You dont have javascript enabled! Please enable it!

বহিরাগত সৈন্যরা বাঙলাদেশ ছাড়াে— আত্মসমর্পণ করাে : মুজিবর
জনতার হাতে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা
টিক্কা খান নিহত?

নয়াদিল্লী, ২৭ মার্চ পূর্ব বাঙলার ফৌজী শাসক ইয়াহিয়া চক্রের জঙ্গী জেনারেল টিক্কা খান নিহত হয়েছেন। মুজিবর রহমান জানিয়েছেন, “আমি ভাল আছি কমরেড, লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যাও।”
মার্কিন কনসালের দপ্তর থেকে বেরিয়ে আসা সংবাদে জানা গেছে, ঢাকা সমেত কয়েকটি শহরে ট্যাঙ্ক ও কামান মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাধীন বাঙলার বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র জানিয়েছে, ঢাকা ও খুলনার উপর বােমাবর্ষণ হয়েছে।
ইউএনআই জানাচ্ছে মুক্তি বাহিনীর সংবাদসূত্রে জানা যাচ্ছে ইয়াহিয়া খান-এর জঙ্গী দাপটে ১ লক্ষ বাঙলাদেশের মানুষ নিহত হয়েছে ট্যাঙ্ক থেকে কামান দেগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে বলে ঐ সূত্রে বলা হয়েছে।
স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র দাবি করেছে, বালুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং পাখতুনিস্তান স্বাধীনতা ঘােষণা করেছে। পূর্ব বাঙলায় বালুচ রেজিমেন্ট পশ্চিম পাকিস্তানের ফৌজী নায়কদের আদেশ অমান্য করেছে। এই সৈন্যদল দেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে যােগদানের জন্য বাঙলাদেশ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যিনি এই সংবাদ দিয়েছেন তার নাম মেজর জিয়া। তিনি বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রধান। এ সব খবর ইউএনআই-এর।
বাঙলা দেশের সগ্রামী সত্তাকে উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত এবং সুশিক্ষিত সত্তর হাজার সেনাবাহিনীর দ্বারা ক্ষিপ্রগতিতে গুড়িয়ে দেওয়ার ফৌজী কৌশল আক্রমণের দ্বিতীয় দিনেও ব্যর্থ হয়েছে। ইয়াহিয়া ও তাঁর জঙ্গী চক্র ক্ষিপ্ত হয়ে আজ প্রায় নিরস্ত্র জনতার বিরুদ্ধে ট্যাঙ্ক, কামান ব্যবহার করেছে ও বিমান থেকে বােমা নিক্ষেপ করেছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া সংবাদ থেকে জানা গেছে ঢাকা এবং খুলনার ওপর বােমা ফেলা হয়েছে। বােমা বর্ষণের ফলে ঢাকার একটি হাসপাতালের সমস্ত রােগীই নিহত হয়েছে এবং হাসপাতালটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রতিরােধের দ্বিতীয় দিনে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারা দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এই মুক্তি বাহিনী গড়ে তুলছেন।
দুদিনের এই অসম যুদ্ধে নিহত ও আহতের সংখ্যা জানা যায় নি। তবে একটি সংবাদে এই সংখ্যা সাড়ে তিন থেকে দশ হাজার হতে পারে বলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা কম নয়।
ইউ,এন,আই জানাচ্ছে ট্যাঙ্ক, কামান যাই ব্যবহার করা হােক হাজার হাজার জনতার সক্রিয় তৎপরতার ফলে ইয়াহিয়ার ফৌজ স্থানে স্থানে কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় প্রতি একশত গজ অন্তর বিরাট বিরাট মজবুত ব্যারিকেড খাড়া করে, রেব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে, রেল লাইন উপড়ে ফেলে জনতা এবং তাদের আধা সামরিক বাহিনী পূর্ব-পাকিস্তান রাইফেলস্ জঙ্গী শাহীর সৈন্যবাহিনীর চলাফেরা অসম্ভব করে তুলছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষ আজ দাবি করেছিল যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আবার ব্যরিকেড তৈরীর বিরুদ্ধে নতুন করে মার্শাল ল জারি করে নিজেদের দাবির অসারতা ফাঁস করে দিয়েছে। ঐ আদেশে বলা হয়েছে ব্যারিকেড তৈরী করা হলে তার একশ গজের মধ্যে সমস্ত বাড়ী ধূলিসাৎ করে দেওয়া হবে।
এই কর্তৃপক্ষই আজ সকাল থেকে বার বার দাবি করছিল শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কোন এক জায়গা থেকে স্বাধীন বাঙলা দেশের বেতার কেন্দ্র মুজিবরের বাণী প্রচার করে ঐ মিথ্যার জবাব দিয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৮.৩.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!