You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুষ্টিয়া মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গায় স্বাধীন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত

কলকাতা, ৫ এপ্রিল বাঙলাদেশের কুষ্টিয়া মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা মহকুমা নিয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন কর্তৃপক্ষ আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাঙলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকা উপহার পাঠিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গায় সফরকারী জনৈক সাংবাদিক মারফৎ তারা এই পতাকাটি পাঠিয়েছেন।
ঐ তিনটি এলাকার প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য যে অস্থায়ী স্থানীয় সরকার গঠিত হয়েছে তার নেতৃত্ব আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রধান ওয়াদুল হক। মুক্তিফৌজ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনজন কামণ্ডার স্থানীয় অস্থায়ী প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এখানকার ইয়াহিয়া-প্রেমী এস,ডি, ও-কে বন্দী করে নিজেরাই অসামরিক প্রশাসনের কাজকর্ম চালাচ্ছেন।
গত শনিবার বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার ইপিআর বাহিনীর ব্যারাকে ও আশেপাশের গ্রামে ইয়াহিয়া বিমানবাহিনী বােমা ফেলে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ইপিআর ব্যারাক সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। পাশের নূরনগর গ্রামের ১৪-১৫টি বাড়ি, মসজিদ, কবরস্থান সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়েছে। কিন্তু তাতে মুক্তিবাহিনী বা স্থানীয় জনসাধারণের মনােবল বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় নি। ইয়াহিয়া বিমান বাহিনী বােমা ফেলে চলে যাবার পরেই যাদের ঘরবাড়ি ধুলিসাৎ হয়েছে, সেইসব সর্বহার মানুষগুলিও শিরদাঁড়া সােজা করে দাঁড়িয়ে পরবর্তী সম্ভাব্য আক্রমণের মােকাবিলা করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হয়েছেন।
সাদা পােশাকে ইয়াহিয়া ফৌজের গুপ্তচর
বাঙলাদেশে এর আবাল বৃদ্ধ-বনিতার প্রতিরােধের সম্মুখীন হয়ে ইয়াহিয়ার সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত বাহিনী বিশেষভাবে খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। সামানা-সামনি লড়াইয়ে কিছু সম্পত্তিও প্রাণহানি করা ছাড়া ইয়াহিয়া ফৌজ বিশেষ সামরিক সাফল্য অর্জন করতে পারে নি। এখন তাই ইয়াহিয়া বাহিনী সাদা পােশাক বেশে কিছু লােক ছেড়েছে মুক্তিবাহিনীর সরবরাহ বিপর্যস্ত ও অন্যান্য অন্তঘাতমূলক কাজ করার জন্য।
নির্ভর যােগ্যসূত্রে জানা গেল, ইতােমধ্যেই ইয়াহিয়া ফৌজের সব গুপ্তচর সীমান্ত এলাকায় মুক্তি ফৌজপ্রেমী সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করছে।
এমনকি এপার বাঙলা থেকে মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য প্রেরিত অসামরিক সাহায্য— খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি এই সবগুপ্তচর মারফত ইয়াহিয়া ফৌজের হাতে চলে গিয়েছে বলে জানা গেল।
স্বভাবতই ওপর বাঙলাকে সাহায্য করার আগ্রহে এপার বাঙলার যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও গােষ্ঠী “নিজস্ব” সূত্র মারফত জিনিসপত্র পাঠাচ্ছেন তাদের এ বিষয়ে সবিশেষ সাবধান হওয়া দরকার।
গতকাল খুলনা জেলার সীমান্তে স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদের জনৈক মুখপাত্র আবেদন করেন যে, এই ধরণের সাহায্য যাতে যথাযথ প্রতিষ্ঠানের হাতে এসে পৌঁছায়, অনভিপ্রেত লােকদের হাতে গিয়ে না পড়ে সে জন্য যেন সবাই সতর্ক হন।
একজাতি, এক প্রাণ, একতা
আমাদের ২৪ পরগণা জেলায় সংলগ্ন বাঙলাদেশের দুটি জেলা যশাের ও খুলনার জেলা শহর দুটিতেই এখন পর্যন্ত সামরিক তৎপরতা সীমাবদ্ধ। এই দু’টি শহরে ছাউনীর মধ্যে আবদ্ধ ইয়াহিয়া ফৌজের আক্রমণের মােকাবিলা করছেন ই,পি, আর। রণাঙ্গনের বাইরের মানুষ সর্বতােভাবে এগিয়ে এসেছেন। খুলনার সাতক্ষীরার অন্তর্গত ঙ্কেড়াগাছি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সংগৃহীত হচ্ছে এপার বাঙলার অসামরিক সাহায্য। সেই সঙ্গে গ্রামের অধিবাসীরা হাত-রুটি ডাল তরকারী তৈরি করে লরীতে পাঠাচ্ছেন মুক্তিফৌজের জন্য। প্রতিটি মানুষ এইভাবেই বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের শরীক হয়েছেন।

সূত্র: কালান্তর, ৬.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!