মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্বের বগুড়া
(বিশেষ সংবাদদাতা)
বগুড়া, ৪ এপ্রিল– বগুড়া থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বের সকল দেশের জনসাধারণের কাছে এই মর্মে আবেদন জানানাে হয়েছে যে, পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী কর্তৃক বাঙলাদেশ’-এর জনগণের উপর সংগঠিত গণহত্যা বন্ধের জন্য তার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সক্রিয় উদ্যোগ নেন।
প্রিল। ২৬ মার্চ তারিখে পাক সেনার বগুড়ার জনসাধারণের উপর হিংস্র। আক্রমণ চালায় জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরােধের দরুন সেনাবাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। বহু হতাহতের মধ্যে ছিলেন পাক সেনাবাহিনীর জনৈক মেজর।
দৃঢ়ভাবে আক্রমণ প্রতিহত করা যায় এমন এক স্থানে সেনা বাহিনী ঘাঁটি গাড়ে। পুলিশ ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ এর সহায়তায় বগুড়ার জনগণ ঐ অঞ্চলটা ঘিরে ফেলে। মরীয়া হয়ে পাক সৈন্যরা বেপরােয়া গুলি চালালে বহু ব্যক্তি নিহত হন। তবু জনসাধারণের মনােবল ভাঙে নি। তারা আক্রমণের পর আক্রমণ হেনেছেন।
৩১ মার্চ সকালে শহরের উপর বিমান হানা শুরু হয়। দুটি ‘ফাইটার বিমান শহরের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রবল বােমাবর্ষণ করে চলে। তৎসত্ত্বেও জনগণ শহরের উপর বিস্তৃত আধিপত্য ত্যাগ করেন নি। প্রবল যুদ্ধের পর সশস্ত্র সেনাবাহিনী আরও পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়ে পড়ে।
পরদিনও চলল বিমান হানা। শহরতলির বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ লক্ষ্যবস্তুর উপর বােমাবর্ষণ থাকে অব্যাহত। অপর দিকে মুক্তি বাহিনী এবার প্রতিরােধ ছেড়ে বিপুল আক্রমণ চালায়। শহরের দক্ষিণে অবস্থিত সৈন্য ছাউনি থেকে পাক সেনাদল বিতাড়িত হয় এর ফলে উদ্ধার করা হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। এই দিনের যুদ্ধে ইয়াহিয়া সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নূর খান নিহত হন।
এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত বগুড়া শহর মুক্ত সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর অখণ্ড কর্তৃত্ব। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ যে সকল রাস্তা দিয়ে শুরু হতে পারে, সেই সকল রাস্তায় সশস্ত্র গণফৌজ বিমানহানার ভয় তুচ্ছ করে দিবারাত্র সতর্ক প্রহরারিত।
সূত্র: কালান্তর, ৭.৪.১৯৭১