংবাদে জানা যায় যে, সৈয়দপুরে কার্ফ জারী করা হয়েছে চট্টগ্রামে প্রবল উত্তেজনা ঢাকাতেও বিক্ষিপ্তভাবে গণ বিক্ষোভের সূচনা হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে যে একদল শ্রমিক একটি ম্যাচ ফ্যাক্টরী আক্রমণ করে এবং এই দুর্ঘটনার ৮ জন নিখোজ হয়।
শনিবার সাধারণ হরতাল
চট্টগ্রাম ও সিদপুরে [সৈয়দপুর?] এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শেখ মুজিবর আগামী শনিবার সারা পূর্বপাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে শেখ মুজিবর বলেন যে, সারা দেশে এক সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছ। এ পরিস্থিতি বিনা বাধায় চলতে দেওয়া চলে না।
নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর সেনাবাহিনীর এই গুলিবর্ষণ সম্পর্কে অবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ দেবার জন্য শেখ মুজিবর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিকট এক আহ্বান জানান এ সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে।
শেখ মুজিবর আরও বলেন যে সাংবিধানিক আলােচনা ও সমঝােতা বানচাল করার উদ্দেশ্যেই নানারূপ উস্কানী দেওয়া হয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান সতর্ক করে দেন যে রাজনৈতিক সমঝােতায় পৌঁছতে যত টালবাহানা করা হবে ততই পরিস্থিতি এক অভূতপূর্ব ভয়াবহ আকারে পরিণত হবে।
গতকার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলােচনা প্রসঙ্গে শেখ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পরামর্শ দাতাদের বিরুদ্ধে অভিযােগ করে বলেন যে, এই ব্যক্তিরাই আওয়ামী লীগের ফরমুলা অনুসারে একটা মীমাংসায় আসার পথে টিমেতাল’ নীতি অনুসরণ করে চলেছে।
আওয়ামী লীগের ৪ দফা দাবী নীতিগতভাবে সমর্থন
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের যােগদানের শর্ত হিসাবে আওয়ামী লীগ যে ৪ দফা দাবি উপস্থিত করেছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তা মানতে রাজী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ তাজউদ্দিন আমেদ [আহমদ] গতকাল সাংবাদিকদের উপরােক্ত জানান।
এ সংবাদ ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছে।
মহঃ তাজ আমেদ আরও জানেন যে বাঙলাদেশের জনসাধারণ এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের ঘােষণার জন্য অপেক্ষা করছে।
আওয়ামী লীগের ৪ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ।
– সামরিক আইন প্রত্যাহার করা।
–সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত পাঠানাে।
–সৈন্য বাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে তদন্ত।
– নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
ভুট্টোর কারসাজী সম্পর্কে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ভাষ্য
আজ সন্ধ্যায় ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে এক রাজনৈতিক ভাষ্যে বলা হয়েছে :
যুদ্ধ বাজ আমলা তন্ত্র ও পশ্চিমী পুঁজিপতিদের সমর্থনেই শ্রীভুট্টো পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিরােধীতা করছে। ভুট্টোর চক্রান্ত ও কারসাজীর ফলে ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবর বৈঠক কার্যতঃ অচল অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার ভুট্টো জানালেন যে ৪ দফা দাবির ভিত্তিতে ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবর একটা মীমাংসায় পৌঁছেছেন। আবার বুধবার তিনি অভিমত দিলেন মীমাংসার আধাআধি সম্ভাবনা রয়েছে। ২৪ ঘন্টা না যেতেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলােচনার পর শ্রী ভুট্টো আজ এক বিবৃতিতে সংশয় প্রকা বলেছেন যে পাকিস্তান এক ও অবিভাজ্য কী করে থাকবে যদি পাকিস্তানের উভয় অংশেই পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসন মেনে নেওয়া হয়।

সূত্র: কালান্তর, ২৬.৩.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!